আঞ্চলিক সংবাদ

খাসিয়াদের দাবি রাষ্ট্র তাদের পক্ষে নেই

মৌলভী বাজার থেকে ফিরে রিপন বানাইঃ ২০১৫ সালে বর্ষিয়ান রাজনৈতিক পংকজ ভট্টাচার্য়ের নের্তৃত্বে খাসিয়াদের উচ্ছেদের ষড়যন্ত্রের সরেজমিন পরিদর্শনে গিয়েছিলাম। আমাদের টিমে ছিলেন বিশিষ্টি মানবাধিকার কর্মী, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক, আদিবাসী নেতা ও বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিক বন্ধুগণ। সে সময়ে খাসিয়াদের উপর যে উচ্ছেদ ষড়যন্ত্র চলছিল তা গত কয়েকদিন পূর্বে আবার যখন ঝিমাই পুঞ্জিতে গেলাম তার কোন প্রকার পরিবর্তন হয়েছে বলে আমাদের কাছে মনে হয়নি। অন্যদিকে চা বাগান মালিক পক্ষের ক্ষমতার দাপট, প্রশাসনের পক্ষপাতিত্ব ও রাষ্ট্রের উদাসীনতা এর উপর কয়েকটি মামলা পরিচলনা খাসিয়াদের দিশেহারা করে তুলেছে। উল্লেখ্য প্রায় শত বছর পূর্বে ৮০ টির অধিক পরিবার এখানে বসতি স্থাপন করে এবং পান চাষ করে আসছে। ২০০৭-2০০৮ সালে কেদারপুর চা কর্তৃপক্ষ পুঞ্জির জায়গা নিজেদের দাবি করে সেখানে থাকা গাছ কাটার জন্য চিহ্নিত করে। যে গাছ গুলোতে খাসিয়াদের পান গাছ রয়েছে। খাসিয়ারা গাছ কাটতে বাধা দেয় এবং আদালতের স্মরনাপন্ন্ হয়। আদালত গাছ না কাটার পক্ষে রায় দেয়। পরে বাগান মালিক আবার আদালতের কাছে তাদের পক্ষে রায় নেয়। বর্তমানে খাসিয়ারা লিভ টু আপিল করলে আদালত ৬ মাসের স্টে অর্ডার দেয়। ২০১২ সালে এই জমির লিজ সরকার নবায়ন করে অথচ ২০০৭ সাল হতে খাসিয়ারা এই জমি নিয়ে আন্দোলন করে আসছে। লিজ নেওয়ার সময় প্রশাসন এখানে কোন খাসিয়াদের বসতবাড়ি নেই বলে সরকারের কাছে উল্লেখ করে। এরপর ২০১৫ সালে চা বাগান মালিক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সহযোগিতায় খাসিয়াদের কোন প্রকার পূর্ব ঘোষনা না দিয়ে সীমানা চিহ্নিত করতে গেলে খাসিয়ারা বাধাদেয় এবং ইউএনও চলে আসতে বাধ্য হয়। বিষয়টি নিয়ে খাসিয়াদের সাথে আদিবাসী নেতাদের সমন্বয়ে মালিক পক্ষের সাথে মিমাংসার আলেচনা চলে। মালিক পক্ষ প্রতি পরিবার ২ একর দিবে বলে প্রতিশ্রুতি দেয় কিন্তু খাসিয়ারা প্রত্যাখ্যান করে। জমির মালিক যেহেতু রাষ্ট্র তাই চা বাগান মালিকের কোন ক্ষমতা নেই খাসিয়াদের জমি দেবার। ঘটনা যখন খাসিয়াদের বিপক্ষে যেতে থাকে তখন ২০১৫ সালের ৩ আগস্ট জাতীয় মানবাধিকার চেয়ারম্যান জনাব মিজানুর রহমান পুঞ্জি পরিদর্শন করেন। তিনি ইউএনওর ১০ দিনের মধ্যে উচ্ছেদ করার হুসিয়ারিকে চ্যালেঞ্জ করে বলেন ১০ দিন কেন ১০ বছরের মধ্যেও এখান থেকে খাসিয়াদের উচ্ছেদ করতে রাষ্ট্র পারেনা। থাসিয়াদের বাসস্থান নিশ্চিত করা রাষ্ট্র্যের দায়িত্ব। খাসিয়াদের দাবি তাদের বসবাস করা জমি তাদের নামে স্থায়ী বন্দোবস্ত অথবা লিজ দিতে হবে। আমরা সরকারকে রাজস্ব দিতে রাজি আছি। খাসিয়াদের এমন অভিজ্ঞতায় তারা বলছে এই রাষ্ট্র তাদের পক্ষে নেই। আমাদের প্রশ্ন রাষ্ট্রের কাছে চা বাগান মালিক যার হাজার হাজার কোটি টাকা খাসিয়াদের বসবাস করা এই লিজকৃত জমি ছেড়ে দিলে তার সামান্যতম ক্ষতিও হবেনা অন্যদিকে খাসিয়াদের এখান থেকে তাড়ালে ৮০ টি পরিবারের ৫০০ জন মানূষ কোথায় যাবে? রাষ্ট্র তুমি হাজার কোটির মালিক চা বাগান মালিকের পক্ষে থাকবে নাকি অসহায় দরিদ্র খাসিয়া আদিবাসীদের।

Back to top button