জাতীয়

চারুকলায় আদিবাসী-বাঙালী সাংস্কৃতিক উৎসব অনুষ্ঠিত

সতেজ চাকমা: সকল জাতি সত্তার মাতৃভাষায় শিক্ষার অধিকার চাই- এই স্লোগানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলার বকুলতলায় আদিবাসী-বাঙালী সাংস্কৃতিক উৎসব অনুষ্ঠিত হয়েছে। গত ৯ ফেব্রুয়ারী ২০১৯ এ অনুষ্ঠিত অনুষ্ঠানটির মূল আয়োজক ছিল Institute for environmental development (IED)। অনুষ্ঠান আয়োজন কমিটির সভাপতি নাট্যজন মামুনুর রশীদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠান পরিচালনায় ছিলেন আয়োজক কিমিটির অন্যতম সদস্য তারিক মিঠুল। দিনব্যাপী এ উৎসবের শুরুতেই ২১ টি বেলুন উড়িয়ে দিয়ে একুশে ফেব্রুয়ারীর ভাষা ও সংস্কৃতি রক্ষার মাহাত্মকে ধারণ করে অনুষ্ঠানের উদ্ধোধন করা হয়। পরে আদিবাসী এবং বাঙালীদের মধ্যে ভ্রাতৃত্ব ও সৌহার্দপূর্ণ সম্পর্ককে আরো ্ঋদ্ধ করে অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ বিনির্মাণের স্বপ্নকে ধারণ করে রাখি বন্ধনের মাধ্যমে একে অপরের মধ্যে রাখি পরিয়ে দেওয়া হয়। এসময় উপস্থিত ছিলেন সাবেক মন্ত্রী ও বর্তমান সাংসদ বাংলাদেশ ওয়ার্কাস পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন এমপি, ডাকসুর সাবেক সাধারণ সম্পাদক ডা. মোস্তাক হোসেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. মো: আক্তারুজ্জামান এবং প্রো-ভিসি (প্রশাসন) ড.মুহাম্মদ সামাদ, নাট্যব্যক্তিত্ব মামুনুর রশীদ, জাতীয় আদিবাসী পরিষদের সভাপতি রবীন্দ্রনাথ সরেন, বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের তথ্য প্রচার ও প্রকাশনা বিষয়ক সম্পাদক দীপায়ন খীসা, আদিবাসী নেত্রী বিচিত্রা তিরিকি সহ বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
আলোচনা সভায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন আদিবাসী-বাঙালি সাংস্কৃতিক উৎসব আয়োজন কমিটির সদস্য সচিব হরেন্দ্র নাথ সিং।আলোচনা সভায় অংশ নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-ভিসি ড.মুহাম্মদ সামাদ বলেন, ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলন, তেভাগা আন্দোলন থেকে শুরু করে এ উপ-মহাদেশের বিভিন্ন আন্দোলন সংগ্রামে আদিবাসী বাঙালিদের ঐক্যবদ্ধ সংগ্রামের ঐতিহ্য বহুদিনের।এ সংহতিকে রক্ষা করে অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ বিনির্মাণের জন্য এ ধরণের আয়োজন প্রশংসনীয়।
আদিবাসী ফোরামের তথ্য ও প্রচার সম্পাদক দীপায়ন খীসা তার বক্তব্যে শাসকদের প্রতি ইঙ্গিত করে বলেন, এ উৎসবের যে স্লোগান সে স্লোগানটি যারা বাস্তবে রূপ দেবে তাদেরকেই বেশি উপলব্ধি করতে হবে স্লোগানের মর্মকথা।
ডাকসুর সাবেক জিএস ডা: মোস্তাক হোসেন বলেন, আমরা মনে করতে পারিনা যে, এদেশে কেবল বাঙালী থাকবে। এখানে আদিবাসী বাঙালির যে সৌহার্দ্য ও ভ্রাতৃত্ব সে সম্পর্ককে এগিয়ে নেওয়ার জন্য আমাদের সবাইকে হাতে হাত ধরে সংহতির সুরে সুর মিলিয়ে এগিয়ে যেতে হবে।
এ আয়োজনের আয়োজকদের প্রশংসা করে সাবেক মন্ত্রী ও বর্তমান সাংসদ রাশেদ খাঁন মেনন বলেন, আদিবাসী-বাঙালি পরষ্পরের মধ্যে মেলবন্ধন সৃষ্টির জন্য এ ধরণের উদ্যোগ আরো বেশি পরিমাণে নেওয়া জরুরী । রবীন্দ্রনাথের রাখি বন্ধন অনুষ্ঠানকে ইঙ্গিত করে তিনি আরো বলেন, স্বদেশি আন্দোলনে বঙ্গভঙ্গের সময় বরীন্দ্রনাথ রাখি বন্ধনকে আন্দোলনের হাতিয়ার হিসাবে ব্যাবহার করেছেন।তেমনি অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ বিনির্মাণের স্বপ্নকে বাস্তব রূপদানের জন্য আমাদেরকেও এ ধরণের রাখি-বন্ধনের মাধ্যমে সংহতি ও ঐক্যকে সুদৃঢ় করতে হবে। চলমান সরকারের আমলে পার্বত্য চুক্তির বাস্তবায়ন, পাহাড়ে বাঙালিদের অবৈধ অনুপ্রবেশ থেকে শুরু করে কতগুলো মৌলিক বিষয়ের সুরাহা হবে বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করেন ওয়ার্কাস পার্টির সভাপতি।
আলোচনা সভার সভাপতি বিশিষ্ট নাট্য ব্যক্তিত্ব মামুনুর রশিদ আদিবাসী-বাঙালির পারষ্পরিক সৌহার্দ ও সংহতিকে লালনের জন্য আমাদের সবাইকে হাতে হাত ধরে এগোতে হবে। সাম্প্রদায়িক অপশক্তিকে কখনোই এ সম্প্রীতির সুরে আঘাত করতে দেওয়ার সুযোগ দেয়া ঠিক হবে না বলেও তিনি দাবী করেন।
দিনব্যাপী চলা এ আয়োজনে আদিবাসী- বাঙালি শিল্পীদের তুলিতে সেজে ওঠে পাহাড় ততা সমতলের আদিবাসী তথা বাঙালি সংস্কৃতির নানা রূপ। বিকেল বেলায় বিভিন্ন আদিবাসী গবেষক ও লেখকদের প্রবন্ধ উপস্থাপনার আয়োজন চলে। প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বিশিষ্ট প্রাণ বৈচিত্র্য গবেষক পাবেল পার্থ, আদিবাসী নেতা গজেন্দ্র নাথ মাহাতো, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অধ্যাপক রৌবায়েত ফেরদৌস সহ বিশিষ্ট গবেষকরা। আদিবাসী মেয়েদের একমাত্র গানের দল এফ- মাইনর, আদিবাসী গানের দল মাদল সহ কৃষ্ণপক্ষের গান পরিবেশনা এবং সর্বশেষ উদিচী শিল্পীগোষ্ঠীর সিঁদু-কানুর পালার মধ্য দিয়ে এ উৎসবের সমাপ্তি হয়।

Back to top button