জাতীয়

কুয়াকাটায় শ্রীমঙ্গল বৌদ্ধ বিহারের ভূমি দখলের ঘটনায় ৪৪ বিশিষ্টজনের উদ্বেগ

আইপিনিউজ ডেক্স(ঢাকা): পটুয়াখালীর কুয়াকাটা বৌদ্ধ বিহারের জমিতে পাবলিক টয়লেট স্থাপনের ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন দেশের ৪৪ জন বিশিষ্ট নাগরিক।  কুয়াকাটা শ্রীমঙ্গল বৌদ্ধ বিহারের সত্ত্ব দখলীয় ভূমিতে উচ্চ আদালতের নির্দেশনা অমান্য করে কুয়াকাটা পৌরসভা কর্তৃক পাবলিক টয়লেট নির্মান কাজের ঘটনায় গভীর উদ্বেগ জানিয়ে ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদও জানিয়েছেন তাঁরা । আজ এক বিবৃতির মাধ্যমে এই উদ্বেগ জানান বিশিষ্টজনরা।

একই সাথে বিষয়টিকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে ঘটনার দ্রুত ও সুষ্ঠু তদন্ত করে বৌদ্ধ বিহারের জমির পরিবর্তে অন্য স্থানে পাবলিক টয়লেট স্থানান্তর করার জোর দাবি জানিয়ে বলেছেন, আমরা গভীর ক্ষোভ ও উদ্বেগের সাথে জেনেছি যে, কুয়াকাটার কেরানীপাড়া সংলগ্ন ঐতিহ্যবাহী প্রাচীন শ্রীমঙ্গল বৌদ্ধ বিহার- এর স্বত্ত্ব দখলীয় ২.৪৪ একর ভূমিতে যা তৎকালীযন খেপুপাড়া কোলোনাইজেশন অফিসার বিগত ১৭/১২/১৯৪৬ ইং তারিখে সম্পাদিত ও ০৭/১১/১৯৪৭ তারিখে রেজিষ্ট্রিকৃত ০৯ নং চুক্তিপত্র দলিলের মাধ্যমে বৌদ্ধ বিহার নির্মানের জন্য কেরানীপাড়র মগগন- এর পক্ষে পাড়া মাদবর নোলাউ মগ বরাবরে এ জমির দখল বুঝিয়ে দেয় এবং এ দলিল মূলে শ্রীমঙ্গল বৌদ্ধ বিহার কর্তৃপক্ষ এর মালিকানা লাভ করে। কিন্তু অত্যন্ত আশ্চর্যের বিষয় বৌদ্ধ বিহারের দখলীয় রাখাইন মার্কেট সংলগ্ন ভূমিতে কুয়াকাটা পৌরসভা কর্তৃপক্ষ পাবলিক টয়লেট নির্মানের সেই জায়গাটিকেই বেছে নেয়। এর আগে এখানে কোন স্থাপনা নির্মান না করার জন্য বৌদ্ধ বিহার কর্তৃপক্ষ কর্তৃক উচ্চ আদালতে রীট আবেদন করলে উচ্চ আদালত এখানে স্থগিতাদেশ দেন। এই আদেশের কপি প্রদর্শন করে তারা আপত্তি জানালে পৌরসভা কর্তৃপক্ষ কাজ বন্ধ করে। কিন্তু ২৪/০২/২০২৪ তালিখ রাত আনুমানিক ৮টার দিকে দ্রুত গতিতে সবার অগোচরে অনেক শ্রমিক দ্বারা পাবলিক টয়লেটের ছাদ ঢালাই এর কাজ শেষ করে ফেলে।

