আঞ্চলিক সংবাদ

চবিতে এম এন লারমা স্মৃতি ক্রিকেট টুর্নামেন্ট-২০২২ এর সমাপনী ও পুরস্কার বিতরণী আয়োজন সম্পন্ন

আইপিনিউজ ডেক্স(ঢাকা): পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখার উদ্যোগে আয়োজিত মহান নেতা মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমা স্মৃতি ক্রিকেট টুর্নামেন্টে সমাপনী ও পুরষ্কার বিতরণী অনুষ্ঠান সম্পন্ন হয়েংছে গতকাল। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ সাইদুল ইসলাম। এছাড়াও বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ী ছাত্র পরিষদের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক নিপন ত্রিপুরা, হিল উইমেন্স ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক শান্তিদেবী তঞ্চঙ্গ্যা, পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ চট্টগ্রাম মহানগর শাখার সভাপতি সুপ্রিয় তঞ্চঙ্গ্যা, বিএমএসসি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক নুসাইমং মারমা প্রমুখ।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি নবোদয় চাকমা এবং সঞ্চালনা করেন সাধারণ সম্পাদক নরেশ চাকমা। অনুষ্ঠানে শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন এম এন লারমা স্মৃতি ক্রিকেট টুর্নামেন্ট-২০২২ আয়োজক কমিটির আহ্বায়ক পরেশ চাকমা।

টুর্নামেন্টের ফাইনাল খেলায় হিল ফোর্স (২০১৯-২০ সেশন) ও ইনক্রেডিবল (২০১৭-১৮ সেশন) প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে। খেলার শুরুতে পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ী ছাত্র পরিষদের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক নিপন ত্রিপুরা ফাইনাল খেলার উদ্বোধন ঘোষণা করেন। অনুষ্ঠানের শুরুতে মহান নেতা মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমা সহ পার্বত্য চট্টগ্রামের জুম্ম জাতীয় অস্তিত্ব রক্ষার সংগ্রামে যারা শাহাদাৎ বরণ করেছেন তাদের স্মরণে এক মিনিট নিরবতা পালন করা হয়।
খেলায় প্রথম ইনিংসে ব্যাট করতে নেমে ইনক্রেডিবল ৬৮ রান টার্গেট দিতে সক্ষম হয়। এরপরে ব্যাট করে হিল ফোর্স ২ উইকেট হাতে রেখে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরব অর্জন করে। উক্ত ম্যাচে ম্যান অফ দ্য ফাইনাল নির্বাচিত হন হিল ফোর্সের রবিন ত্রিপুরা।
টুর্নামেন্টে প্লেয়ার অফ দ্য টুর্নামেন্ট নির্বাচিত হন ইনক্রেডিবলের জুয়েল চাকমা ( যার ব্যক্তিগত সংগ্রহ ৭১ রান, ৯ উইকেট), টুর্নামেন্টে সর্বোচ্চ রান সংগ্রহকারী হান্দুগিরি হিল রাইডার্সের সুমেন্টু চাকমা ব্যক্তিগত সংগ্রহ ১২৮ রান), সর্বোচ্চ উইকেট সংগ্রহকারী হিল ফোর্সের অলিম বম (ব্যক্তিগত সংগ্রহ ১৮ উইকেট)।

বিজয়ী দলের হাতে ট্রফি তুলে দিচ্ছেন অতিথিরা। স্থান- চবি খেলার মাঠ। (২২ মার্চ, ২০২২)

পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ সাইদুল ইসলাম বলেন, খেলাধুলার মাধ্যমে চবিতে অধ্যয়নরত আদিবাসী শিক্ষার্থীদের মধ্যে পারস্পরিক ভ্রাতৃত্বের বন্ধন গড়ে উঠবে বলে বিশ্বাস রাখি। ছাত্রদের পাশাপাশি পাহাড়ী ছাত্রীরাও খেলাধুলায় অনেক এগিয়ে। হলের এথলেটিক্সে প্রায় সময় পাহাড়ী ছাত্রীরা জয় লাভ করে থাকে। আর শিক্ষার্থীদের ভালোভাবে পড়ালেখা করে জ্ঞান অর্জন করতে হবে আর পড়ালেখা শেষ করে নিজের সমাজে গিয়ে কাজে নিজের অর্জিত জ্ঞান ও অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগানোর পরামর্শ দেন চবি’র এই শিক্ষক।

