গত বছর মানবাধিকার পরিস্থিতি ছিল চরম উদ্বেগজনক: আসক
মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক) দাবি করেছে, অর্থনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অধিকারের ক্ষেত্রে বিগত বছরগুলোর অগ্রগতির ধারা ২০১৮ সালে অব্যাহত থাকলেও মানবাধিকারের আরেকটি সূচক নাগরিক ও রাজনৈতিক অধিকারের ক্ষেত্রে আশানুরূপ অগ্রগতি হয়নি। বিগত বছরগুলোর মতো ২০১৮ সালের সার্বিক মানবাধিকার পরিস্থিতি ছিল চরম উদ্বেগজনক।
আজ বৃহস্পতিবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) সাগর-রুনি মিলনায়তনে আসকের এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলা হয়। এখানে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন আসকের উপপরিচালক নীনা গোস্বামী ও জ্যেষ্ঠ সমন্বয়কারী আবু আহমেদ ফয়জুল কবির।
লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, গত বছরজুড়ে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, বিশেষ করে ক্রসফায়ার, বন্দুকযুদ্ধ, গুলিবিনিময় ও গুম-গুপ্তহত্যার ঘটনা অব্যাহত ছিল। বিশেষত গত বছরের মে মাস থেকে শুরু হওয়া আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর মাদকবিরোধী অভিযানকে কেন্দ্র করে ক্রসফায়ার ও বন্দুকযুদ্ধে দেশজুড়ে ২৯২ জন নিহত হওয়ার ঘটনা ঘটে। ২০১৮ সালের আরেকটি উদ্বেগজনক বিষয় ছিল বেআইনি আটক, গণগ্রেপ্তারসহ বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হেফাজতে নির্যাতন ও মৃত্যুর মতো ঘটনা।
আসক আরও বলেছে, গত বছর গণমাধ্যমে প্রকাশিত গায়েবি মামলার বিষয়ে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা হয়েছে। সংগঠনটির দাবি, ২০১৮ সালে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধ, ক্রসফায়ার, গুলিবিনিময়, নিরাপত্তা হেফাজতে মোট ৪৬৬ জন নিহত হয়েছে। এর সংখ্যা ২০১৭ সালে ছিল ১৬২। ২০১৮ সালে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পরিচয়ে গুম হন ৩৪ জন। এর মধ্যে পরবর্তী সময়ে ১৯ জনের সন্ধান পাওয়া গেছে, যাঁদের অধিকাংশই বিভিন্ন মামলায় আটক আছেন।
আসক আরও বলেছে, নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর থেকে গত ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত কমপক্ষে ৪৭০টি সহিংসতার ঘটনায় ৩৪ জন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে আওয়ামী লীগের ১৯ জন, বিএনপির ৪ জন, একজন আনসার সদস্য, ১০ জন সাধারণ মানুষ রয়েছেন। ধর্ষণের বিষয়ে সংগঠনটি বলেছে, ২০১৮ সালে সারা দেশে ধর্ষণ ও গণধর্ষণের শিকার হয়েছেন ৭৩২ জন। ধর্ষণ–পরবর্তী হত্যার শিকার ৬৩ জন, ধর্ষণের পর আত্মহত্যা করেছেন সাতজন। ২০১৭ সালে ধর্ষণের শিকার হয়েছেন ৮১৮ জন। আর ২০১৬ সালে এই সংখ্যা ছিল ৭২৪।
আসকের প্রধান নির্বাহী শিফা হাফিজ তাঁর বক্তব্যে বলেন, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড এ বছর অনেক বেশি হয়েছে। নারী ও শিশু ধর্ষণসংক্রান্ত নির্যাতনও অনেক বেড়েছে। বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে কমিশন গঠন করে তদন্তের দাবি জানান তিনি।