জাতীয়

ক্রীড়ার মধ্য দিয়েই আমাদের সংহতি জোরদার করতে হবেঃ টুর্নামেন্ট উদ্ধোধনকালে নিরূপা দেওয়ান

আইপিনিউজ, রাঙ্গামাটিঃ: ক্রীড়ার মধ্য দিয়েই আমাদের সংহতি জোরদার করতে হবে। ড. রামেন্দু শেখর দেওয়ানের আদর্শকে তরুণদের মধ্যে ছড়িয়ে দিতে হবে। এভাবেই আমাদের অধিকারের কথা তুলে ধরতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও রাঙ্গামাটি জেলা মহিলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক নিরূপা দেওয়ান। পাহাড়ের জুম্ম জনগণের আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে আজীবন সংগ্রামী ড. রামেন্দু শেখর দেওয়ান (ড. আর এস দেওয়ান) স্মরণে পার্বত্য জেলা রাঙ্গামাটি শহরে গতকাল থেকে আয়োজিত ড. রামেন্দু শেখর দেওয়ান স্মৃতি ফুটবল টুর্নামেন্ট-২০২৪ এর উদ্ধোধক হিসেবে বক্তব্য রাখতে গিয়ে তিনি একথা বলেন।

ড. রামেন্দু শেখর দেওয়ান স্মৃতি ফুটবল টুর্নামেন্ট আয়োজক কমিটি-২০২৪-এর উদ্যোগে রাঙাপানি এলাকার কান্ত চাকমা স্মৃতি খেলার মাঠে এই টুর্নামেন্ট অনুষ্ঠিত হয়। গতকাল বিকাল ৩ টায় কান্ত চাকমা স্মৃতি খেলার মাঠে এই অনুষ্ঠান আয়োজিত হয়। টুর্নামেন্ট আয়োজক কমিটির সদস্য সচিব জিকো চাকমার সঞ্চালনায় এবং আহ্বায়ক জুয়েল চাকমা’র সভাপতিত্বে এতে অতিথি হিসেবে আরো উপস্থিত ছিলেন পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদের চেয়ারম্যান জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় লারমা, বিশিষ্ট সঙ্গীত শিল্পী রঞ্জিত দেওয়ান, ডা: গঙ্গামানিক চাকমা, বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলের সভাপতি ও অবসরপ্রাপ্ত উপ-সচিব প্রকৃতি রঞ্জন চাকমা, বিশিষ্ট কবি ও শিক্ষাবিদ শিশির চাকমা। এছাড়াও উক্ত উদ্ধোধনী অনুষ্ঠানে প্রগতিবাদী শিক্ষক, বুদ্ধিজীবী, প্রথাগত প্রতিষ্ঠান ও সুশীল সমাজের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

উদ্ধোধনী ম্যাচের খেলোয়ারবৃন্দ। ছবি: আন্তনী রেমা।

উক্ত অনুষ্ঠানে শুভেচ্ছা বক্তব্যে আয়োজনটির আহ্বায়ক জুয়েল চাকমা বলেন, এ টুর্নামেন্টটি নিছক কোনো খেলা হিসেবে দেখলে হবে না। আমরা এই টুর্নামেন্টের মধ্য দিয়ে ড. আর এস দেওয়ানের অবদানকে স্মরণ করতে চাই। একই সাথে তাঁর আদর্শকে তরুণদের মধ্যে ছড়িয়ে দিতে চাই এবং তিন পার্বত্য জেলার ফুটবলে সম্ভাবনাময় খেলোয়ারদেরকে সামনে হাজির করতে এ টুর্নামেন্ট প্রয়াস চালাবে।

মোনঘর এর শিক্ষার্থীদের ডিসপ্লে এবং রাঙাপানি এলাকার এক ঝাঁক নৃত্যশিল্পীর নৃত্য পরিবেশনের মধ্য দিয়ে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানটি শুরু হয়।গত বছরও একই স্থানে এই ফুটবল টুর্নামেন্ট আয়োজন করা হয়, যা তিন পার্বত্য জেলার ক্রীড়ামোদীদের ব্যাপক সমাদর লাভ করে।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের পরপরই বিকাল ৪ টায় টুর্নামেন্টের ১ম রাউন্ডের উদ্বোধনী খেলা শুরু হয়। এতে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় আদিবাসী দল বনাম কাটাছড়ি জনকল্যাণ বহুমুখী সমিতি। এতে চবি আদিবাসী দল কাটাছড়ি জনকল্যাণ বহুমুখী সমিতি দলকে ৪-২ গোলে পরাজিত করে। আজ বিকাল ৩টায় প্রথম রাউন্ডের আরও খেলা শুরু হবে প্রতিদিন দুটি করে এবং চলবে মাসব্যাপী।

