কুলাউরায় আদিবাসী নারী ও যুব সম্মেলন অনুষ্ঠিত
সিলেটের কুলাউড়ায় ইন্ডিজিনাস পিপলস ডেভলপমেন্ট সাভির্সেস এর আয়োজনে নিজস্ব সভাকক্ষে ১০ মে ২০১৬ স্থানীয় পর্যায়ে আদিবাসী নারী ও যুব কনফারেন্স অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানে প্রধান আলোচক ছিলেন আদিবাসী নেতা জিডিসন সুচিয়াং প্রধান। আদিবাসী নেত্রী ও কুবরাজ আন্তঃপুঞ্জি উন্নয়ন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক ফ্লোরা বাবলী তালাং এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন তুলি লাবণ্য ম্রং, রিপন চন্দ্র বানাই, মৌরি বর্না দ্রং এবং অফিস ইনচার্জ অরিজেন খংলা । অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন জয়ন্ত লরেন্স রাকসাম।
স্বাগত বক্তব্য প্রদান করেন অফিস ইনচার্জ অরিজেন খংলা। তিনি বলেন, আই.পি.ডি.এস অত্র এলাকায় আদিবাসী ও যুবদের উন্নয়ন এবং ক্ষমতায়নের লক্ষ্যে বিভিন্ন টেকসই কার্যক্রম বাস্তবায়ন করেছে। তার মধ্যে ১৬টি পুঞ্জিতে নারী ও যুব সংগঠন প্রতিষ্ঠা অন্যতম। পাশাপাশি তাদের সক্ষমতা ও দক্ষতা অর্জনের লক্ষ্যে বিভিন্ন ধরনের প্রশিক্ষণে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। ফলে তাদের মধ্যে একধরনের সচেতনতা বৃদ্ধি পেয়েছে।
আদিবাসী নারী ও যুব কনফারেন্স -এর মূলসুর ছিল “ আদিবাসী যুব সমাজঃ আগামীর সম্ভাবনা” । এই বিষয়ে ধারণাপত্র উপস্থাপন করে রিপনচন্দ্র বানাই বলেন, তরুণদের নিজেদের উদ্যোগে স্বেচ্ছাশ্রম ও ত্যাগ স্বীকারের মাধম্যে সমাজ উন্নয়নমূলক কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা সম্ভব।
প্রোগ্রাম কো-অর্ডিনেটর তুলি লাবণ্য ম্রং নারীর উন্নয়ন ও ক্ষমতায়নের উপর আলোচনা করেন। তিনি বলেন, আদিবাসী নারীর অধিকার ও ক্ষমতায়নের লক্ষ্যে আমাদেরই কাজ করতে হবে। বিভিন্ন প্রতিকূলতা সত্বেও আদিবাসী নারীরা সামনে এগিয়ে যাওয়ার জন্য চেষ্টা করছেন। অর্থনৈতিক উন্নয়ন, সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা এবং যোগাযোগ ও নেটওয়ার্কিং তৈরীর মত চ্যালেঞ্জ অতিক্রম করে আদিবাসী নারী একটা পর্যায়ে পৌঁছাতে চেষ্টা করছেন।
প্রধান আলোচক জিডিসন প্রধান সুচিয়াং বলেন, তিনি তরুণদের সাথে কাজ করতে উৎসাহিত বোধ করেন। তরুণরা সৃষ্টিশীল, সৃজননশীল কাজের উৎসদাতা। তারা মেধাবী। উপযুক্ত সুযোগ সুবিধা ও ক্ষেত্র পেলে আদিবাসী তরুণরা মানবকল্যাণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালনে সক্ষম হবেন। অধিকার প্রতিষ্ঠায় আদিবাসী তরুণদের চ্যালেঞ্জ গ্রহণের সক্ষমতা অর্জন করতে হবে। জ্ঞান,তথ্য এবং কথা বলার কৌশল জানা না থাকলে অধিকার আদায়ের অভিষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছানো যাবে না। সমালোচনাকে ইতিবাচক নেওয়ার মানসিকতা থাকতে হবে। তিনি আরো বলেন, তরুণ প্রজম্মকে শিক্ষিত হতে হবে। সংগঠিত হয়ে অধিকার প্রতিষ্ঠার কাজ করতে হবে। আদিবাসী সমাজ বিভিন্ন ধরনের শোষণ বঞ্চনার শিকার। এই ঐতিহাসিক শোষণ বঞ্চনার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর পথে প্রথমে এখনাকার আদিবাসী গারো, খাসি, মনিপুরী, উঁরাও এবং চা জনগোষ্ঠীর তরুণদেরই প্রথমে এগিয়ে আসতে হবে।
অনুষ্ঠানের সভাপতি ফ্লোরা বাবলী তালাং বলেন, এই ধরনের আদিবাসী নারী ও যুব কনফারেন্সের ফলে আদিবাসী যুস সমাজ আদিবাসী জনগণের সমস্যা, উন্নয়ন এবং তরুণদের দৃষ্টিভঙ্গি সম্পর্কে জানতে পারবে। আদিবাসী জীবনধারা, ঐতিহ্য এবং ভূমির অধিকার সম্পর্কে মানুষের ভ্রান্ত ধারনা আছে। এই ভ্রান্ত ধারনার অবসান ঘটানো শিক্ষিত, সচেতন ও দুরদর্শি আদিবাসী তরুণ সমাজের দ্বারাই সম্ভব। তিনি আরো বলেন আদিবাসীদের অধিকার ও মানবাধিকার প্রতিষ্ঠায় তরুণ সমাজকেই অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে। পাশাপাশি আদিবাসী মানুষের দায়িত্ব কর্তব্য হলো নিজেদে কৃষ্টি, সংস্কৃতি এবং ঐতিহ্য অন্যান্য জাতিগোষ্ঠীর মানুষের কাছে তুলে ধরা তরুণদের অন্যতম প্রধান কাজ বলে তিনি অভিমত প্রকাশ করেন।