অন্যান্য

চট্টগ্রামে আন্তর্জাতিক আদিবাসী দিবস উদযাপিত

বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরাম, চট্টগ্রাম অঞ্চল কর্তৃক আয়োজিত আন্তর্জাতিক আদিবাসী দিবস ২০১৯ আজ ৯ই আগস্ট চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার ও জেএমসেন হলে অনুষ্ঠিত হয়।

“আদিবাসী ভাষা চর্চা ও সংরক্ষণের এগিয়ে আসুন” এই প্রতিপাদ্য নিয়ে শুরুতেই চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার প্রাঙ্গনের বেলুন উড়িয়ে অনুষ্ঠানের শুভ উদ্বোধন করেন কবি ও সাংবাদিক জনাব আবুল মোমেন।

পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি মিন্টু চাকমা সঞ্চালনায় উদ্বোধনী সমাবেশে বক্তব্য রাখেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় সমাজবিজ্ঞান অনুষদের সাবেক ডিন ও লোকপ্রশাসন বিভাগের সম্মানিত অধ্যাপক জনাব হোসাইন কবির প্রমুখ।

উদ্বোধনী সমাবেশের পর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার প্রাঙ্গন থেকে জেএমসেন হলের উদ্দেশ্যে একটি র‌্যালি বের করা হয়। র‌্যালিটি লালদীঘির ময়দান হয়ে জেএমসেন হলে গিয়ে শেষ হয়।

র‌্যালী শেষে মূল সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান এবং আলোচনা সভা শুরু হয়। উক্ত আলোচনা সভা প্রারম্ভে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় রঁদেভু শিল্পীগোষ্ঠীদের নৃত্য পরিবেশন, পাহাড়ী শ্রমিক কল্যাণ ফোরাম শিল্পীগোষ্ঠীদের নৃত্য ও প্লুং ব্যান্ড শিল্পীদের সংগীত পরিবেশিত হয়।

সাংস্কৃতিক পরিবেশনের পর পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ,চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি মিন্টু চাকমা ও কেন্দ্রীয় সদস্য বামং মারমা সঞ্চালনায়। উক্ত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক শ্রী রানা দাশগুপ্ত।

প্রধান আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন নৃবিজ্ঞানী ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. রাহমান নাসির উদ্দিন।
এছাড়া বিশেষ আলোচক হিসেবে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলার সভাপতি তাপস হোড়, বিশিষ্ট নারী নেত্রী ও আইনজীবী এ্যাড. রেহানা বেগম রানু প্রমুখ।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে এড. রানা দাশগুপ্ত বলেন, মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে বাংলাদেশে আমরা একটা অসাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র গঠন করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু আমরা বর্তমান সময়ে দেখি সরকার অসাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র গঠনের নামে আদিবাসীদের উপর প্রতিনিয়ত অত্যাচার নিপীড়ন চালিয়ে যাচ্ছে।
তিনি বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামের জনগণ আওয়ামিলীগ সরকারকে বিশ্বাস করেই পার্বত্য চুক্তি সাক্ষর করেছিল।কিন্তু চুক্তি বাস্তবায়নের প্রক্রিয়া নানান কৌশল অবলম্বন করে অত্যন্ত সচেতন ভাবে এড়িয়ে চলার চেষ্টা করছে।
তিনি হুশিয়ারি করে বলেন, সরকার যদি পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়নে রোডম্যাপ ঘোষণা না করে তাহলে পার্বত্য চট্টগ্রামের আদিবাসীরা যদি আন্দোলন সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়ে তার জন্য সরকারকে দ্বায়ভার গ্রহন করতে হবে।

