জাতীয়

চুক্তির মৌলিক বিষয় বাস্তবায়নে সরকারের রাজনৈতিক সদিচ্ছা নেইঃ সংবাদ সম্মেলনে সন্তু লারমা

শ্যাম সাগর মানকিন, ঢাকাঃ বাংলাদেশের সরকারগুলোর রাজনৈতিক সদিচ্চার অভাবে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির মৌলিক বিষয় এখনো অবাস্তবায়িত থেকে গেছে বলে মনে করেন পার্বত্য জনসংহতি সমিতির সভাপতি জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় (সন্তু) লারমা। আজ সকাল ১১ টায় রাজধানীর একটি হোটেলে চুক্তির ১৯তম বর্ষপূর্তি উপলক্ষ্যে এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা জানানো হয়।
হোটেল সুন্দরবনে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনের মূল বক্তব্যে জনসংহতি সমিতির সভাপতি সন্তু লারমা আরও বলেন, বাংলাদেশের বিভিন্ন সরকারের সাথে ২৬ টি বৈঠকের পর ১৯৯৭ সালের ২রা ডিসেম্বর শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের সাথে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি সাক্ষরিত হয়। চুক্তি সাক্ষরের ১৯ বছর অতিক্রান্ত হলেও পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ ও তিন পার্বত্য জেলা পরিষদের কার্যাবলী হস্তান্তর; পার্বত্য চট্টগ্রামের জুম্ম অধ্যুষিত অঞ্চলের বৈশিষ্ট্য সংরক্ষণ; অপারেশন উত্তরণসহ অস্থায়ী ক্যাম্প প্রত্যাহার; ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তিকরণ, ভারত প্রত্যাগত জুম্ম শরনার্থী ও আভ্যন্তরীণ উদ্বাস্তদের স্ব-স্ব জায়গা-জমি প্রত্যর্পণসহ পুনর্বাসন; পার্বত্য চট্টগ্রামের সকল চাকুরিতে জুম্মদের অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে স্থায়ী বাসিন্দাদের নিয়োগ, চুক্তির সাথে সঙ্গতি বিধানকল্পে পুলিশ এ্যাক্ট, পুলিশ রেগুলেশন ও ১৯০০ সালের পার্বত্য চট্টগ্রাম শাসনবিধিসহ পার্বত্য চট্টগ্রামে প্রযোজ্য অন্যান্য আইন সংশোধন; সেটেলার বাঙালিদের পার্বত্য চট্টগ্রামের বাইরে সম্মানজনক পুনর্বাসন ইত্যাদি চুক্তির মৌলিক বিষয়সমূহ এখনো অবাস্তবায়িত রয়েছে।
অথচ সরকার দেশ বিদেশের জনমতকে বিভ্রান্ত করতে চুক্তির ৭২ টি ধারার মধ্যে মাত্র ২৫ টি ধারা বাস্তবায়িত করে ৪৮ টি ধারা বাস্তবায়নের বিভ্রান্তিমুলক বক্তব্য দিচ্ছে। এতে সরকার জুম্ম জনগণ সহ পার্বত্যবাসীর রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অধিকার প্রতিষ্ঠায় চরমভাবে অনাগ্রহী তা প্রমাণিত বলে দাবী জনসংহতি সমিতির শীর্ষ এ নেতার।
এমতাবস্থায় পার্বত্যবাসীরা বিশেষত জুম্ম জনগণ নিরাপত্তাহীন ও অনিশ্চিত এক চরম বাস্তবতার মুখোখুখি হয়ে কঠিন জীবনযাপন করতে বাধ্য হচ্ছে। তাই পার্বত্য চট্টগ্রামের বিরাজমান সমস্যা রাজনৈতিক ও শান্তিপূর্ণ উপায়ে সমাধানের ক্ষেত্রে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়নের বিকল্প নেই। তিনি পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির যথাযথ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে পার্বত্যবাসীকে নিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি কর্তৃক পূর্ব-ঘোষিত দশদফা কর্মসূচির ভিত্তিতে অসহযোগ আন্দোলন অব্যাহতভাবে চালিয়ে যাবেন বলেও ঘোষণা করেন।
সাংবাদিকদের ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশন আইনের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির আলোকে ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশন আইন সংশোধন করা হলেও তার যথাযথ বাস্তবায়নে প্রশাসন কর্তৃক আইনত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না, সুষ্ঠুভাবে বাস্তবায়নে বান্দরবান ও রাঙ্গামাটিতে দুটো শাখা অফিস বানানো প্রয়োজন হলেও তা এখনো বানানো হয়নি, প্রয়োজনীয় জনবল নিয়োগ করা হয়নি, প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম প্রভৃতির অভাবে বিচারিক কাজগুলো করা সম্ভব হয়ে উঠছে না।

