মতামত ও বিশ্লেষণ

চুক্তি বাস্তবায়নের পক্ষে জনউদ্যোগের জনযাত্রার ঘোষণাপত্র

আজ ৫ ডিসেম্বর মঙ্গলবার সকাল ১০টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাজেয় বাংলার পাদদেশ থেকে শাহবাগের প্রজন্ম চত্ত্বর পর্যন্ত চুক্তি বাস্তবায়নের পক্ষে দেশের আদিবাসী ছাত্র-যুব-সাংস্কৃতিক সংগঠনসমূহ ও নাগরিক সমাজের অংশগ্রহণে জনযাত্রা কর্মসূচিতে জনউদ্যোগের ঘোষিত ঘোষণাপত্র নিম্নে হুবুহু দেওয়া হল।

পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির ২০ বছর
চুক্তি বাস্তবায়নের পক্ষে জনউদ্যোগের জনযাত্রার ঘোষণা

পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির শতভাগ বাস্তবায়ন চাই

২ ডিসেম্বর ১৯৯৭ দেশের পার্বত্য অঞ্চলে দীর্ঘদিনের অস্থিরতা কাটিয়ে সেখানে শান্তি ও শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি সম্পাদিত হয়। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার ও পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির মধ্যে স্বাক্ষরিত এই চুক্তির এবার ২০ বছর পূর্ণ হলো।
কিন্তু এই ২০ বছরেও চুক্তির পূর্ণ বাস্তবায়ন করা হয়নি। পাহাড়ে উন্নয়নের নামে পর্যটন শিল্প গড়ে তোলা হচ্ছে, নির্বিচারে পাহাড়-বন ধ্বংস করার পরিণাম যে কতটা ভয়াবহ হতে পারে, তার আলামত পাওয়া গেছে বিগত বর্ষা মৌসুমে পাহাড়ধসে শতাধিক মানুষের মৃত্যুর মধ্য দিয়ে। এছাড়াও সেখানকার আদিবাসী জনগোষ্ঠীর উপর নির্বিচারে আক্রমণ , অপহরণ, ঘরবাড়িতে আগুন, জোরপূর্বক ও অবৈধভাবে ভূমি দখল করে সেখানে নানা স্থাপনা নির্মাণের জন্য উচ্ছেদ অব্যাহত রয়েছে। পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদকে ক্ষমতাহীন ঠুটো জগন্নাথ বানিয়ে রাখা হয়েছে, ভূমি কমিশন অকার্যকর করে রাখা হয়েছে।
এই চুক্তি আদিবাসীদের দীর্ঘ আন্দোলনের ফসল। গত ২০ বছরেও চুক্তি বাস্তবায়িত না হওয়ায় পার্বত্য জুম্ম জনগোষ্ঠীসহ দেশের অনেক নাগরিক আজ ক্ষুব্ধ। জনসংখ্যার ভারসাম্য নিয়ে পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর মধ্যে যে ভয় ও শঙ্কা আছে, তা দূর করতে এখনই কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণসহ ঐ অঞ্চলের শান্তি ও সমৃদ্ধির জন্য চুক্তির শতভাগ বাস্তবায়নের কোনো বিকল্প নেই। স্বাধীন দেশের নাগরিক হিসেবে সকল জাতিগোষ্ঠীর মানুষ সমান অধিকার ও মর্যাদায় বাস করবে এটাই আমাদের চাওয়া।
আমাদের দাবি-

  • পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির শতভাগ বাস্তবায়নের মাধ্যমে সমস্যার সমাধান করতে হবে;

  • পাহাড়ের যেকোনো উন্নয়ন প্রকল্প বা পরিকল্পনায় এবং সিদ্ধান্তগ্রহণে সেখানকার অংশগ্রহণ ও নেতৃত্ব নিশ্চিত করতে হবে;

  • পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ ও জেলা পরিষদকে কার্যকর করতে চুক্তি অনুযায়ী ক্ষমতা দিতে হবে;
  • অবিলম্বে সকল সেটেলারকে পার্বত্য অঞ্চলের বাইরে সম্মানজনক পূর্নবাসন করতে হবে;

  • সকলপ্রকার হয়রানিমূলক ধড়পাকড় বন্ধ ও মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করে জনজীবনে স্বস্তি ফিরিয়ে আনতে হবে
  • গত ২০ বছরে পাহাড়ে সংঘঠিত সকল অগ্নিসংযোগ, ভাংচুর, অপহরণ, ধর্ষণ ও হত্যাকা-ের সুষ্ঠু তদন্ত করে দোষীদের যথোপযুক্ত শাস্তি প্রদান করতে হবে;

  • সকল আদিবাসী জাতিগোষ্ঠীর নিজ নিজ মাতৃভাষায় প্রথমিক শিক্ষা নিশ্চিত করতে হবে;
    চুক্তির দুই পক্ষের অন্যতম পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতিকে দলীয়ভাবে সকল নির্বাচনে অংশগ্রহণের ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে;

  • আদিবাসীদের আদিবাসী নামে সাংবিধানিক স্বীকৃতি দিতে হবে।

    এসকল দাবিসহ পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি কর্তৃক উত্থাপিত দাবিসমূহ অবিলম্বে মেনে নিয়ে তা শতভাগ বাস্তবায়নের জন্য সরকারের প্রতি জোর দাবি জানাই।

    ৫ ডিসেম্বর ২০১৭

    জনউদ্যোগ জাতীয় কমিটি
    ই-মেইল:[email protected]

  • Back to top button