আঞ্চলিক সংবাদ

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমার ৩৫ তম মৃত্যুবার্ষিকী পালিত

মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমার ৩৫ তম মৃত্যুবার্ষিকী ও জুম্ম জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ,চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখা কর্তৃক চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে বিশ্বশান্তি প্যাগোডায় এক স্মরণ সভা অনুষ্ঠিত হয়।

স্মরণ সভায় পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সহ-সাধারন সম্পাদক শ্রাবণ চাকমার সঞ্চালনায় সভাপতিত্ব করেন পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সংগ্রামী সভাপতি ছাত্রনেতা শ্রী মিন্টু চাকমা।

সভায় উপস্থিত থেকে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক শুভ মারমা, বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় সংসদের সভাপতি ধীষণ প্রদীপ চাকমা, বাংলাদেশ মারমা স্টুডেন্টস কাউন্সিল চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি মংসাই মারমা, রদেঁভু শিল্পীগোষ্ঠীর সভাপতি অলি চাকমা প্রমুখ।

স্মরণ সভার শুরুতে মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমার জীবন ও দর্শনের উপর প্রবন্ধ পাঠ করেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী শুক্লা চাকমা ও সজীব তালুকদার।

স্বাগত বক্তব্য রাখেন পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সহ-সভাপতি জনক তঞ্চঙ্গ্যা।

অলি চাকমা তার বক্তব্যে বলেন,”এম এন লারমা শোষণ-বঞ্চনাহীন সমাজ গড়ার স্বপ্ন দেখেছিলেন। তিনি পার্বত্য চট্টগ্রামে প্রথম জুম্ম জনগণের উপর শোষণ নির্যাতনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেন। আজও আমরা শাসকগোষ্ঠী কতৃক নির্যাতনের শিকার হই। তিনি আজ আমাদের মাঝে নেই। আমরা তার আদর্শকে লালন করে চলেছি।”

মংসাই মারমা তার বক্তব্যে বলেন,”ছোটবেলা থেকে আমার গ্রামের মানুষের মুখ থেকে মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমার কথা শুনেছি। বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে অনেক বই পড়ে জানতে পারি তিনি আমাদের অধিকার আদায়ের জন্য আজীবন সংগ্রাম করে গেছেন। বর্তমান সময়ে আমাদের আন্দোলনকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করা হচ্ছে। আমাদের সবাইকে একত্রিত হয়ে সকল ষড়যন্ত্রকারীদের প্রতিহত করে আন্দোলন চালিয়ে যেতে হবে। বিএমএসসি আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে পিসিপি, জেএসএস এর সাথে ছিল এবং থাকবে।”

ধীষণ প্রদীপ চাকমা তার বক্তব্যে বলেন,”আমার বয়স যখন চার তখন থেকে বাবার হাত ধরে লাল গোলাপ হাতে মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমার মৃত্যুবার্ষিকীতে যেতাম। তখন ত্রিপুরা রাজ্যের শরনার্থী শিবিরে দিবসটি পালন করা হত। এম এন লারমা জুম্ম জাতীয়তাবাদের প্রবক্তা। তিনি জুম্ম জাতিকে পৃথিবীর বুকে বেঁচে থাকার স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন। বর্তমানে অনেক শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে রঙিন দুনিয়ার সাথে গা ভাসিয়ে দিয়ে জুম্ম জাতীয়তাবাদের সংগ্রাম থেকে দূরে চলে যায়। এম এন লারমার মৃত্যু হয়নি, মৃত্যুর মাধ্যমে নব জীবন পলাভ করেন। আমরা এম এন লারমার আদর্শকে ধারণ করে তার দেখানো পথে হেঁটে যাব।”

শুভ মারমা তার বক্তব্যে বলেন,”এম এন লারমা আামাদেরকে অধিকার প্রতিষ্ঠা না হওয়া পর্যন্ত সংগ্রাম করার জন্য শিখিয়েছেন। ভিন্ন জাতিগোষ্ঠীকে জুম্ম জাতীয়তাবাদের মাধ্যমে একসাথে আন্দোলন করতে শিখিয়েছেন। বঙ্গবন্ধুর তোমাদের প্রমোশন দিলাম বাঙালি হয়ে যাও কথার বিরুদ্ধে প্রথম প্রতিবাদ করেছিলেন। এম এন লারমার মৃত্যু হয়েছে কিন্তু তার আদর্শের মৃত্যু হয়নি। তার আদর্শকে ধারণ করে হাজার হাজার মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমার জন্ম নিয়েছে। আমাদের সবাইকে একসাথে মিলে আন্দোলন করতে হবে।”

মিন্টু চাকমা তার বক্তব্যে বলেন,”এম এন লারমা পার্বত্য চট্টগ্রামের একটি উজ্জ্বল নক্ষত্র। ১৯৮৩ সালের ১০ই নভেম্বর চার কুচক্রী দ্বারা নির্মমভাবে শহীদ হন। সেদিন তার সাথে আরো শহীদ হন তাঁর আটজন সহযোদ্ধা। এম এন লারমায় প্রথম জুম্ম জাতীয়তাবাদের জন্ম দেন। সামন্তবাদী সমাজের সময়েও তিনি পার্বত্য চট্টগ্রামে বিপ্লব সংগ্রাম শুরু করেছিলেন। তাঁর গড়ে তোলা জনসংহতি সমিতির আত্মনিয়ন্ত্রাধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রামের ফলে দীর্ঘ ২৪ বছর সশস্ত্র সংগ্রামের পর পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। কিন্তু সরকার চুক্তি বাস্তবায়নে নানা তালবাহানা করে যাচ্ছে। পার্বত্য চট্টগ্রামে জুম্ম জনগনের অধিকার আদায়ের রাজনৈতিক সংগঠনগুলোর নেতাকর্মীদের ধরপাকড়, দমন পীড়ন চালানো হচ্ছে। যদি গণতান্ত্রিক আন্দোলনের পথ রুদ্ধ করে দেয়া হয়, তাহলে আমাদেরকে অন্য পথ বেঁচে নিতে হবে।” তিনি জুম্ম জনগনের আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে ইস্পাত কঠিন আন্দোলনে সামিল হওয়ার আহবান জানান।
এরপর মোমবাতি প্রজ্জ্বলন ও ফানুস উত্তোলন করা হয়।

এর আগে স্মরণ সভার প্রথম পর্বে রাত ১২.০১ মিনিটে এস.আলম কটেজের অস্থায়ী শহীদ বেদীতে মহান নেতা এম. এন লারমা ও বীর শহীদের প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করে পুস্পমাল্য অর্পণ করা হয়।
এবং দ্বিতীয় পর্বে আলোচনা সভার আগে প্রতিবাদী কবিতা পাঠ করেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়েরর আদিবাসী শিক্ষার্থীরা ও প্রতিবাদী গান পরিবেশন করে “প্লুং” ব্যান্ড দল।

Back to top button