জাতীয়

খাগড়াছড়িতে জুম্ম নারী ধর্ষণের ঘটনায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক ক্ষোভ

গত ২৪ সেপ্টেম্বর খাগড়াছড়ির বলপেয়া আদামে এক মানসিক প্রতিবন্ধী জুম্ম নারীকে ৯ জন বাঙালি কর্তৃক গণধর্ষণের ঘটনায় বিক্ষোভ চলছে গত কিছুদিন ধরে। পাহাড় তথা সমতলের বিভিন্ন জায়গায় এই বিক্ষোভ চলমান। একই সাথে সরব রয়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমও। প্রগতিশীল বিভিন্ন লেখক, শিল্পী, রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব, ছাত্রনেতা থেকে শুরু করে সর্বস্তরেই এই প্রতিবাদ ও ক্ষোভ চলমান রয়েছে।

বিশিষ্ট লেখক ও আইনজীবি ইমতিয়াজ মাহমুদ তাঁর নিজস্ব ফেসবুকের ওয়ালে গত ২৫ সেপ্টেম্বর ক্ষোভ প্রকাশ করে লিখেন, প্রতিবাদ করতে করতে একদিন আমরা ক্লান্ত হয়ে যাব, কিন্তু পাহাড়ে বাঙালি সেটেলাররা পাহাড়ি নারী ধর্ষণে কোনদিন বিরত হবে না।

তিনি এই ধরণের ধর্ষণের ঘটনা বারংবার সংঘটনের কারণ হিসেবে উক্ত স্টেটাসে আরো লিখেন, আদিবাসী নারী ধর্ষণের অপরাধে আজ পর্যন্ত কোন বাঙালীর শাস্তি হয়েছে? আমার জানা নেই। যদি দুই একটা হয়েও থাকে সংঘটিত অপরাধের সংখ্যার তুলনায় তাঁর সংখ্যা এত নগণ্য এত নগণ্য যে সেগুলি আপনি উপেক্ষা করতে পারেন। (আবার বলছি, আমার জানামতে আদিবাসী নারী ধর্ষণের অপরাধে কোন সেটেলারের বা কোন বাহিনীর কোন সদস্যের কোন শাস্তি হয়নি আজ পর্যন্ত। অনেক ঘটনায় তো মামলাও হয়না বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেন এই মানবাধিকার কর্মী।

খাগড়াছড়ির উক্ত ঘটনা নিয়ে বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যম সমূহে প্রকাশিত সংবাদের শিরোনামগুলো উল্লেখ করে কাপেং ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক পল্লব চাকমা তাঁর ফেসবুকের ওয়ালে ক্ষোভ জানিয়ে লিখেন, সাম্প্রতিক সময়ে পাহাড়ের নারী ধর্ষণ ও যৌন সহিংসতার কয়েকটি মিডিয়া হেডলাইন। এ থেকে কী বুঝা যায়? পার্বত্য চট্টগ্রাম এখন ‘ধর্ষকের স্বর্গরাজ্য’, না পাহাড়ে ‘ধর্ষণের মহোৎসব’ চলছে? আগে রেইপ হত, এখন গ্যাং রেইপ হচ্ছে। যেন এটা একটা ফ্যাশন হয়ে গেছে। ধর্ষকের যেটা ফ্যাশন অসহায় আদিবাসী নারীর কাছে তা মরণ যন্ত্রণার সমান।
তিনিও বিচার নিয়ে সংশয় প্রকাশ করে বলেন, আমি নিশ্চিত এগুলোর কোনটারই বিচার হবেনা। হয়ত আসামী ধরা পড়বে কিন্তু কয়েকদিন পরেই মুক্ত হবে। আবার অন্য কোন নারীর উপর ঝাঁপিয়ে পড়ার জন্য উত্থিত শিশ্ন নিয়ে ধর্ষক স্বাধীনভাবে ঘুরে বেড়াবে দিনে দুপুরে, বীর দর্পে। কারণ তারা অদম্য, অপ্রতিরোধ্য। পাহাড়ের এত এত প্রশাসন তাদের কাছে নস্যি। কোন বাহিনী তাদের দেখতে পায় না। দেশের কোন আইন তাদের স্পর্শ করতে পারেনা। তারা ধর্ষকরাজ। তারা সকল প্রকার বিচারের উর্ধে।

