জাতীয়

কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সচেতন নাগরিক সমাজের নাগরিক সমাবেশ অনুষ্ঠিত

বাগদাফার্মের আদিবাসী-বাঙ্গালিদের হত্যা, লুট, নির্যাতন, উচ্ছেদের হোতাদের বিচার ও শাস্তি এবং ভূমি অধিকারের দাবিতে সচেতন নাগরিক সমাজের উদ্যোগে আজ ৬ ই ডিসেম্বর সকাল ১০টায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকায় নাগরিক সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে।

ঐক্য ন্যাপের সভাপতি বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ পঙ্কজ ভট্টাচার্য্য এর সভাপতিত্বে সমাবেশে বক্তব্য রাখেন বিশিষ্ট লেখক ও গবেষক সৈয়দ আবুল মকসুদ; বাংলাদেশ কলেজ-বিশ্ববিদ্যারয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি ড. নূর মুহাম্মদ তালুকদার; আইইডির নির্বাহী পরিচালক নুমান আহম্মদ খান; এএলআরডির নির্বাহী পরিচালক শামসুল হুদা; ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক রোবায়েত ফেরদৌস; জাতীয় আদিবাসী পরিষদের সভাপতি রবীন্দ্রনাথ সরেন; বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের সাধারণ সম্পাদক সঞ্জীব দ্রং; মুক্তিযোদ্ধা কোরবান আলী শরীফ; পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির কেন্দ্রীয় নেতা দীপায়ন খীসা; সাহেবগঞ্জ-বাগদা ফার্ম ভূমি উদ্ধার সংগ্রাম কমিটির সহ-সভাপতি ডা. ফিলিমন বাস্কে প্রমুখ। সমাবেশ সঞ্চালনা করেন আদিবাসী ছাত্র পরিষদের সভাপতি বিভূতি ভূষণ মাহাতো।

সমাবেশে সৈয়দ আবুল মকসুদ বলেন, আদিবাসী ও সংখ্যালঘুদের উপর সাম্প্রতিক সময়ে বারবার নির্যাতন-নিপীড়ণ চললেও সরকার এখনো এসব বিষয়ে অনেকটাই নিশ্চুপ। সংবিধানিকভাবে এ দেশের সকল মানুষের সমানাধিকারের কথা বলা হলেও বাস্তবতা ভিন্নরকম। বাগদাফার্মের গরীব বাঙ্গালি ও আদিবাসীদের ন্যায্য দাবির বিপরীতে রাষ্ট্রীয় বাহিনী পুলিশ, বিজিবি ও চিনিকল কর্তৃপক্ষের সন্ত্রাসী বাহিনী তাদের উপর আক্রমণ করেছে ও হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছে।
তিনি এই ঘটনার এতদিন পরেও বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিশন গঠন না হওয়ায় হতাশা ব্যক্ত করেন এবং অবিলম্বে নাগরিক সমাজসহ সকলকে নিয়ে একটি উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত কমিশন গঠন করার দাবি জানান। পাশাপাশি বাগদাফার্মের হামলার ঘটনায় নিহত ও আহতদের উপযুক্ত ক্ষতিপূরণের দাবিও জানান।

সভাপতির বক্তব্যে পঙ্কজ ভট্টাচার্য বলেন, সাঁওতালসহ বাংলাদেশের সকল আদিবাসীরা এখনো আত্মসম্মানবোধ নিয়ে বেঁচে আছেন এবং থাকতে চান। সরকারী ত্রাণ ফিরিয়ে দিয়ে তারা এটা প্রমাণ করেছেন। তারা অর্থ চাননা মর্যাদা নিয়ে বেঁচে থাকতে চান। কিন্তু আমাদের রাষ্ট্র তাদের সম্মান সমুন্নত রাখতে ব্যার্থ হয়েছে। পাকিস্তান সরকার বাংলাদেশের জনগণের সাথে যে বেঈমানি করেছিল বর্তমান সরকারও আদিবাসী ও গরীব কৃষক মেহনতি মানুষের সাথে করছে।
তিনি আরো বলেন, মিল কর্তৃপক্ষ চুক্তির শর্ত লঙ্ঘন করে স্থানীয় প্রভাবশালীদের অর্থের বিনিময়ে বাগদা ফার্মের জমি লীজ দিয়েছিল এবং সেই অর্থ মিল কর্তৃপক্ষের উর্দ্ধতন কর্মকর্তারা নিজেদের মধ্যে ভাগ বাটোয়ারা করেছেন। স্থানীয় এমপি, চেয়ারম্যান, পুলিশ বাহিনী, মিল কর্তৃপক্ষ ও ভাড়াটে সন্ত্রাসীরা আদিবাসী-বাঙ্গালিদের উপর বর্বরোচিত হামলা করেও এখন পর্যন্ত বহাল তবিয়তে থাকার কঠোর সমালোচনা ও তাদের গ্রেফতারের দাবি জানান এবং বাগদাফার্মের গরীব কৃষক-আদিবাসীদের বাপ দাদার জমি ফেরতের দাবি জানান। প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে তিনি আরো বলেন, সরকার ও আওয়ামী লীগের মধ্যেই অনেক জামায়াত লুকিয়ে আছে। তাদের খুজে বের করতে প্রশাসন ও দলের মধ্যে শুদ্ধি অভিযান পরিচালনার আহ্বান জানান।

