গ্রাম্য ও আদিবাসী নারীদের অধিকার প্রতিষ্ঠার আহ্বান
রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে শনিবার সকালে উন্নয়নের অগ্রযাত্রায় নারীর ভূমিকা ; ভূমির অধিকার, কৃষিতে স্বীকৃতি এবং করণীয় শীর্ষক এক গোলটেবিল আলোচনায় গ্রাম্য ও আদিবাসী নারীদের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য সবাইকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান বক্তারা। আন্তর্জাতিক নারী দিবস ২০১৮ উপলক্ষে এসোসিয়েশন ফর ল্যান্ড রিফর্ম এন্ড ডেভেলপমেন্ট (এএলআরডি) এ আলোচনার আয়োজন করেন।
আলোচনায় এএলআরডির পক্ষে আলোচনাপত্র পাঠ করেন সংস্থাটির উপ-নির্বাহী পরিচালক রওশন জাহান মনি। আলোচনা পত্রে বাংলাদেশের প্রেক্ষিতে নারীদের নানান অবদান স্বত্তেও ভূমির অধিকারহীনতা, কৃষিতে নারীকে অস্বীকৃতি নানা তথ্য উপাত্তসহ তুলে ধরা হয়। সে আলোকে প্যানেল আলোচকবৃন্দ তাদের বক্তব্য তুলে ধরেন।
জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সদস্য অধ্যাপক বাঞ্ছিতা চাকমা উন্নয়নের সাথে আদিবাসী উচ্ছেদের সম্পর্কযুক্ততা নিয়ে বলেন ‘উন্নয়নের নামে আদিবাসীদের উচ্ছেদ করা হয়, অনেকে নিরুপায় হয়ে দেশ ছেড়ে পালাচ্ছে। এমন উন্নয়ন কাম্য নয় যেখানে মানুষকে ভূমি থেকে উচ্ছেদ করা হয়।’ পাহাড়ি নারীদের ভূমি অধিকার নিয়ে তিনি বলেন, ‘পাহাড়ি নারীরা সমতলের নারীদের থেকেও বেশি ভূমির অধিকার থেকে বঞ্চিত। প্রথাগত আইন সংশোধন করে হলেও পাহাড়ি নারীদের ভূমির অধিকার দেয়া দরকার।’
নারীদের ভূমির অধিকার কেনো আইন করে নিশ্চিত করা যাবেনা এই প্রশ্ন তুলে বাংলাদেশ নারী সাংবাদিক কেন্দ্রের সাধারণ সম্পাদক পারভীন সুলতানা ঝুমা বলেন,’৬৯ সালে আইয়ুব খানের আমলে ইসলামিক পাকিস্থানের সময় যদি ভূমি মালিকানা আইন বদলানো যায় তবে এই গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় কেনো সম্ভব হবেনা?’
চাকমা সার্কেলের রানী য়েন য়েন বলেন ‘এটি খুব দূর্ভাগ্য আমাদের যে ২০১৮ সালে এসেও উন্নয়নে নারীদের কি অবদান, কতখানি সে সব কথা তুলতে হয়।’ তিনি আরো বলেন, ‘ভূমিতে আদিবাসী হিসেবে সমষ্টিগত অধিকারকে বাদ দিয়ে ব্যাক্তি নারীর ভূমির অধিকার চিন্তা করে যাবেনা। তবে অবশ্যই ব্যাক্তি মালিকানাও গুরুত্বপূর্ণ। ‘ তিনি ভূমিতে আদিবাসীদের সমষ্টিগত অধিকারের ব্যাপারে মিডিয়ার ভূমিকা নিয়ে বলেন ‘মিডিয়া প্রচার করছে বান্দরবনের ম্রোরা দালাল চক্রের মাধ্যমে দেশ ছেড়ে পালাচ্ছে, কিন্তু কোন নিরাপত্তাহীনতার ফলে, কোন শক্তির ভয়ে দেশ ছাড়ছে তা প্রকাশ করছেনা। এ দেশের মিডিয়া আসলে স্বাধীন নয়, নিরপেক্ষও হতে পারেনা।’ অধিকার ছাড়া কোন টেকসই উন্নয়ন হতে পারেনা বলেও মত দেন তিনি।
‘নারীদের অধিকার স্বীকৃতি দেয়া মানে পুরুষের অধিকার অস্বীকার করা নয় বরং উন্নয়নের অগ্রযাত্রায় ধাবিত হওয়া’ বলে তার বক্তব্যে বলেন বিশিষ্ট সাংবাদিক আবু সাঈদ খান। তিনি আরো বলেন, ‘নারীর অধিকারের সংগ্রাম, কাজের স্বীকৃতির সংগ্রাম কেবল নারীর একার সংগ্রাম তা নয়, এটা আমাদের সবারই সংগ্রাম।’
এএলআরডির নির্বাহী পরিচালক শামসুল হুদা নারীর নিরাপত্তা ও অধিকার বিষয়ে কথা বলতে গিয়ে বলেন, ‘নারী সে আদিবাসী হোক কিংবা বাঙালি, তার অর্থনৈতিক অবস্থা যাই থাকুক, তার সম্প্রদায়, ধর্ম, বর্ণ যাই থাকুক রাষ্ট্রের কর্তব্য তার নিরাপত্তা ও অধিকার নিশ্চিত করা।’
এসোসিয়েশন ফর ল্যান্ড রিফর্ম এন্ড ডেভেলপমেন্ট (এএলআরডি) চেয়ারপার্সন খুশী কবিরের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় এরপর মুক্ত আলোচনায় অংশ নেয় বিভিন্ন জায়গা, সংগঠন থেকে আসা নেতৃবৃন্দ। সেখানে বিভিন্ন ক্ষেত্রের নারীদের অভিজ্ঞতা আলোচনা করা হয়। আলোচনা সভায় কিছু সুপারিশও করা হয়। যেখানে নারীর অধিকার নিশ্চিত করতে জনগনের মানসিকতার পরিবর্তন করা, সাংবিধানিক ও আইনগতভাবে বাধ্যবাধকতা তৈরি করা, নারীর নিরাপত্তায় প্রশাসনিক ও নারী নিপীড়ন বন্ধে বিচার নিশ্চিত করা, জনগণ ও উন্নয়ন সংগঠনের জন্য বিভিন্ন বিবেচনা সমূহ তুলে ধরা হয়।