কুয়াকাটা শ্রীমঙ্গল বৌদ্ধ বিহারের দেয়াল ভেঙ্গে পাবলিক টয়লেটের কাজ তাদের হতভম্ব করে ফেলে দাবি করে বিশিষ্টজনরা আরো বলেন, এই ব্যাপারে পৌরসভা কর্তৃপক্ষ কখনই বৌদ্ধ বিহার কর্তৃপক্ষের সাথে কোন আলোচনা করারও প্রয়োজন মনে করেনি। যদিও বাংলাদেশ সংবিধানের মৌলিক অধিকার ভাগে ৪১(১) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে- “প্রত্যেক নাগরিকের যে কোন ধর্ম অবলম্বন, পালন বা প্রচারের অধিকার রহিয়াছে”; এবং ৪১(২) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে- “প্রত্যেক ধর্মীয় সম্প্রদায় ও উপ-সম্প্রদায়ের নিজস্ব ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের স্থাপন, রক্ষণ ও ব্যবস্থাপনার অধিকার রহিয়াছে”। এমন অসাংবিধানিক নিপীড়নমূলক ও সাম্প্রদায়িক মনোভাব সম্পন্ন কাজ কোনভাবেই মেনে নেয়া যায়না।

এলাকার উন্নয়ন কাজ হবে, তা খুবই ভাল কথা, তাই বলে বৌদ্ধ বিহারের মতো পবিত্র স্থানে পাবলিক টয়লেট স্থাপন কখনই সমর্থনযোগ্য নয় উল্লেখ করে বিবৃতিদাতারা আরো বলেন, এই কাজটি ধর্মীয় উস্কানী বা সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর ধর্মের অবমাননার সামিল ব্যতিত অন্য কিছু নয়। কুয়াকাটা পৌরসভা এলাকায় তাদের অনেক জমি থাকা সত্ত্বেও বৌদ্ধ বিহারের মতো পবিত্র স্থানে পাবলিক টয়লেট স্থাপন উদ্দেশ্য প্রণোদিত এবং সংখ্যালঘু রাখাইন সম্প্রদায়কে তাদের জায়গা থেকে উচ্ছেদের চেষ্টারই সুস্পষ্ট নামান্তর। আমরা এ ঘটনার জন্য তীব্র ক্ষোভ ও নিন্দা জানাচ্ছি। পাশাপাশি আমরা মনে করি এ ঘটনার দায় স্থানীয় প্রশাসন কখনও এড়াতে পাারেনা।

বিবৃতিদাতারা আরো বলেন, আমরা জানতে পেরেছি যে, দেরিতে হলেও পটুয়াখালি জেলা প্রশাসক ইতোমধ্যে এ কাজ বন্ধের নির্দেশনা দিয়েছেন এবং পাশাপাশি কলাপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে নির্মান কাজ বন্ধের ব্যবস্থা নিতে বলেছেন। আমরা তাদের এ সিদ্ধান্তকে সাধুবাদ জানাচ্ছি। পাশাপাশি কেন বৌদ্ধ বিহারের দেয়াল ভেঙ্গে এবং উচ্চ আদালতের স্থগিতাদেশ অমান্য করে পাবলিক টয়লেট স্থাপন করার চেষ্টা করা হলো তার সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্ত করে এ ঘটনার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের আইনের আওতায় এনে কঠিন শাস্তির দাবি জানাচ্ছি।