উদ্ধোধনী অনুষ্ঠানের ডিসপ্লে। ছবি: আন্তনী রেমা।

প্রথম রাউন্ডের অন্যান্য খেলাগুলি হল- ২ মার্চ বিকাল ৩ টায় ওল্ড ইজ গোল্ড বনাম বরকল একাদশ, বিকাল ৪:৩০ টায় রংখ্রে ডং একাদশ বনাম র‌্যাপিড বুল এফসি; ৩ মার্চ বিকাল ৩ টায় মাস্টারপাড়া একাদশ বনাম বিলাইছড়ি রাইখ্যং একাদশ, বিকাল ৪:৩০ টায় চেঙ্গী একাদশ বনাম নুও আদাম একাদশ; ৪ মার্চ বিকাল ৩ টায় ঝগড়াবিল একাদশ বনাম আমছড়ি একাদশ, বিকাল ৪:৩০ টায় ডিয়ার পার্ক বনাম রাঙ্গাপানি একাদশ; ৫ মার্চ বিকাল ৩ টায় হাজাছড়ি ইয়ং স্টার বনাম কুতুকছড়ি একাদশ, বিকাল ৪:৩০ টায় কাটাছড়ি জনকল্যাণ বহুমুখী সমিতি বনাম র‌্যাপিড বুল এফসি; ৬ মার্চ বিকাল ৩ টায় বরকল একাদশ বনাম আমছড়ি একাদশ, বিকাল ৪:৩০ টায় নুও আদাম একাদশ বনাম ডিয়ার পার্ক; ৮ মার্চ বিকাল ৪:৩০ টায় ওল্ড ইজ গোল্ড বনাম ঝগড়াবিল একাদশ; ১০ মার্চ বিকাল ৩ টায় বিলাইছড়ি রাইখ্যং একাদশ বনাম হাজাছড়ি ইয়ং স্টার, বিকাল ৪:৩০ টায় চ. বি আদিবাসী দল বনাম রংখ্রে ডং একাদশ; ১১ মার্চ বিকাল ৩ টায় চেঙ্গী একাদশ বনাম রাঙ্গাপানি একাদশ, বিকাল ৪:৩০ টায় মাস্টারপাড়া একাদশ বনাম হাজাছড়ি ইয়ং স্টার; ১২ মার্চ বিকাল ৩ টায় বরকল একাদশ বনাম ঝগড়াবিল একাদশ, বিকাল ৪:৩০ টায় রংখ্রে ডং একাদশ বনাম কাটাছড়ি জনকল্যাণ বহুমুখী সমিতি; ১৩ মার্চ বিকাল ৩ টায় নুও আদাম একাদশ বনাম রাঙ্গাপানি একাদশ, বিকাল ৪:৩০ টায় বিলাইছড়ি রাইখ্যং একাদশ বনাম কুতুকছড়ি একাদশ; ১৪ মার্চ বিকাল ৩ টায় চেঙ্গী একাদশ বনাম ডিয়ার পার্ক, বিকাল ৪:৩০ টায় ওল্ড ইজ গোল্ড বনাম আমছড়ি একাদশ এবং ১৫ মার্চ বিকাল ৩ টায় মাস্টারপাড়া একাদশ বনাম কুতুকছড়ি একাদশ, বিকাল ৪:৩০ টায় চ. বি. আদিবাসী দল বনাম র‌্যাপিড বুল এফসি।

সাংস্কৃতিক পরিবেশনায় শিশু শিল্পীবৃন্দ। ছবি: আন্তনী রেমা।

উল্লেখ্য, ড. রামেন্দু শেখর দেওয়ান ছিলেন পার্বত্য চট্টগ্রামের অন্যতম এক মেধাবী ব্যক্তিত্ব, অত্যন্ত সম্ভাবনাময় বিজ্ঞানী, জুম্ম জনগণের আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকর প্রতিষ্ঠার আন্দোলনের আমৃত্যু আপোষহীন এক সংগ্রামী এবং বিশ্বের আদিবাসী মানুষের মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার প্রচার আন্দোলনের এক পথিকৃৎ নেতা। জীবনের এক পর্যায়ে ব্যক্তিগত যাবতীয় সুখ-স্বাচ্ছন্দ্যকে বিসর্জন দিয়ে জুম্ম জনগণের আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকার আন্দোলনের এক যুগসন্ধিক্ষণে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির আন্তর্জাতিক মুখপাত্র হিসেবে দায়িত্ব নেন তিনি, যে দায়িত্ব তিনি মৃত্যুর পূর্বমুহূর্ত পর্যন্ত প্রতিপালন করেন।
ছাত্রজীবনের শুরু থেকেই তিনি অসাধারণ মেধা ও উন্নত নৈতিক চরিত্রের পরিচয় দেন। তিনি ১৯৬২ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রসায়ন বিজ্ঞানে মাস্টার্স ডিগ্রী সম্পন্ন করেন। এরপর ১৯৬৮ সালে বৃত্তি নিয়ে লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে কুইন এলিজাবেথ কলেজ থেকে চার বছরের এমফিল গবেষণার কাজ সমাপ্ত করেন এবং ১৯৮০ সালে লন্ডনের সালফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রসায়নে ডিএইচডি ডিগ্রী অর্জন করেন।

সাংস্কৃতিক পরিবেশনায় মোনঘর উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। ছবি: আন্তনী রেমা।

তাঁর জন্ম ১৭ জানুয়ারি ১৯৩২ সালে খাগড়াছড়ির খবংপজ্যা নামক গ্রামে। তাঁর পিতার নাম রমেশ চন্দ্র দেওয়ান ও মাতার নাম চন্দ্রমুখী দেওয়ান। তাঁর মৃত্যু হয় ২০২১ সালের ২৯ মার্চ, ৮৯ বছর বয়সে যুক্তরাজ্যের ম্যানচেস্টার শহরে নিজের অ্যাপার্টমেন্টে। ব্যক্তিজীবনে তিনি ছিলেন অত্যন্ত সৎ, আন্তরিক, পরিশ্রমী, নৈতিক গুণাবলীসম্পন্ন, মানবিক ও মিতব্যয়ী। তাঁর দেশপ্রেম ও জাতিপ্রেম ছিল অতুলনীয়।

Back to top button