জাতীয়

জাতীয় বাজেটে আদিবাসীদের জন্য ” সুনির্দিষ্ট ও পর্যাপ্ত বরাদ্দ চাই” শীর্ষক নাগরিক সভা

আজ সকালে জাতীয় বাজেটে আদিবাসীদের জন্য ‘সুনির্দিষ্ট ও পর্যাপ্ত বরাদ্দ চাই’ এই বিষয়ক এক জন-বাজেট সংসদ ও প্রাক-বাজেট নাগরিক সভা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা ভবনে সেন্টার অন বাজেট পলিসির সেমিনার কক্ষে অনুষ্ঠিত হয়েছে। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন আদিবাসী বিষয়ক সংসদীয় ককাসের আহবায়ক ফজলে হোসেন বাদশা এমপি।

ফজলে হোসেন বাদশা তার বক্তব্যে বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে ,অর্জিত সংবিধানে উন্নয়নের দৃষ্টিভঙ্গি রয়েছে, সে উন্নয়নের দৃষ্টিভঙ্গি হল ধর্মের কারনে জাতিগত কারনে কেউ যেনো বৈষম্যের শিকার না হয়। আজকের বাংলাদেশে আদিবাসীরা জাতিগত, ধর্মীয় কারনে বঞ্চিত হবে, নিপীড়িত হবে তার জন্যতো আমরা সংগ্রাম করিনি।’

তিনি আদিবাসীদের জন্য বাজেটে বরাদ্দের বিষয়ে বলেন ‘সমতলের আদিবাসীদের জন্য থোক বরাদ্দ আর পাহাড়ের আদিবাসীদের জন্য উন্নয়ন-অনুন্নয়ন বরাদ্দ এ দুটোর মধ্যে বিভ্রান্তি আছে, শুভঙ্করের ফাকি আছে। সমতলের একটা দাবি হল আলাদা মন্ত্রনালয় করা, সেটা না করে বরং পার্বত্য মন্ত্রনালয়ের মধ্যেই সমতলের জন্য একটা ক্ষেত্র তৈরি করা যেতে পারে। এবং একই বাজেটে পাহাড় সমতলের আদিবাসীদের উন্নয়নের কাজ করা যেতে পারে। থোক বরাদ্দে আমলাদের প্রভাব বেশি থাকায় যথাযথ ভাবে বাজেটের অর্থ ব্যবহার করা যায় না।’

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে সাংসদ ও আদিবাসী বিষয়ক সংসদীয় ককাসের সদস্য ঊষাতন তালুকদার বলেন, ‘যাদের জন্য টাকা দেয়া হচ্ছে তাদের কাছে টাকা পৌছায় না ঠিকমত। বাজেটে পার্বত্য চট্টগ্রামে কোটি কোটি টাকা উন্নয়নের জন্য দেয়া হয় কিন্তু সেতো কেবল আদিবাসীদের জন্য নয়, সেখানে যারা থাকে সবার জন্য। আর যারা প্রশাসনে থাকেন তাদের আন্তরিকতা নিয়ে প্রশ্ন রয়েই যায়। পার্বত্য চট্টগ্রামের সরকারি আমলারা আদিবাসীদের ব্যাপারে আন্তরিক নয়।’ নিজ নির্বাচনী এলাকায় জেলা পরিষদের নির্বাচন হয়না বলে একপ্রকার দায়সারা কারবার চলে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

আদিবাসী বিষয়ক সংসদীয় ককাসের সদস্য ও সাংসদ মৃণাল কান্তি দাস তার বক্তব্যে বলেন, ‘আদিবাসীদের সম্পর্কে বৃহৎ জনগোষ্ঠীর ও সরকারের দৃষ্টিভঙ্গি আমূলে পালটে ফেলতে হবে। তা নাহলে আদিবাসীদের উন্নয়ন, তাদের সমস্যার সমাধান সম্ভব হবেনা। দুঃখজনক হলেও সত্য আদিবাসীদের জন্য বাজেটে বরাদ্দের ব্যাপারে অর্থমন্ত্রীকে বলতে হয়, অথচ অর্থমন্ত্রীরই নিজ দায়িত্বে আদিবাসীদের জন্য বাজেটে বরাদ্দ করা উচিত ছিলো।’