বিবৃতিতে স্বাক্ষরকারীরা হলেন- ১. সুলতানা কামাল, মানবাধিকার কর্মী ও চেয়ারপার্সন, মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশন ২. খুশী কবির, সমন্বয়কারী, নিজেরা করি ও চেয়ারপার্সন, এএলআরডি ৩. অ্যাডভোকেট জেড আই খান পান্না, সভাপতি, আইন ও সালিশ কেন্দ্র ও আইনজীবী, বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্ট ৪. রাাশেদা কে. চৌধুরী, নির্বাহী পরিচালক, গণ স্বাক্ষরতা অভিযান ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ৫. অ্যাডভোকেট রাণা দাশগুপ্ত, সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ ৬. অ্যাডভোকেট সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, প্রধান নির্বাহী, বেলা ও আইনজীবী, বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্ট ৭. ড. পারভীন হাসান, ভাইস চ্যান্সেলর, সেন্ট্রাল উইম্যান ইউনিভার্সিটি ৮. শিরিন হক, সদস্য, নারীপক্ষ ৯. ড. ইফতেখারুজ্জামান, নির্বাহী পরিচালক, টিআইবি ১০. ড. ফস্টিনা পেরেরা, আইনজীবী, বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্ট ১১. অ্যাড. সালমা আলী, নির্বাহী পরিচালক, বিএনডব্লিউএলএ ১২. শারমিন মুরশিদ, প্রধান নির্বাহী, ব্রতী ১৩. ব্যারিস্টার সারা হোসেন, অনারারি নির্বাহী পরিচালক, ব্লাস্ট ১৪. রোবায়েত ফেরদৌস, অধ্যাপক, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ১৫. সুব্রত চৌধুরী, সিনিয়র আইনজীবী, বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্ট ১৬. কাজল দেবনাথ, প্রেসিডিয়াম সদস্য, বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ ১৭. তবারক হোসেইন, সহ-সভাপতি, সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলন ও আইনজীবী, বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্ট ১৮. ড. মোহাম্মদ তানজিম উদ্দিন খান, অধ্যাপক, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ১৯. সারা হোসেন, অনারারি নির্বাহী পরিচালক, ব্লাস্ট ২০. ড. শহিদুল আলম, আলোকচিত্রী ও সমাজকর্মী ২১. মনিন্দ্র কুমার নাথ, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ ২২. শামসুল হুদা, নির্বাহী পরিচালক, এসোসিয়েশন ফর ল্যান্ড রিফর্ম এ্যান্ড ডেভলপমেন্ট (এএলআরডি) ২৩. তাসনীম সিরাজ মাহবুব, সহযোগী অধ্যাপক, ইংরেজি বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ২৪. ফিরদৌস আজিম, অধ্যাপক, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয় ২৫. রাহনুমা আহমেদ, কবি ও লেখক ২৬. রেজাউল করিম লেনিন, গবেষক ও মানবাধিকার কর্মী ২৭. ড. সুমাইয়া খায়ের, অধ্যাপক, আইন বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ২৮. বীনা ডি’ কস্টা, অধ্যাপক, অস্ট্রেলিয়া ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি ২৯. ড. স্বপন আদনান, ভিজিটিং রিসার্স ফেলো, অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় ৩০. সাঈদিয়া গুলরুখ, সাংবাদিক ৩১. সঞ্জীব দ্রং, সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরাম ৩২. সায়মা খাতুন, নৃতত্ত্ববিদ, প্রাক্তন সহযোগি অধ্যাপক, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ৩৩. অধ্যাপক সামিনা লুৎফা, সমাজবিজ্ঞান বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ৩৪. জাকির হোসেন, নির্বাহী পরিচালক, নাগরিক উদ্যোগ ৩৫. মো: নুর খান লিটন, মানবাধিকার কর্মী ৩৬. ব্যারিস্টার আশরাফ আলী, আইনজীবী, বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্ট ৩৭. অ্যাড. মিনহাজুল হক চৌধুরী, আইনজীবী, বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্ট ৩৮. ব্যারিস্টার শুভ্র চক্রবর্তী, আইনজীবী, বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্ট ৩৯. ব্যারিস্টার শাহাদাত আলম, আইনজীবী, বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্ট ৪০. দীপায়ন খীসা, কেন্দ্রিয় সদস্য, বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরাম ৪১. জোবাইদা নাসরীন কণা, সহযোগী অধ্যাপক, নৃবিজ্ঞান বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ৪২. পল্লব চাকমা, নির্বাহী পরিচালক, কাপেং ফাউন্ডেশন ৪৩. হানা শামস আহমেদ, আদিবাসী অধিকার কর্মী ৪৪. মুক্তাশ্রী চাকমা, কোর গ্রুপ মেম্বার, সাঙ্গাত।

Back to top button