জাতীয়

ঢাকায় কল্পনা চাকমা অপহরণ ও পরবর্তী ২০ বছর শীর্ষক মতবিনিময় সভা

১১ জুন ১০:৩০ এ জাতীয় প্রেসক্লাবের কনফারেন্স লাউঞ্জে মৌলিক অধিকার সুরক্ষা কমিটি ‘কল্পনা চাকমা অপহরণ ও পরবর্তী ২০ বছর’ শিরোনামে একটি মতবিনিময় সভা আয়োজন করে। এই অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন, বিশিষ্ট আইনবিদ ড. শাহদীন মালিক, ব্যারিস্টার সারা হোসেন, মানবাধিকার কর্মী নূর খান লিটন ও অধ্যাপক আবরার চৌধুরী। অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন বিশিষ্ট নারী ও মানববাধিকারকর্মী শিরিন হক। প্রাথমিক বক্তব্যে শিরিন হক মৌলিক অধিকার সুরক্ষা কমিটির কার্যক্রম তুলে ধরে বলেন, আজকের দিনে কথা বলা খুব কঠিন হয়ে যাচ্ছে। কল্পনা চাকমা ২০ বছর আগে অপহৃত হলেও এখনও তার কোন বিচার পাওয়া যায়নি। আমরা আজ অপহরণের ২০ বছর পূর্তি উপলক্ষ্যে এই আলোচনা সভার আয়োজন করেছি। স্বাধীনতার পর কল্পনার অপহরণ ছিল একটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা। এর পরবর্তী সময়কালে অপরহরণ গুম ও বিচার বহির্ভুত হত্যা একটি নিয়মিত ঘটনা হিসেবে দাড়িয়ে যাচ্ছে। কাজেই আমাদের সোচ্চার হওয়া ছাড়া কোন বিকল্প নেই।

নির্ধারিত আলোচকদের মধ্যে প্রথমেই ব্যারিস্টার সারা হোসেন তাঁর বক্তব্য উপস্থাপন করেন। তিনি বলেন, কল্পনাকে অপহরণের পরে একটি বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। কিন্তু কোন চূড়ান্ত রিপোর্ট এখনো পাওয়া যায় নি। বিভিন্ন সময় কিছু কিছু মহল থেকে এটাও বলা হয়েছিল যে, কল্পনা বেঁচে আছে এবং ভারতে অবস্থান করছেন। এই ধরনের বক্তব্য মূল ঘটনাকে আড়াল একটি প্রচেষ্ঠা। গত ৫ বছর আগে আবার একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। এই কমিটির একটি শুনানী আদালতে আগামী জুলাই’২০১৬ তে হওয়ার সম্ভবনা আছে। আমরা আশাকরি এ অপহরণের সত্যতা এবং দায়ী ব্যক্তির ব্যাপারে অচিরেই জানতে পারবো। আমাদের তদন্ত ব্যবস্থা ত্রুটিপূর্ণ। ত্রুটিপূর্ণ তদন্ত ব্যবস্থার জন্য সুষ্ঠু তদন্তে কোন ফলাফল আসছে না। সুতরাং এই ব্যবস্থার পরিবর্তন করা দরকার। বিশেষ ট্রাইব্যুনালের মাধ্যমে আমরা যুদ্ধাপরাধীদের বিচার পাচ্ছি। এটা ইতিবাচক দিক। এ ধরণের অপহরণ এবং গুমের ও বিচার বহির্ভুত হত্যার ব্যাপারে একটি বিশেষ ট্রাইব্যুনাল করে তদন্ত করার জন্য তিনি দাবি জানান।

মানবাধিকারকর্মী নূর খান লিটন আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপট তুলে ধরেন। তিনি বিভিন্ন দেশের উদাহরণ তুলে ধরে বলেন, এ ধরনের অপরাধের বিচার বিভিন্ন দেশে হয়েছে। কাজেই এটা ভাবার কোন অবকাশ নেই যে অপরাধীরা পার পেয়ে যাবে। আমরা লক্ষ্য করছি ক্ষতিগ্রস্ত যারা গুম, অপহরণ, বিচার বহির্ভুত হত্যাকান্ডের শিকার হচ্ছেন তাদের আত্মীয়স্বজন বিচার পাওয়ার জন্য বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের দারস্থ হচ্ছে। কিন্তু তাদের পক্ষে এটা চালিয়ে যাওয়া কষ্টকর হচ্ছে। কেউ কেউ ইতিমধ্যে হত্যাকান্ডের শিকার হয়েছেন। কাজেই ব্যক্তি উদ্যোগের পাশাপাশি সামাজিকভাবে আমাদের কন্ঠকে জোরদার করতে হবে।

মৌলিক অধিকার সুরক্ষা কমিটির আহ্বায়ক ড. শাহদীন মালিক তাঁর বক্তব্যে বলেন, আমাদের দেশে বর্তমানে যে হত্যাকান্ড চলছে সেটা রাষ্ট্রীয় বাহিনীর দ্বারা হোক বা জঙ্গিদের দ্বারা হোক এ ব্যাপারে আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থা ও আন্তর্জাতিক মহল খুব উদ্বিগ্নতা প্রকাশ করছে। তিনি বলেন, এটা স্পষ্ট প্রমাণ করছে যে, সরকার যেভাবে দেশ পরিচালনা করছে তাতে তারা ব্যর্থ হচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে সহিংসতা আরো বাড়বে। তিনি উল্লেখ করেন, পুলিশ জনগণের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হচ্ছে। শুধুমাত্র দলীয় আনুগত্য এবং দলের লোকজনকে নিরাপত্তা দিতে ব্যস্ত থাকছে। এটার প্রয়োজন আছে। কিন্তু জনগণের নিরাপত্তার কথা সম্পূর্ণভাবে ভুলে যাচ্ছে পুলিশ। কাজেই জননিরাপত্তা সরকারের নিরাপত্তা এই দুটোর মধ্যে একটি সমন্বয় করে পুলিশকে কাজ করতে হবে। আমাদের রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে কোন গণতন্ত্র নেই। এর ফলে এই ধরনের একটি অস্থির এবং সহিংস সমাজ আমরা পাচ্ছি। আদালতের বর্তমান অবস্থা উল্লেখ করে তিনি বলেন, আদালত রিমান্ড দিয়ে পুলিশকে অত্যাচার করার সুযোগ সৃষ্টি করে দিচ্ছে। তিনি তার বক্তব্যে রাজনৈতিক দলের গণতন্ত্র, পুলিশের ভূমিকা পরিবর্তন ও পুলিশ সংস্কার এবং আদালতের বর্তমান ভূমিকা এই তিনটি বিষয়কে গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করার জন্য বলেন এবং এ ব্যাপারে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন করার জন্য সবাইকে আহ্বান জানান।

অনুষ্ঠানের আরো বক্তব্য রাখেন, অধ্যাপক সি আর আবরার চৌধুরী, এ্যাড. জিয়াউর রহমান, মাসুদুজ্জামান, ইকবাদ উদ্দিন, ডেভিড রাজু এবং সানজিদা।

Back to top button