আন্তর্জাতিক

জাতিসংঘ আদিবাসী স্থায়ী ফোরামের অধিবেশন শুরু, বান কি-মুনের পরিকল্পনা ঘোষণা

সঞ্জীব দ্রং, নিউইয়র্ক থেকে

আদিবাসী জনগণঃ দ্বন্দ্ব, শান্তি, ও সমাধান – এই মূলসুর নিয়ে ৯ মে সোমবার জাতিসংঘ সদর দফতরে আদিবাসী বিষয়ক স্থায়ী ফোরামের পঞ্চদশ অধিবেশন শুরু হয়েছে। জাতিসংঘ মহাসচিব বান কি-মুন অধিবেশনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে নিজেদের ভূমি ও প্রাকৃতিক সম্পদের উপর নানা দ্বন্দ্ব-সংঘাতে বিপর্যস্ত আদিবাসী জনগণের পূর্ণ অধিকার পুনরুদ্ধারে নতুন পরিকল্পনার কথা ঘোষণা করেন। এক ভিডিও বার্তায় তিনি এবারের মূলসুরকে স্বাগত জানিয়ে বলেন, আদিবাসীদের সাংস্কৃতিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিক ন্যায্যতা প্রতিষ্ঠার জন্য স্থায়ী শান্তিপূর্ণ পরিবেশ পূর্বশর্ত। জাতিসংঘ স্থায়ীত্বশীল উন্নয়ন লক্ষ্য (এসডিজি) ২০৩০ এজেন্ডা বাস্তবায়নে আদিবাসীদের সাথে আলোচনা শুরু করার জন্য তিনি সাধারণ পরিষদকে আহ্বান জানান। বান কি-মুন আরো বলেন, নারীসহ আদিবাসীরা যাতে অংশগ্রহণ করে এবং উপকৃত হয়, তা আমাদের নিশ্চিত করতে হবে।
13162219_1180641591948173_1973189504_n

এবারের অধিবেশনে বিশ্বব্যাপী ক্রমবর্ধমান দ্বন্দ্ব ও সংঘাতের কারণে আদিবাসীদের ভূমির অধিকার, টেরিটরি ও সম্পদের অধিকার, স্বতন্ত্র সংস্কৃতি ও পরিচয়ের অধিকার নিয়ে বিস্তর আলোচনার সুযোগ তৈরি হয়েছে। অধিবেশনে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের প্রেসিডেন্ট মগেন লুকটফ বলেন, যখন আদিবাসীরা অধিকারের কথা বলেন, তখন তাদের আক্রমণের টার্গেটে পরিণত করা হয়। আদিবাসীদের জীবনকে প্রভাবিত করে এমন সকল বিষয়ে জাতিসংঘে তাদের অধিকতর অংশগ্রহণের সুযোগ সৃষ্টি গুরুত্বপূর্ণ বলে তিনি মত দেন।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অর্থনৈতিক ও সামাজিক পরিষদের ভাইস-প্রেসিডেন্ট সুয়েন জারগেনসেন সকল সদস্য রাষ্ট্রকে উৎসাহিত করে বলেন, উন্নয়ন প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণের অধিকার রয়েছে বলেই শুধু নয়, যেহেতু তারা বৈষম্যের কারণে প্রান্তিক ও বিপন্ন, তাই তাদের সাথে সদস্যরাষ্ট্রকে কাজ করতে হবে। তিনি আরো বলেন, ২০৩০ সালের এজেন্ডা বাস্তবায়নে আদিবাসী জনগণ যাতে বাদ না পড়ে, সেটি নিশ্চিত করা গুরুত্বপূর্ণ। “লিভিং নো ওয়ান বিহাইন্ড” কথাটির প্রতিফলন থাকতে হবে। অধিবেশনে আরো বক্তব্য রেখেছেন কানাডার জাস্টিস মিনিস্টার মিস্ জোডি উইলসন রেবোল্ড, গুয়াতেমালার শ্রম ও সামাজিক সুরক্ষা মন্ত্রী অরা লেটিসিয়া তেলেগুয়ারিও এবং জাতিসংঘ আন্ডার-সেক্রেটারি জেনারেল মি. উ হংবো। কানাডার জাস্টিস মন্ত্রী নিজকে আদিবাসী পরিচয় দিয়ে বলেন, তার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিস ট্রুডো বিশ্বাস করেন, আদিবাসী জনগণের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন অন্য যে কোনো সম্পর্কের চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। তিনি জাতিতে জাতিতে সুসম্পর্ক স্থাপনের কথা উচ্চারণ করার সঙ্গে সঙ্গে অধিবেশনে তুমুল করতালি বাজে।

বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে সহস্রাধিক প্রতিনিধি এ অধিবেশনে অংশগ্রহণ করছেন যাদের মধ্যে জাতিসংঘের সদস্যরাষ্ট্র, জাতিসংঘের বিভিন্ন সংস্থা, কর্মসূচি ও ফান্ড, আন্তর্জাতিক এনজিও প্রতিনিধি, জাতীয় মানবাধিকার প্রতিষ্ঠান, আদিবাসী পার্লামেন্টারিয়ান, স্পেশাল র‍্যাপোর্টিয়ারসহ আদিবাসী প্রতিনিধি রয়েছেন। এই অধিবেশনে সদস্যরাষ্ট্রের সঙ্গে আদিবাসী প্রতিনিধিদের অর্থপূর্ণ আলোচনা ও সংলাপের সুযোগ তৈরি হয়েছে বলে অনেকে মনে করছেন। বাংলাদেশ থেকে ব্যারিস্টার রাজা দেবাশীষ রায়সহ আটজন প্রতিনিধি এতে অংশ নিচ্ছেন। জাতিসংঘে বাংলাদেশ স্থায়ী মিশনের কাউন্সিলর এটিএম রকিবুল হক এতে অংশগ্রহণ করছেন। তিনি জানিয়েছেন, দ্বিতীয় সপ্তাহে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব নব বিক্রম কিশোর ত্রিপুরা অধিবেশনে যোগ দেবেন।
অধিবেশন চলবে ২০ মে পর্যন্ত।

Back to top button