‘বাজেটে আদিবাসীদের জন্য বরাদ্দ না বাড়িয়েও যদি যথাযথ ভাবে বর্তমান বরাদ্দের টাকাও যদি ব্যাবহার করা যায় তবে আদিবাসীদের জীবনমান ও শিক্ষায় অনেক উন্নয়ন ঘটানো সম্ভব, কিন্তু যথাযথভাবে টাকার ব্যাবহার হয়না বলে মন্তব্য করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সৌরভ শিকদার। তিনি আরো বলেন ‘সরকার থেকে আদিবাসীদের জন্য একাডেমী করা হয়েছে, কিন্তু সেখানে কাজ হয়না অর্থের অভাবে। আদিবাসীদের মাতৃভাষায় শিক্ষার যে কার্যক্রম রয়েছে তাতেও জাতীয় বাজেটে বরাদ্দ থাকেনা। যে খাতে টাকা আছে তাতে যথাযথ টাকা ব্যবহার করা যাচ্ছেনা।’ আদিবাসী, বাঙালিদের উন্নয়নই বাংলাদেশের উন্নয়ন বলেও জানান তিনি।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক কাজী মারুফুল ইসলামও সৌরভ শিকদারের সাথে একমত হয়ে বলেন বরাদ্দের টাকা যথাযথ ব্যবহার হয়না। এই যে বরাদ্দের টাকা ঠিকঠাক পৌছায় না, ব্যবহার হয়না এর দায় আছে জনপ্রতিনিধিদের, আমলাদের, প্রশাসনের কাছে। তিনি বলেন শান্তিচুক্তি পূর্ণ বাস্তবায়ন হলে পার্বত্য সমস্যার চিহ্নিত করা ও সমাধান সহজ হয়ে ওঠে।

আচিক মিচিক সোসাইটির নির্বাহী পরিচালক সুলেখা ম্রং আদিবাসীদের জন্য বাজেট নিয়ে স্থানীয় প্রতিনিধিদের অজ্ঞতার কথা জানাতে গিয়ে বলেন, ‘ আদিবাসী বাজেটের ব্যাপারে স্থানীয় প্রতিনিধিরা কিছু জানেননা। জিজ্ঞেস করলে কিছু বলতে পারেনা।’

‘আদিবাসীদের বিষয়ে সঠিক ধারণা, জনসংখ্যা ও জাতিগোষ্ঠীর সংখ্যা বিষয়ে যথাযথ পরিসংখ্যান না থাকলে বাজেটে বরাদ্দের ক্ষেত্রেও যথাযথ বরাদ্দ হবেনা’ বলে তার বক্তব্যে বলেন পার্বত্য জনসংহতি সমিতির সাংগঠনিক সম্পাদক শক্তিপদ ত্রিপুরা।

জাতীয় আদিবাসী পরিষদের সভাপতি রবীন্দ্রনাথ সরেন বলেন, ‘বৃহৎ রাজনৈতিক দল, সরকার নির্বাচনী ইশতেহারে যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন তা পূরণ করলেই আদিবাসীদের অনেক কিছু পাওয়া হয়।’ বাজেটে বরাদ্দ আদিবাসীদের টাকা সঠিক ক্ষেত্রে ব্যয় হয়না বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

নাগরিক সভায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন কাপেং ফাউন্ডেশনের ব্যবস্থাপক হিরন মিত্র চাকমা। নাগরিক সভার আলোচনায় আদিবাসীদের জন্য বাজেটে বরাদ্দ বৃদ্ধি, বাজেটের টাকা যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করনে সরকারের পদক্ষেপ বিষয়ক নানা বিষয় নিয়ে আলোচনাপত্র উপস্থাপন ও কথা বলেন আলোচকবৃন্দ। আলোচনাপত্র পাঠ করেন কাপেং ফাউন্ডেশনের প্রকল্প সমন্বয়কারী সোহেল চন্দ্র হাজং ও কন্সালটেন্ট খোকন সুইটেন মুরমু। আলোচনাপত্রে আদিবাসীদের পরিচয় নিয়ে রাষ্ট্রীয় দ্বন্দ, আদিবাসীদের জনসংখ্যার যথাযথ পরিসংখ্যানহীনতা, বাজেটে বরাদ্দের ক্ষেত্রে সুনির্দিষ্টকরণের অভাব বিষয়ে তোলে ধরা হয়।

গণতান্ত্রিক বাজেট আন্দোলন, বাজেট বিষয়ক সংসদীয় ককাস, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার অন বাজেট এন্ড পলিসি, বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরাম, জাতীয় আদিবাসী পরিষদ ও কাপেং ফাউন্ডেশন এই জন-বাজেট সংসদ ও প্রাক-বাজেট নাগরিক সভার আয়োজন করে।

Back to top button