জাতীয়

জাতিসংঘের স্থায়ী ফোরামের অধিবেশন:পার্বত্যবাসীকে নিজেদের উন্নয়ন নিজেরাই গড়ে তোলার অধিকার প্রদানে বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আহ্বান জনসংহতি সমিতির প্রতিনিধি

নিউইয়র্ক থেকে পল্লব চাকমা: পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি মোতাবেক পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ ও তিন পার্বত্য জেলা পরিষদের মাধ্যমে আদিবাসী জুম্ম জনগণ তথা পার্বত্যবাসীকে নিজেদের উন্নয়ন নিজেরাই গড়ে তোলার অধিকার প্রদানের জন্য বাংলাদেশ সরকারকে আহ্বান জানিয়েছে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির প্রতিনিধি উজানা লারমা তালুকদার।
জাতিসংঘের আদিবাসী বিষয়ক স্থায়ী ফোরামের ১৫তম অধিবেশনের ৪নং আলোচ্য বিষয়: আদিবাসী জাতিগোষ্ঠীর অধিকার বিষয়ক জাতিসংঘ ঘোষণাপত্রের আলোকে স্থায়ী ফোরামের ছয়টি অর্পিত কার্যাবলীর উপর গত ১২ মে ২০১৬ তারিখে প্রদত্ত বক্তৃতা প্রদানকারে মিজ লারমা তালুকদার বাংলাদেশ সরকারের প্রতি এই আহ্বান জানান। গত ৯ মে থেকে স্থায়ী ফোরামের এই ১৫তম অধিবেশন নিউইয়র্কস্থ জাতিসংঘের সদরদপ্তরে শুরু হয়েছে।
উজানা লারমা তালুকদার আরো বলেন, বিশ্বের দেশে দেশে আদিবাসীরা বৈষম্য, প্রান্তিকতা এবং তাদের ভূমি ও সম্পদ থেকে বিতাড়নসহ ঐতিহাসিক অন্যায়ের শিকার হয়ে আসছে এবং ফলশ্রুতিতে তারা তাদের উন্নয়ন অধিকার থেকে প্রায়ই বঞ্চিত হয়ে আসছে। বাংলাদেশের আদিবাসীরাও তার ব্যতিক্রম নয় বলে তিনি অভিমত ব্যক্ত করেন।
তিনি আরো বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তিতে পার্বত্য চট্টগ্রামের সর্বোচ্চ প্রশাসনিক প্রতিষ্ঠান পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদকে সাধারণ প্রশাসন, আইন-শৃঙ্খলা, তিন পার্বত্য জেলা পরিষদ ও পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের সকল উন্নয়ন কার্যক্রম সমন্বয় ও তত্ত্বাবধানের এখতিয়ার প্রদান করা হয়েছে। কিন্তু বাস্তবে আঞ্চলিক পরিষদকে উপেক্ষা করে পার্বত্য চট্টগ্রামে উন্নয়ন কার্যক্রম বাস্তবায়িত হচ্ছে।
জনসংহতি সমিতির প্রতিনিধি আরো বলেন, আঞ্চলিক পরিষদ ও তিন পার্বত্য জেলা পরিষদের অগোচরে ও আলোচনা ব্যতিরেকে পার্বত্য চট্টগ্রামের সাধারণ প্রশাসন, আইন-শৃঙ্খলা ও উন্নয়ন সংক্রান্ত বিভিন্ন সিদ্ধান্ত গৃহীত ও বাস্তবায়িত হয়ে চলেছে। পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির পর গুইমারা উপজেলা, সাজেক থানা ও বড়থলি ইউনিয়ন গঠনের যে বিবরণ আপনি আপনার ভাষণে তুলে ধরেছেন সেসব গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়ার পূর্বে আঞ্চলিক পরিষদ ও সংশ্লিষ্ট পার্বত্য জেলা পরিষদের সাথে আলোচনা ও পরামর্শ করা হয়নি। সীমান্ত সড়ক নির্মাণ, ঠেগামুখ স্থল বন্দর স্থাপন, স্থানীয় সেনা কর্তৃপক্ষ ও পর্যটন কর্পোরেশনের পৃষ্ঠপোষকতায় বিলাসবহুল পর্যটন কেন্দ্রস্থাপন, রক্ষিত ও সংরক্ষিত বন ঘোষণা, বিজিবির বিওপি স্থাপন ইত্যাদি জনগুরুত্বপূর্ণ উন্নয়ন কার্যক্রম আঞ্চলিক পরিষদ ও তিন পার্বত্য জেলা পরিষদের সাথে আলোচনা ও পরামর্শ ছাড়াই গৃহীত ও বাস্তবায়িত হচ্ছে। নিজেদের উন্নয়ন নিজেরাই নির্র্ধারণ করার লক্ষ্যে আঞ্চলিক পরিষদ ও তিন পার্বত্য জেলা পরিষদ গঠিত হলেও এখনো পূর্বের মতো উপর থেকে চাপিয়ে দেয়ার উন্নয়ন ধারা পার্বত্য চট্টগ্রামে বলবৎ রয়েছে। ফলে চুক্তি মোতাবেক পার্বত্য চট্টগ্রামে টেকসই উন্নয়নের ধারা এখনো নিশ্চিত করা যায়নি বলে তিনি জানান।
উদাহরণ হিসেবে বিশ্বব্যাঙ্কের অর্থায়নে পার্বত্য চট্টগ্রাম কানেক্টিভিটি প্রজেক্ট-এর কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, এ প্রকল্পের আওতায় ঠেগামুখে স্থলবন্দর স্থাপন এবং ঠেগা বন্দরের সাথে চট্টগ্রাম বন্দরের সংযোগ সড়ক নির্মাণ করা হলে এই ভূমি সমস্যা আরো জটিল আকার ধারণ করবে, বিপুল সংখ্যক পাহাড়ি অধিবাসী তাদের স্ব স্ব জায়গা-জমি থেকে উচ্ছেদ হয়ে পড়বে, সর্বোপরি জনমিতি, প্রাকৃতিক পরিবেশ ও জীব-বৈচিত্র্যের উপরও বিরূপ প্রভাব পড়বে বলে জানান।
তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশ সরকার টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) বাস্তবায়নের মাধ্যমে নতুন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার যে অঙ্গীকার প্রদর্শন করেছে তাতে দেশের আদিবাসীরা সেই স্বপ্নে সামিল হতে চায়। তাই এসডিজি বাস্তবায়নে আদিবাসীদের দৃশ্যমানতা নিশ্চিত করার আহ্বান জানান।
৬ষ্ঠ ও ৭ম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনায় বাংলাদেশ সরকার যেভাবে আদিবাসী জাতিগোষ্ঠীর অধিকার বিষয়ক জাতিসংঘ ঘোষণাপত্র বাস্তবায়ন এবং আইএলও কনভেনশন নং ১৬৯ অনুস্বাক্ষরের অঙ্গীকার করেছে তা বাস্তবায়নে বাংলাদেশ সরকারকে উদ্বুদ্ধ করতে সকল উন্নয়ন অংশীদারদেরকে আহ্বান জানান মিজ লারমা তালুকদার।
জাতিসংঘের আদিবাসী বিষয়ক স্থায়ী ফোরামের ১৫তম অধিবেশনে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে প্রায় ১০০০ জন আদিবাসী প্রতিনিধি যোগ দিয়েছেন।

Back to top button