জাতীয়

কুকি-চীন তো এমনে এমনে হয় নি, তৈরী করা হয়েছে: রাশেদ খান মেনন

আইপিনিউজ ডেক্স(ঢাকা): “কুকি-চীন তো এমনে এমনে হয় নি। কুকী-চীন তৈরী করা হয়েছে। এখন বিড়াল বাঘ হয়ে গেছে।” আজ (৩ আগস্ট) বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদ এর পার্লামেন্টারি ক্লাব মিলনায়তনে এক গোলটেবিল বৈঠকে একথা বলেন বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি বর্ষীয়ান রাজনীতিক রাশেদ খান মেনন। আসন্ন ৯ই আগস্ট, আন্তর্জাতিক আদিবাসী দিবস- ২০২৩ উপলক্ষ্যে আদিবাসী ও সংখ্যালঘু বিষয়ক সংসদীয় ককাস এর উদ্যেগে “বহুত্ববাদ, বৈচিত্র্য ও আদিবাসী অধিকার” শীর্ষক এই গোলটেবিল বৈঠক অনুষ্ঠিত হয় ।

রাশেদ খান মেনন বলেন,“পৃথিবীব্যাপী বহুত্ববাদের ধারণা সংকুচিত হয়ে আসছে। পার্বত্য চট্টগ্রামের বাস্তবতায় জিয়াউর রহমান এই বহুত্ববাদী সমাজ ধারণার বিপরীতে একীভূতকরণের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছিলেন যা সঠিক ছিল না।”

আদিবাসী ও সংখ্যালঘু বিষয়ক সংসদীয় ককাস এর আহবায়ক ফজলে হোসেন বাদশা এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এ আলোচনায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মাননীয় মন্ত্রী জনাব আ. ক. ম. মোজাম্মেল হক এমপি। এছাড়াও বিশেষ অতিথি হিসেবে বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি বর্ষীয়ান রাজনীতিক রাশেদ খান মেনন এমপি ছাড়াও বক্তব্য রাখেন বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটন বিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী এমপি, আ. ক. ম ফজলুল হক এমপি, আরমা দত্ত এমপি, ইউএনডিপি-র সহকারি আবাসিক প্রতিনিধি বাবু প্রসেনজিৎ চাকমা প্রমুখ।

এসময় প্রধান অতিথির বক্তব্যে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ আন্তরিকতায় শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্য নিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছিল। যে চুক্তি হয়েছে সে অনুযায়ী কাজ করা গেলে নিশ্চয়ই শান্তি প্রতিষ্ঠা সম্ভব। কিন্তু দুখ:জনক হলেও সত্য যে, চুক্তি বাস্তবায়িত হয় নি। পার্বত্য এলাকা আরো বড় সংঘাতের দিকে গেলে তা দেশের জন্য সুখকর হবে না, তা শুভ লক্ষণ নয়।
তিনি আরো বলেন, ৮০-র দশকে জিয়াউর রহমানের উদ্যাগে যে সেটেলার বাঙালিদের পার্বত্য এলাকায় পুনর্বাসন করা হয়েছিল তার উদ্দেশ্য টা ভালো ছিল না, কাজটা ভালো ছিল না। বিভিন্ন সুযোগ- সুবিধার প্রলোভন দেখিয়ে উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে সেখানে পুনর্বাসন কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়েছে। কাজেই এখন দেখতে হবে সেখানকার স্থানীয় অধিবাসীরা যেন অধিকার বঞ্চিত না হয়।

গোলটেবিল আলোচনায় উপস্থিত অংশগ্রহনকারীরা।

বিশেষ অথিতির বক্তব্যে র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী এমপি বলেন, শান্তিচুক্তির সময় আমি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর একান্ত সচিব ছিলাম। আমার মনে হয়, চুক্তি কালীন সময়ে যে একটা আস্থার সম্পর্ক ছিল, সেটা এখন অনেকাংশে কমে গেছে। এই আস্থার সম্পর্ক টা ফিরিয়ে আনতে হলে উভয় পক্ষকে এগিয়ে আসতে হবে। আমার মনে হয় না যে, পার্বত্য চুক্তির কোন একটি ধারাও অবাস্তবায়নযোগ্য।

আ. ক. ম ফজলুল হক এমপি বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামের আদিবাসীদের তুলনায় সমতল অঞ্চলের আদিবাসীদের অবস্থা অত্যন্ত নাজুক। এখানে অনেকেই জমি হারাচ্ছেন। সমতল ভূমির আদিবাসীদের জন্য একটি পৃথক ভূমি কমিশন গঠন করা উচিত।

আরমা দত্ত এমপি বলেন, ৭৫ পরবর্তী সময়ে সামরিকায়নকে একধরনের প্রাতিষ্ঠানিকীকরণ করা হয়েছে। এটা লজ্জাজনক যে, পার্বত্য চট্টগ্রামে একরের পর একর ভূমি বেদখল হয়ে যাচ্ছে।

আলোচনা সভায় মূল ধারণাপত্র উপস্থাপন করেন আদিবাসী ও সংখ্যালঘু বিষয়ক সংসদীয় ককাস এর সমন্বয়ক অধ্যাপক ড: মেসবাহ কামাল। তিনি বলেন, বৈচিত্রকে অস্বীকার করে যখনই একীকরণ করার চেষ্টা করা হয়, তখন সমস্যার সৃষ্টি হয়। সারা পৃথিবীতে কম করে হলেও ৩৭ কোটি আদিবাসী রয়েছে। পৃথিবীর ৮০ ভাগ জীববৈচিত্রই রক্ষা করেছে আদিবাসীরা। তিনি আরো বলেন, “বহুত্ব, বৈচিত্রকে স্বীকার করতে হবে। পৃথিবী আজ অনেক এগিয়েছে। কারো অস্তিত্ব অস্বীকার করে অগ্রগতি নিশ্চিত করা যেতে পারে না।”

আলোচনায় অংশ নিয়ে সিনিয়র সাংবাদিক আবু সাইদ খান বলেন, এদেশের সংবিধান রচনার সময়ে আমরা বৈচিত্রকে স্বীকার করতে পারি নি। পঞ্চদশ সংশোধনীতে আদিবাসীদের অন্তর্ভূক্ত করার সুযোগ ছিল, কিন্তু তা ও করা হয় নি।

সভায় অন্যান্যের মধ্যে আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন ইউএনডিপির সহকারি আবাসিক প্রতিনিধি প্রসেনজিৎ চাকমা, কাপেং ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক পল্লব চাকমা, আদিবাসী নেত্রী হেলেনা তালাং, নমিতা চাকমা, পার্বত্য চট্টগ্রাম জুম্ম শরণার্থী কল্যাণ এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক সন্তোষিত চাকমা বকুল, বাংলাদেশ আদিবাসী কোচ সংগঠনের সভাপতি রমেশ কোচ, বাংলাদেশ রাজবংশী সমিতির সভাপতি সুভাষ চন্দ্র রাজবংশী প্রমুখ ব্যাক্তিবর্গ।

Back to top button