কাপ্তাইয়ের পাহাড়ে বড় ফাটলঃ আতঙ্কে স্থানীয় আদিবাসীরা
রাঙামাটির কাপ্তাইয়ে এক হাজার ফুটের বেশি উঁচু একটি পাহাড়ে বড় ফাটল দেখা দিয়েছে। পাহাড়ের প্রায় চূড়া থেকে নিচ পর্যন্ত পূর্ব-পশ্চিমে প্রায় ৭০০ ফুট দীর্ঘ ফাটল দেখা দেওয়ায় আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে স্থানীয় লোকজন। ফাটলের প্রস্থ কোথাও তিন ফুট, কোথাও বা চার ফুট। তাঁরা বলছেন, ফাটলের গভীরতা ১০০ ফুটের মতো হবে। স্থানীয়ভাবে পাহাড়টি ডুব তারেং মোন নামে পরিচিত।
গত ১৩ জুন প্রবল বৃষ্টিতে পাথুরে এই পাহাড়ের একাংশ ধসে পড়ে। এই পাহাড়ের নিচ দিয়ে বয়ে যাওয়া ছড়ার বেশির ভাগ অংশ ধসের সময় নেমে আসা পাথরখণ্ডে ভরে গেছে। এই ছড়ার দুই দিকে পাহাড়ের নিচে হাজারখানেক মানুষের বসতি রয়েছে, যা দেবতাছড়ি গ্রাম নামে পরিচিত। রাঙামাটি শহর থেকে ২২ কিলোমিটার দূরে কাপ্তাই উপজেলার ওয়াগ্গা ইউনিয়নে গ্রামটির অবস্থান। গ্রামের দুই কিলোমিটার দূরে রাঙামাটি-ঘাগড়া-কাপ্তাই সড়ক। ঘাগড়ার সড়ক থেকেও এই পাহাড়ের ওপরের দিকের বিশাল ভাঙন (১৩ জুন ভাঙনটি হয়) দেখা যায়।
১৩ জুনের পাহাড়ধসে এসব বাগানের ৪০ একর এলাকা বিধ্বস্ত হয়েছে। আবারও প্রবল বৃষ্টি বা মৃদু ভূমিকম্প হলে বড় বিপর্যয়ের আশঙ্কা করছেন গ্রামের হাজার খানেক বাসিন্দা।
দেবতাছড়ি গ্রামে তঞ্চঙ্গ্যা সম্প্রদায়ের লোকজন থাকে। প্রবীণ বাসিন্দা শান্তিময় তঞ্চঙ্গ্যা (৬৫) গণমাধ্যমকে বলেন, এর আগে ওই পাহাড়ে কখনো ফাটল দেখেননি তিনি। এবার পাহাড়ধসে যে আকারের পাথর ধসে পড়েছে, তা দেখে বিস্মিত তাঁরা। পাথরগুলো বিকট শব্দে ধসে পড়ছে। এখন ফাটল দেখে তাঁরা দুশ্চিন্তায় আছেন। গ্রাম ছেড়ে কোথাও যে যাবেন, সেই উপায়ও নেই।
পাহাড় ঘেঁষেই ছিল স্থানীয় বাসিন্দা ভাবনা তঞ্চঙ্গ্যার (৪৩) ফলের বাগান। চার একর জমিতে লিচু আর কাঁঠালগাছ লাগিয়েছিলেন তিনি। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, পুরো বাগান পাথরের নিচে চাপা পড়েছে। পাহাড়ের ফাটল দেখে তাঁরা আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন। তিনি বলেন, যেভাবে প্রতিদিন পাথর ভেঙে পড়ছে, তাতে তাঁর মনে হচ্ছে পাহাড়টি একদিন গ্রামের ওপর ভেঙে পড়বে।
কাপ্তাই উপজেলার ওয়াগ্গা ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য ও দেবতাছড়ি গ্রামের বাসিন্দা বিমল তঞ্চঙ্গ্যা সংবাদমাধ্যমকে বলেন, প্রতিদিন কারও না কারও বাড়ির সমনে পাথর ভেঙে পড়ার ঘটনা ঘটছে। গ্রামে আড়াই শয়ের বেশি পরিবার থাকে। সবাই ঝুঁকিতে রয়েছে।
চট্টগ্রাম ও পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলের পাহাড়গুলোতে উত্তর-দক্ষিণ প্রলম্বিত (বরাবর), পূর্ব-পশ্চিম বরাবর এবং আড়াআড়িভাবে ছোট-বড় অসংখ্য ফাটল (জয়েন্ট) রয়েছে বলে জানান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক সৈয়দ হুমায়ুন আখতার। তিনি বলেন, বহু বছর আগে থেকেই পাহাড়ে এসব ফাটল বিদ্যমান। ভূমিকম্প এবং অধিক বৃষ্টিপাতের কারণে এই ফাটলগুলো আলগা হয়ে গেছে।
কাপ্তাইয়ের ওই পাহাড়ের ফাটলের প্রভাব কী হতে পারে, তা সরেজমিনে ভূতাত্ত্বিক পরীক্ষার পর বলা যাবে বলে জানান অধ্যাপক হুমায়ুন আখতার। তিনি বলেন, ওই ফাটল আরও বড় হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ফলে পাহাড়ের ওপর থেকে বড় পাথর ও পাথরের টুকরো গড়িয়ে নিচের বসতিতে গিয়ে পড়তে থাকবে। যে কারণে পাহাড়ের নিচে থাকা মানুষকে দ্রুত নিরাপদ দূরত্বে সরিয়ে নেওয়া দরকার। নিরাপদ দূরত্ব পাহাড় থেকে কত দূরে হবে, তা ভূতাত্ত্বিক জরিপ করে বের করতে হবে।
তথ্যসূত্রঃ প্রথম আলো