খেলাধুলা

চবিতে অনুষ্ঠিত হলো শহীদ ছাত্রনেতা মংচসিং মারমা স্মৃতি ফুটবল টুর্নামেন্ট-২০২৪ এর ফাইনাল

গত ১২ জুন ২০২৪ ইং চট্টগ্রাম বিশ্বিবদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখার আয়োজনে “শহীদ ছাত্রনেতা মংচসিং মারমা স্মৃতি ফুটবল টুনার্মেন্ট -২০২৪” এর সমাপনী ও পুরষ্কার বিতরণী অনুষ্ঠিত হয়েছে। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত আদিবাসী শিক্ষার্থীদের মধ্যে পারস্পরিক ভ্রাতৃত্ববোধ সুদৃঢ় করার লক্ষ্যে আয়োজিত এই ক্রীড়া আয়োজনের সমাপনী ও পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে উদ্বোধক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক সুপ্রিয় তঞ্চঙ্গ্যা। প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ী ছাত্র পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারন সম্পাদক রুমেন চাকমা, বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় সংসদের সভাপতি সুদীপ্ত চাকমা, হিল উইমেন্স ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় নেত্রীবৃন্দ, বাংলাদেশ মারমা স্টুডেন্ট কাউন্সিলের চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাংস্কৃতিক সম্পাদক রাম্রা সাইন মারমা এবং বাংলাদেশ ত্রিপুরা স্টুডেন্ট ফোরাম চট্টগ্রাম মহানগরের সহ-সভাপতি সঞ্চয় ত্রিপুরা প্রমুখ।

সমাপনী ও পুরষ্কার বিতরণ অনুষ্ঠানে পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক অন্বেষ চাকমার সঞ্চালনায় সভাপতিত্ব করেন অন্তর চাকমা। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন টুর্নামেন্টের আহ্বায়ক শুভাষ চাকমা। খেলার শুরুতে শহীদ ছাত্রনেতা মংসচিং মারমার স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয় এবং ফাইনাল খেলার উদ্বোধন ঘোষণা করা হয়।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে রুমেন চাকমা বলেন, আমরা এক একজন পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রতিনিধি। পড়াশোনার পাশাপাশি এই ছাত্র সমাজকে ঐক্যবদ্ব ও সুসংগঠিত থেকে পার্বত্য চট্টগ্রামে রাজনৈতিক শোষণ নিপীড়ন থেকে মুক্তির কথা ভাবতে হবে। আমাদের মধ্যে নানা হতাশা আসবে সকল বাঁধাকে পেছনে ফেলে জাতীয় মুক্তির তাড়নায় এগিয়ে আসতে হবে। জুম্ম জনগণের আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে মংচসিং মারমাদের আত্মত্যাগকে তরুণদের স্মরণে রাখতে হবে।

পুরষ্কার বিতরণী অনুষ্ঠান

 

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে সুদীপ্ত চাকমা বলেন, এই টুর্নামেন্ট আয়োজনের মূল লক্ষ্য পাহাড় এবং সমতল থেকে অধ্যয়নরত আদিবাসী শিক্ষার্থীদের মধ্য ভাতৃত্ববোধকে সুদৃঢ় করা। আমরা যেখানেই থাকি না কেন আমাদেরকে শেখড়ের কথা ভাবতে হবে। সুশিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে সকলকে অস্তিত্বের প্রতি দায়বদ্বতার জায়গা থেকে নিজ নিজ সমাজ ও জাতিতে অবদান রাখতে হবে।

সঞ্চয় ত্রিপুরা বলেন, আমাদের সকলকে ঐক্যবদ্ব থাকতে হবে। এখানে বহু জাতিসত্তার সম্মিলনের মধ্য দিয়ে আমরা পারস্পরিক সৌহার্দ্য ও সংহতি রেখে আমাদের বন্ধনকে সুদৃঢ় করতে পারছি। শহীদ ছাত্রনেতা মংচসিং মারমা স্মৃতি টুর্নামেন্ট প্রতি বছর আরও সুন্দরভাবে হোক তার কামনা করছি।

রাম্রা সাইন মারমা বলেন, খেলায় জয় পরাজয় থাকবে কিন্তু আমাদের সকলের মধ্যকার সুসম্পর্ক বজায় রাখার জন্য এই ধরনের টুর্নামেন্ট আয়োজন করা দরকার। পার্বত্য চট্টগ্রামে আমরা শোষণ নিপীড়নের শিকার হচ্চি সেই বঞ্চনার বিরুদ্ধে আমাদেরকে ঐক্যবদ্ধ থেকে সংগ্রাম করতে হবে। অনুষ্ঠানের সভাপতি অন্তর চাকমার বক্তব্যের মাধ্যমে আলোচনা সভা এবং পুরস্কার বিতরণের মধ্যে দিয়ে অনুষ্ঠানের সমাপ্তি ঘটে।

রানার্স আপ এবং চ্যাম্পিয়ন দলের খেলোয়ারবৃন্দ

এবারের আসরে মোট ৮ টি দল অংশগ্রহণ করেছে। অনেক বাঁধা পেরোনোর পরে অবশেষে টুর্নামেন্টের ফাইনাল খেলায় অংশগ্রহণ করে টিম হিল ফোর্স (১৯-২০ সেশন) ও টিম চ্যালেঞ্জার্স (২০-২১ সেশন)। প্রথমার্ধের খেলায় ২-২ গোলে ড্র হওয়ায় ম্যাচ ট্রাইবেকারে গড়ালে টিম হিল ফোর্স ৪-৩ গোলে টানা তৃতীয়বারের মতো চ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরব অর্জন করে। এছাড়াও ম্যান অফ দ্য ফাইনাল নির্বাচিত হন টিম চ্যালেঞ্জার্সের অঞ্জয় চাকমা । প্লেয়ার অফ দ্য টুর্নামেন্ট নির্বাচিত হন টিম চ্যালেঞ্জার্সের খেলোয়াড় চিং সাই মারমা। টুর্নামেন্টের সর্বোচ্চ গোলদাতা হিসেবে নির্বাচিত হন পাকলাং ম্রো (তার ৪ টি) এবং সেরা গোলরক্ষক নির্বাচিত রবিন ত্রিপুরা।

উল্লেখ্য যে, ২০১২ সালের ২০ মে পাহাড়ী ছাত্র পরিষদের ছাত্র ও জনসমাবেশে যোগদান শেষে ফেরার পথে রাঙ্গামাটির কল্যাণপুরস্থ পেট্রোল পাম্পে ইউপিডিএফ সন্ত্রাসীদের গ্রেনেড হামলায় ছাত্রনেতা মংচসিং মারমা সহ কাপ্তাই সুইডিশ ইনস্টিটিউটে অধ্যয়নরত অনেক শিক্ষার্থী আহত হন। মংচসিং মারমাকে মারাত্মক আহত অবস্থায় চট্টগ্রাম মেডিকেল হাসপাতালে ভর্তি করানোর দুইদিন পরে মৃত্যুবরণ করেন। তাঁর স্মৃতির স্মরণে ২০১২ সাল থেকে প্রতি বছর পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখা এই ফুটবল টুর্নামেন্ট আয়োজন করে আসছে।

Back to top button