তিনি আরো বলেন-পার্বত্য চট্টগ্রামের মানুষ এক শাসরদ্ধকর পরিস্থিতির মধ্যে আছে। পার্বত্য চট্টগ্রামে অপারেশন উত্তরণের নামে এক ধরনের সেনাশাসন রযেছে। আর এই অপারেশন উত্তরণের নাম দিয়ে সেখানে তারা সকল বিষয়ে হস্তক্ষেপ করে। চুক্তি বাস্তবায়নের জন্য সরকারের সদিচ্ছা, কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহন অন্যতম অন্তরায়। পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষযক মন্ত্রনালয় যেরকম হওযার কথা ছিল সামগ্রিকভাবে সকল কার্যক্রম পার্বত্য চুক্তি বাস্তবাযনের আন্দোলনের পক্ষে আছে বলা যায়না।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত বিশিষ্ট কলামিস্ট সৈয়দ আবুল মকসুদ বলেন, চুক্তি বাস্তবায়নে একদিকে প্রশাসন ও মূলধারার রাজনৈতিক দলগুলোর চরম অনীহা, অন্যদিকে দেশের প্রগতিশীল রাজনৈতিক সংগঠন, সুশীল সমাজ, বুদ্ধিজীবী, নাগরিক সমাজ কর্তৃক যথাযথ পদক্ষেপ ও কর্মসূচী না নেওয়ার কারণে চুক্তির যথাযথ বাস্তবায়ন সম্ভব হচ্ছে না। তিনি আরো বলেন- পার্বত্য চুক্তি হলো সেখানকার মানুষের অধিকারের সনদ। চুক্তির কতগুলো ধারা বাস্তবায়িত হল না হল সেই অঙ্কটা গুরুত্বপুর্ণ নয়, সমস্যার সমাধান করতে হলে পার্বত্য মানুষের ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করতে হবে।
আরও অন্যান্যদের মধ্যে আইইডির নির্বাহী পরিচালক নুমান আহমেদ খান বলেন, মুক্তিযুদ্ধের অসাম্প্রদায়িক চেতনার যে বাংলাদেশ আমরা আশা করেছিলাম তা পার্বত্য চট্টগ্রামে আজও অলিখিত সামরিক শাসন বিরাজমান থাকার মধ্যে দিয়ে ভুলন্ঠিত হচ্ছে। পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়নের জন্য জনমত গঠন করতে হবে। নাগরিক সমাজ, প্রগতিশীল রাজনৈতিক দলকে নিজস্ব কর্মসূচি নিয়ে এগিয়ে আসতে হবে। সকল জাতির সমানাধিকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে।
পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির সাংগঠনিক সম্পাদক শক্তিপদ ত্রিপুরার সঞ্চালনায় সংবাদ সম্মেলনে আরও বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের সাধারণ সম্পাদক সঞ্জীব দ্রং, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক খায়রুল ইসলাম চৌধুরী রূপম প্রমুখ ও বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরাম, পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ, হিল উইমেন্স ফেডারেশন, আদিবাসী ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ, চানচিয়ার নেতৃবৃন্দও সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন ।
pcjss-press-statement-on-19th-anniv-of-cht-accord-beng-final

Back to top button