রবীন্দ্রনাথ সরেন বলেন, ১৯৬২ থেকে ২০১৬, দীর্ঘ ৫৪ বছর ধরে চিনি উৎপাদনের অজুহাতে রাষ্ট্র সাহেবগঞ্জ-বাগদাফার্মের ভূমিউদ্বাস্তু হাজারো মানুষের সাথে বর্ণবাদী অন্যায় করে চলেছে। এটি স্বাধীন রাষ্ট্রের সংবিধান, মানবিকতা ও আইন সবকিছুই লংঘন করে চলেছে এবং সর্বশেষ তাদের উপর ন্যাক্কারজনক হামলা চালিয়ে ৩ জনকে হত্যা ও অনেকইে আহত হয়ে এখনো খোলা আকাশের নিচে মানবেতর জীবন যাপন করছে। তিনি অনতিবিলম্বে এ ঘটনার বিচারবিভাগীয় সুষ্ঠু তদন্ত ও ন্যায়বিচারের দাবি জানান।
তিনি এই সমাবেশ থেকে বাগদাফার্মের ঘটনার প্রতিবাদ ও ভূমির অধিকারের দাবিতে আগামী ৬ জানুয়ারি ২০১৭ তারিখে রংপুরে আদিবাসী-বাঙ্গালিদের বিভাগীয় সমাবেশ এর ঘোষনা দেন।

সমাবেশ থেকে বক্তারা নিম্নোক্ত দাবি জানান:

১. সাহেবগঞ্জ-বাগদাফার্মে হামলার ঘটনায় বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি গঠন করে সুষ্ঠু বিচার নিশ্চিত করতে হবে;
২. সাহেবগঞ্জ-বাগদাফার্মে সংঘঠিত সকল মানবাধিকার লংঘনের ঘটনার সাথে জড়িতদের আইনের আওতায় এনে ঘটনার সাথে জড়িত স্থানীয় সরকার প্রতিনিধি, সাংসদ, প্রশাসন ও চিনিকল কর্তৃপক্ষকে দ্রুত গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক বিচার করতে হবে;
৩. নিহত, আহত ও ক্ষতিগ্রস্থ সকল পরিবারকে ক্ষতিপূরণ ও পূর্ণ নিশ্চয়তাসহ আবারো তাদের নিজ বাসভূমে স্থায়ীভাবে বসবাসের নিশ্চয়তা দিতে হবে।
৪. সম্পূর্ণ সুস্থ না হওয়া পর্যন্ত আহত ও ক্ষতগ্রিস’দের চিকিৎসার সার্বিক দায়-দায়িত্ব সরকারকে নিতে হবে।
৫. সকল মিথ্যা ও বানোয়াট মামলা বাতিল করতে হবে।
৬. আখ চাষের নামে অধিগ্রহণকৃত ১৮৪২.৩০ একর বাপ-দাদার জমিতে আদিবাসী ও প্রান্তিক বাঙালি কৃষকদের আইনগতভাবে রেস্টোরেশনের মাধ্যমে জমি ফেরত দেয়ার ব্যবস্থা করতে হবে।
৭. আদিবাসীদের লাগানো ধান ও শস্য ফসল কাটা, পবাদি পশু চরানো এবং যাতায়াত কোনো ভাবেই কাঁটাতারের বেড়া দিয়ে বিঘ্ন তৈরি করা যাবে না। এলাকায় আদিবাসীদের নিরাপদে চলাচল নিশ্চিত করতে হবে।
৮. ফুলমনি মুরমু শিশু শিক্ষা ও সংস্কৃতিকেন্দ্র সরকারি খরচে নির্মাণ করতে হবে। আদিবাসী শিশুদের পুড়ে যাওয়া বই ও শিক্ষা উপকরণ সরকারি খরচে বরাদ্দ করতে হবে। আদিবাসী শিশুদের নির্বিঘ্নে স্কুলে আসার পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে।
৯. এলাকায় আদিবাসী-বাঙালি সম্প্রীতি বিনষ্ট করবার চক্রান্ত রুখতে হবে। যাতে কেউ এলাকায় কোনো ধরণের হামলা বা জবরদখলের ঘটনা না ঘটাতে পারে এজন্য প্রশাসনকে যথেষ্ট নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।
১০. সমতলের আদিবাসীদের ভূমি সংকট নিরসনে স্বাধীন ভূমি কমিশন গঠন করতে হবে।

Back to top button