জাতীয় সংখ্যালঘু কনভেনশন ঘোষণাপত্র
বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ আয়োজিত ও ১৯টি ধর্মীয়-জাতিগত সংখ্যালঘু সংগঠনের ডাকে আজ ১২ জানুয়ারী, ২০১৮ইং তারিখ শুক্রবার ঢাকার সিরডাপ অডিটোরিয়ামে অনুষ্ঠিত আজকের এ জাতীয় সংখ্যালঘু কনভেনশন মনে করে যে চেতনার উপর ভিত্তি করে অসাম্প্রদায়িক গণতান্ত্রিক ধর্মনিরপেক্ষ বাংলাদেশ অর্জিত হয়েছিল ১৯৭১ সালে ধর্মবর্ণলিংগ নির্বিশেষে সর্বস্তরের বাঙালী আদিবাসী জনগোষ্ঠীর মিলিত রক্ত¯্রােতে তা থেকে বাংলাদেশ স্বাধীনতার সুদীর্ঘ ৪৭ বছর পরেও যোজন দূরে দাঁড়িয়ে আছে। সাম্প্রদায়িকতা, ধর্মান্ধতা, মৌলবাদিতা সমাজ, রাষ্ট্র ও রাজনীতির রন্ধ্রে রন্ধ্রে ছড়িয়ে পড়েছে। সাম্য, সমতা ও সামাজিক মর্যাদার যে নিশ্চয়তা দেয়া হয়েছিল স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রে (চৎড়পষধসধঃরড়হ ড়ভ ওহফবঢ়বহফবহপব) তা এখনো সোনার পাথরবাটি। এহেন সর্বনাশা পরিস্থিতিতে এ দেশের ধর্মীয়-জাতিগত সংখ্যালঘু ও আদিবাসী জনগোষ্ঠী অস্তিত্বের সংকটে পড়েছে। এহেন সংকট থেকে উত্তরণে গত ২০১৫ইং সালের ৪ ডিসেম্বরে ঢাকার ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে লক্ষাধিক জনতার মহাসমাবেশে জাতীয় ঐকমত্যের ভিত্তিতে যে ৭-দফা দাবীনামা গৃহীত হয় আজকের এ জাতীয় সংখ্যালঘু কনভেনশন মনে করে, জাতিসংঘের সংখ্যালঘু সনদের আলোকে এ দাবীনামা প্রণীত হয়েছে এবং তা সংখ্যালঘু আদিবাসী জনগোষ্ঠীর ম্যাগনাকার্টা হিসেবে বিবেচিত হতে পারে। এরই আলোকে ক্ষমতায়ন ও প্রতিনিধিত্বশীলতা, সাংবিধানিক বৈষম্য বিলোপকরণ, সম-অধিকার ও সম-মর্যাদা, স্বার্থবান্ধব আইন বাস্তবায়ন ও প্রণয়ন, শিক্ষা ব্যবস্থার বৈষম্য নিরসন, দায়মুক্তির সংস্কৃতি থেকে উত্তরণ এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় সাম্প্রদায়িকতা, ধর্মান্ধতা, সন্ত্রাসমুক্ত বাংলাদেশ আজ অপরিহার্য হিসেবে দেখা দিয়েছে এবং এ দাবীসমূহ বাস্তবায়নে যার যার অবস্থানে থেকে এবং সমন্বিতভাবে গণতান্ত্রিক নিয়মতান্ত্রিক পন্থায় মানবাধিকারের আন্দোলনকে এগিয়ে নিয়ে যাবার উপর জোর গুরুত্ব আরোপ করেছে।
কনভেনশন পূর্বেকার নির্মম অভিজ্ঞতাকে বিবেচনায় নিয়ে আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে গভীর উৎকণ্ঠা ও উদ্বেগ প্রকাশ করছে। কনভেনশন এই মর্মে দাবী জানাচ্ছে যে, (ক) কোন রাজনৈতিক দল বা জোট আগামী সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হিসেবে এমন কাউকে মনোনয়ন দেবেন না যারা অতীতে বা বর্তমানে জনপ্রতিনিধি