চবিতে “আদিবাসী সংস্কৃতি ও ভাষা বৈচিত্র্য উৎসব-২০২৪” অনুষ্ঠিত
গতকাল ২৯ ফেব্রুয়ারী ২০২৪ খ্রি: চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় আদিবাসী শিক্ষার্থীদের সাংস্কৃতিক সংগঠন রঁদেভূ শিল্পীগোষ্ঠী’র উদ্যোগে চতুর্থবারের মতো “আদিবাসী সংস্কৃতি ও ভাষা বৈচিত্র্য উৎসব- ২০২৪” অনুষ্ঠিত হয়েছে।
“শেকড়ের টানে তারুণ্যের আহ্বানে, সংস্কৃতির সুর হোক ভাষার জয়গানে” স্লোগানকে সামনে রেখে আয়োজিত অনুষ্ঠানটি চবি ক্যাম্পাসের উন্মুক্ত মঞ্চে গতকাল দুপুর ২ ঘটিকায় শুরু হয়।
অনুষ্ঠানে উদ্বোধক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিশিষ্ট লেখক ও ভাষা গবেষক শ্রী মথুরা বিকাশ ত্রিপুরা। এছাড়াও আলোচনা সভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সমাজবিজ্ঞান অনুষদের সম্মানিত ডিন প্রফেসর ড. সিরাজ উদ দৌল্লাহ, ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক ড. আনন্দ বিকাশ চাকমা, আধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউটের সহকারী অধ্যাপক জেসী ডেইজি মারাক, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের প্রভাষক শাং থুই প্রু, ইংরেজি প্রভাষক নৈরঞ্জনা চাকমা প্রমুখ।
রঁদেভূ শিল্পীগোষ্ঠী’র সাধারণ সম্পাদক পহেলা চাকমার সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সভাপতি সজীব তালুকদার। স্বাগত বক্তব্য প্রদান করেন রঁদেভূ’র সহ-সাধারণ সম্পাদক ভুবন চাকমা।
এছাড়াও অনুষ্ঠানে শুভেচ্ছা বক্তব্য প্রদান করেন পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক অন্বেষ চাকমা ও চবি চারুকলা ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থী রিকেল চাকমা টোটো। অনুষ্ঠানের উদ্বোধককে সম্মাননা স্মারক তুলে দেন বিশেষ অতিথি প্রফেসর ড. সিরাজ উদ দৌল্লাহ মহোদয়।
অনুষ্ঠানের উদ্বোধক মথুরা বিকাশ ত্রিপুরা বলেন, “আদিবাসী শিশুদের প্রথমে মাতৃভাষা নিয়ে পাঠদান করার সুযোগ তৈরি করে দিতে হবে। আদিবাসীদের মাতৃভাষা তখনই টিকে থাকবে যখন আমাদের প্রজন্মান্তরে সেটি যথাযথ ব্যবহারের পরিবেশ সৃষ্টি হয়। কোন ভাষায় কথা বলার মানুষ একজন মাত্র থাকলেও সেটাকে অন্যান্য ভাষার মত সমান মর্যাদা দিতে হবে। বাংলাদেশের সংকটাপন্ন আদিবাসী জনগোষ্ঠীর ভাষা ও সংস্কৃতিকে পরিচর্যা ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য সরকারি ভাবে টেকসই কিছু উদ্যোগ গ্রহণ করা দরকার।”
প্রফেসর ড. সিরাজ উদ দৌল্লাহ বলেন, “আজকের বিশ্বে যদি আমরা দেখি আমেরিকা ও অস্ট্রেলিয়ার যে আদিবাসী জনগোষ্ঠী ছিল তাদের অধিকাংশ ভাষা হারিয়ে গেছে। বাংলাদেশেও পাহাড় ও সমতলে আদিবাসীদের ভাষা-সংস্কৃতি দিন দিন বিলুপ্তির পথে যাচ্ছে। পাকিস্তান শাসনের সময়ে পূর্ব বাংলায় বাঙালিদের উপর উর্দূ ভাষাকে চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করা হয়। বাংলা ভাষাকে হারিয়ে যাওয়া থেকে রক্ষার জন্য বায়ান্ন’র ভাষা আন্দোলন গড়ে ওঠে। আজকের দিনে আদিবাসীদের ভাষা ও সংস্কৃতিগত সচেতন দরকার। যারা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশুনা করছেন নিজ নিজ ভাষা সংস্কৃতি নিয়ে অধিকতরভাবে কাজ করা সকলের নৈতিক দায়িত্ব।”
ড. আনন্দ বিকাশ চাকমা বলেন, “আমাদের যে ইতিহাস ও বৈচিত্র্যময় ভাষা-সংস্কৃতি আছে তা রক্ষার জন্য শিক্ষিত সমাজকে সোচ্চার হতে হবে। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস আমাদের যে শিক্ষা দেয় তার মর্মকথা হচ্ছে সকল মাতৃভাষাকে সমান মর্যাদা দিয়ে তার রক্ষণাবেক্ষণের যথাযথ ব্যবস্থা করা। আজকের দিনে অনুশীলন ও চর্চার অভাবে আমাদের ভাষা আদিবাসীদের সংস্কৃতি সংকটে পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এজন্য নতুন প্রজন্মের জন্য ভাষা ও সংস্কৃতি চর্চার সুষ্ঠু পরিবেশ সৃষ্টি করা প্রয়োজন।”
জেসী ডেইজি মারাক বলেন, “পৃথিবীতে অনেক ভাষা হারিয়ে যেতে বসেছে। ভাষা একটি জনগোষ্ঠীর জীবনের অংশ। একটা জনগোষ্ঠী তখনই পরিপূর্ণ হয়ে উঠে যখন সে নিজের মাতৃভাষা নিয়ে মনের ভাব প্রকাশ করতে পারে। এজন্য নতুন প্রজন্মকে ভাষা রক্ষায় এগিয়ে আসতে হবে।”
সভাপতির বক্তব্যের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠানের আলোচনা সভার সমাপ্তি ঘটে। পরবর্তীতে রঁদেভূ’র শিল্পীদের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠানে সাংস্কৃতিক পর্ব অনুষ্ঠিত হয়।
আয়োজিত অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেন চবি চারুকলা ইনস্টিটিউটের আদিবাসী শিক্ষার্থীবৃন্দ এবং অনুষ্ঠানে চারুকলায় অধ্যয়নরত আদিবাসী শিক্ষার্থীদের নানা শিল্প ও চিত্রকর্ম প্রদর্শিত হয়।