প্রধান আলোচকের বক্তব্যে ড. রাহমান নাসির উদ্দিন বলেন, আদিবাসী জনগোষ্ঠী বিভিন্ন ভাবে অন্যায় অত্যাচার,দমন নিপীড়নের শিকার হচ্ছে।
পাহাড়ী আদিবাসী জনগোষ্ঠীর উপর উন্নয়নের নামে বিভিন্ন ভাবে সুকৌশলে আক্রমণ করা হচ্ছে। এবং তা সরকার অত্যন্ত সচেতন ভাবে এড়িয়ে যাচ্ছে। যার ফলে আদিবাসীরা বারংবার শোষণ বঞ্চনার শিকার হচ্ছে। এবং দেশত্যাগে বাধ্য হচ্ছে। তিনি বলেন, বাংলাদেশে বসবাসরত প্রায় ৩০ লাখ আদিবাসী জনগোষ্ঠী এখনও আদিবাসী হিসেবে সাংবিধানিক স্বীকৃতি পাইনি।যার ফলশ্রুতিতে আদিবাসীদের ভাষা সংস্কৃতি সহ ভূমি বৃহৎ জাতিগোষ্ঠীর আগ্রাসনে হারিয়ে যেতে বসেছে। আদিবাসী জনগোষ্ঠীকে সাংবিধানিক কাঠামোর বাইরে রেখে বাংলাদেশের উন্নয়ন সম্ভব নয় বলে তিনি মনে করেন। এবং সরকারকে সংকীর্ণ চিন্তা ভাবনা থেকে বেরিয়ে এসে আদিবাসী জনগোষ্ঠীর অধিকার সংরক্ষণে এগিয়ে আসার আহবান জানান। তিনি সরকারের সমালোচনা করে বলেন, যে সরকার ২০০৮ সালের নির্বাচনী ইসতেহারে পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়নের অঙ্গীকার করেছিল সেই সরকার বর্তমান সময়ে ক্ষমতায় থাকলেও চুক্তি বাস্তবায়নে এগিয়ে আসছে না। আদিবাসী সমস্যাকে সকলের সমস্যা হিসেবে দেখে পার্বত্য চুক্তি তথা আদিবাসীদের অধিকার আদায়ে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে বলে তিনি মনে করেন।

সম্মানিত আলোচকের বক্তব্যে নারী নেত্রী ও আইনজীবী এড. রেহানা বেগম রানু বলেন, দুর্ভাগ্য জনক হলেও সত্য মুক্তিযুদ্ধের চেতনা থেকে বেরিয়ে এসে আমরা আদিবাসী ভাইবোনদের উপর প্রতিনিয়ত নিপীড়ন নির্যাতন চালিয়ে যাচ্ছি।

তিনি মনে করেন, দেশে জনসংখ্যা বাড়ছে কিন্তু মানুষের সংখ্যা ক্রমশ কমে যাচ্ছে। তারই ধারাবাহিকতায় আদিবাসী জনগোষ্ঠীর মানুষেরা বঞ্চনার শিকার হচ্ছেন। তিনি সবাইকে আদিবাসী বান্ধব হয়ে পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়নে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।

সম্মানিত আলোচকের বক্তব্যে তাপস হোড় বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামের আদিবাসীরা তাদের অধিকারের জন্য দীর্ঘদিন ধরে লড়াই সংগ্রাম করে আসছে।কিন্তু শাসকগোষ্ঠীর ছত্রছায়ায় সেখানে আদিবাসী জনগোষ্ঠীরা প্রতিনিয়ত ধর্ষণ, ভূমি দখল সহ নানা ধরনের বঞ্চনার শিকার হচ্ছে।
সেি সমস্যা থেকে উত্তরণের জন্য সরকারকে আন্তরিক ভাবে এগিয়ে আসার আহবান জানান।তার পাশাপাশি আদিবাসী জনগোষ্ঠীকে লড়াই সংগ্রামে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।

এরপর বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরাম,চট্টগ্রাম অঞ্চলের সহ সভাপতি এবং অনুষ্ঠানের সভাপতি ফুল কুমার ত্রিপুরার সমাপনি বক্তব্যের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠানের সমাপ্তি ঘোষণা করা হয়।

Back to top button