হিসেবে নির্বাচিত হয়ে বা রাজনৈতিক নেতৃত্বে থেকে সংখ্যালঘু স্বার্থবিরোধী কোন প্রকার কর্মকান্ডে প্রত্যক্ষে বা পরোক্ষে জড়িত ছিলেন বা আছেন। এমন কাউকে নির্বাচনে প্রার্থী দেয়া হলে সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠী সে সব নির্বাচনী এলাকায় তাদের ভোটদানে বিরত থাকবে বা ভোট বর্জন করবে; (খ) যে রাজনৈতিক দল বা জোট তাদের নির্বাচনী ইশতেহারে সংখ্যালঘুদের প্রাণের দাবী ঐতিহাসিক ৭-দফার পক্ষে
নির্বাচনী অংগীকার ঘোষণা করবে এবং তাদের স্বার্থ ও অধিকার নিশ্চিতকরণে সুস্পষ্ট প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করবে সে দল বা জোটের প্রতি সংখ্যালঘুদের পূর্ণ সমর্থন থাকবে; (গ) আদিবাসীদের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিতকরণসহ জনসংখ্যার আনুপাতিক হারে সংসদে ধর্মীয়-জাতিগত সংখ্যালঘুদের আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিতে রাজনৈতিক দল ও জোটসমূহকে দায়িত্ব নিতে হবে; (ঘ) নির্বাচনের পূর্বাপর ধর্মীয়-জাতিগত সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। নির্বাচনে ধর্ম ও সাম্প্রদায়িকতার ব্যবহার, মন্দির, মসজিদ, গীর্জা, প্যাগোডাসহ সকল ধর্মীয় উপাসনালয়কে নির্বাচনী কর্মকান্ডে ব্যবহার, নির্বাচনী সভাসমূহে ধর্মীয় বিদ্বেষমূলক বক্তব্য প্রদান বা কোনরূপ প্রচার নিষিদ্ধকরণের পাশাপাশি তা ভঙ্গের দায়ে সরাসরি প্রার্থীর প্রার্থীতা বাতিলসহ অন্যুন তাকে এক বছরের কারাদন্ড ও অর্থদন্ডের বিধান রেখে নির্বাচন কমিশনকে নির্বাচনী আইনের যুগোপযোগী সংস্কার করতে হবে; (ঙ) নির্বাচনের পূর্বেই সরকারকে সংখ্যালঘু মন্ত্রণালয় ও জাতীয় সংখ্যালঘু কমিশন গঠন, সংখ্যালঘু সুরক্ষা আইন প্রণয়ন, অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যর্পণ আইনের যথাযথ বাস্তবায়ন, সমতলের আদিবাসীদের জন্যে ভূমি কমিশন গঠন, বর্ণবৈষম্য বিলোপ আইন প্রণয়ন এবং পার্বত্য ভূমিবিরোধ নিস্পপ্তি কমিশন আইনের বাস্তবায়নসহ পার্বত্য শান্তিচুক্তির পূর্ণ বাস্তবায়নে রোডম্যাপ ঘোষণা করতে হবে।
এ দাবিসমূহ বাস্তবায়নের লক্ষে কনভেনশনে প্রাপ্ত মতামতের আলোকে আগামী দিনে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের সিদ্ধান্ত এ কনভেনশন গ্রহণ করছে।
# ঢাকায় সিরডাপ মিলানয়তনে অনুষ্ঠিত বাংলাদেশ হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ ও ১৯টি ধর্মীয়-জাতিগত সংখ্যালঘু সংগঠন কর্তৃক ১২ জানুয়ারী ২০১৮ শুক্রবার,-পঠিত জাতীয় সংখ্যালঘু কনভেনশনের ঘোষণা পত্র।