বিশেষ অতিথির বক্তব্য ছাত্রনেতা নিপন ত্রিপুরা বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় হচ্ছে নিজের মেধাকে বিকশিত করার জন্য সৃজনশীল একটি বিরাট প্লাটফর্ম। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররাই যেকোনো আন্দোলনের নেতৃত্বের প্রথম সারিতে থাকে। ভাষা আন্দোলন, গণঅভ্যুত্থান, মুক্তিযুদ্ধ এবং স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনেও শিক্ষার্থীরা বড় ভুমিকা পালন করেছে। আর আমাদের আদিবাসী শিক্ষার্থীদেরও লেখাপড়ার পাশাপাশি নিজের অধিকার আদায়ের আন্দোলনে অবদান রাখতে হবে। ছাত্ররাই হচ্ছে জাতির কান্ডারী। মহান নেতা মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমা আশির দশকে গ্রামে চলো নীতি অনুসরণ করে শিক্ষাক্ষেত্রে বিরাট ভুমিকা রাখেন। জুম্ম জনগণকে সচেতন করে জুম্ম জনগণের অধিকার আদায়ের সংগ্রামে নেতৃত্ব দিয়ে গেছেন। তার সেই আদর্শকে ধারণ করে আমাদের সামনে এগিয়ে যেতে হবে।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে সুপ্রিয় তঞ্চঙ্গ্যা বলেন, টুর্নামেন্টের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে আদিবাসী শিক্ষার্থীদের মধ্যে ভ্রাতৃত্বের বন্ধন তৈরি করা। এই ভ্রাতৃত্বের বন্ধনের মাধ্যমে একসাথে সমাজ পরিবর্তনে আমাদের আদিবাসী শিক্ষার্থীরা বিরাট ভুমিকা রাখবে বলে তিনি দৃঢ় বিশ্বাস করেন।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে শান্তি দেবী তঞ্চঙ্গ্যা বলেন, এম এন লারমা একটি চেতনার নাম। একইসাথে একটি আদর্শের নাম। এই আদর্শকে ধারণ করে আমাদের অধিকার আদায়ের আন্দোলনকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। তৎকালীন কাপ্তাই বাঁধের যে ক্ষতিকর প্রভাব বুঝে আন্দোলন শুরু করেছিলেন এম এন লারমা। পরে পার্বত্য চট্টগ্রামের জুম্ম জনগণ কঠোর আন্দোলনের ফলে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। তিনি পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়নের এই আন্দোলনে সকল আদিবাসী শিক্ষার্থীদের এক হওয়ার আহ্বান জানান।
অনুষ্ঠানে সভাপতি নবোদয় চাকমার সমাপনী বক্তব্যের মধ্যে দিয়ে আলোচনা সভা শেষ হয় এবং পুরস্কার বিতরণীর মাধ্যমে এবারের টুর্নামেন্টের সমাপ্তি ঘটে।

উল্লেখ্য যে, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত পাহাড় ও সমতল থেকে আসা আদিবাসী শিক্ষার্থীদের মধ্যে পারস্পরিক ভ্রাতৃত্বের বন্ধন সুদৃঢ় করার লক্ষ্যে প্রতিবছর পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখার উদ্যোগে মহান নেতা মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমা স্মৃতি ক্রিকেট টুর্নামেন্টের আয়োজন করা হয়। তারই ধারাবাহিকতায় এবছরও মহান নেতা মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমা স্মৃতি ক্রিকেট টুর্নামেন্ট -২০২২ অনুষ্ঠিত হয়। টুর্নামেন্টের এবারের আসরে মোট তেরোটি(১৩) দল অংশগ্রহণ করে।

Back to top button