এদিকে বিশিষ্ট কন্ঠশিল্পী ফারজানা ওয়াহিদ শায়ান তাঁর ব্যক্তিগত ফেসবুক পেইজে ক্ষোভ জানিয়ে একটি ভিডিও পোষ্ট করেন। উক্ত ভিডিও পোষ্টের ক্যাপশনে তিনি লিখেন যে, আমাদের একটি মেয়ে ধর্ষণ হলো পাহাড়ে। রাষ্ট্র তার জন্য নিরাপদ কোন পরিবেশ দিতে পারেনি। প্রশাসনে আমাদের আস্থা দিনকে দিন কমে গেল। আর নাগরিক সমাজ, তার অংশ হিসেবে আমরা যারা খানিকটা আওয়াজ তুলতে ভালোবাসি, তারাও পাহাড়ের বিষয়ে অনাগ্রহী অনেকেই।
তিনি আরো লিখেন, বাংলাদেশের পাহাড় অঞ্চলের মানুষদের আমরা শহরের মানুষেরা অনেক অবহেলা করেছি। এক ধরণের বিচ্ছিন্নতার মধ্যে দিয়ে আমরা বড় হয়েছি। আদিবাসী মানুষদের জীবনের সঙ্গে আমাদের ব্যবধান রয়েছে শুধু জীবনাচরণগত নয়, প্রাণেও।

এদিকে বাংলাদেশ আদিবাসী নারী নেটওয়ার্কের সদস্য সচিব চঞ্চনা চাকমা তাঁর ব্যক্তিগত ফেসবুক ওয়ালে ক্ষোভ জানিয়ে লিখেন, কুকুর নিধন না করে , ধর্ষক নিধন করুন ।পার্বত্য চট্টগ্রামের জুম্ম নারী ধর্ষণ এটি পুরুষতন্ত্র নয়, এটি একটি জাতিগত নিধনযজ্ঞ ।পার্বত্য চট্টলায় আদিবাসী নারী ধর্ষণ মানে পদ্ধতিগত দমন পীড়নের অংশ বলেও দাবী করেন এই নারী নেত্রী।

এভাবে বিভিন্ন স্তরের মানুষ, মানবাধিকার কর্মী থেকে শুরু করে প্রগতিশীল ব্যক্তিবর্গ উক্ত ঘটনার প্রতিবাদে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ক্ষোভ জানান।তবে সবার ক্ষোভ প্রকাশের মূলে রয়েছে আদিবাসী নারী ধর্ষণের ঘটনায় বিচার না পাওয়ার হতাশা ।

উল্লেখ্য গত ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২০ বৃহষ্পতিবার আনুমানিক ভোর আড়াইটার দিকে খাগড়াছড়ি সদরে ১ নং গোলাবাড়ি ইউনিয়ন সংলগ্ন বলপিয়ে আদাম নামক গ্রামে নিজ বাড়িতে ৯ জন বাঙালী কর্তৃক মানসিক প্রতিবন্ধী এক জুম্ম নারীকে গণধর্ষণ এবং বাড়ী লুটপাটের জঘন্য ঘটনা ঘটায়।গত বৃহষ্পতিবার আনুমানিক আড়াইটার সময় ৯ জনের একদল সেটেলার দা-ছুরি সহ দেশীয় অস্ত্র সস্ত্রে সজ্জিত হয়ে তাদের বাড়ির দরজা ভেঙে প্রবেশ করে। বাড়িতে ঢুকতে প্রথমে মা বাধা দেয়ার চেষ্টা করলে ভুক্তিভোগী জুম্ম নারী, মাকে সহ বুড়ো বাবাকে দড়ি দিয়ে বাধে। এরপর মা-বাবাকে আলাদা একটি রুমে দরজা বন্ধ করে রাখে। পরে ওই জুম্ম নারীটিকে আরেকটি রুমে নিয়ে গিয়ে পালাক্রমে গণধর্ষণ করে।দুর্বত্তরা যাওয়ার আগে বাড়ি থেকে নগদ ৮,০০০/- ( আট হাজার) টাকা ও স্বর্ণালঙ্কার লুট করে নিয়ে যায়। যা প্রায় দেড় লক্ষ টাকার সমান।

Back to top button