কমিউনিস্ট নেতা ফরহাদের মৃত্যুবার্ষিকীতে সিপিবি’র আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত
আইপিনিউজ ডেক্স(ঢাকা): কমিউনিস্ট নেতা ফরহাদের মৃত্যুবার্ষিকীতে গতকাল আলোচনা সভার আয়োজন করেছে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি । মোহাম্মদ ফরহাদ ছিলেন মহান মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতা, গণতন্ত্র ও সমাজতন্ত্রের সংগ্রামের অন্যতম স্থপতি, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি)’র সাবেক সাধারণ সম্পাদক, জাতীয় সংসদের সাবেক সদস্য । গতকাল ছিল তাঁর ৩৫তম মৃত্যুবার্ষিকী।
এ উপলক্ষ্যে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় নেতৃবৃন্দ ‘চলমান দুঃশাসনের’ বিরুদ্ধে আন্দোলন জোরদার করার আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, সমাজ বিপ্লব ছাড়া গণতন্ত্রকে স্থায়ী করা যাবেনা।
গতকাল রবিবার (৯অক্টোবর) বিকাল ৪ টায় সিপিবি কার্যালয়ের মুক্তিভবনের মৈত্রী মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় সিপিবি কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি মোহাম্মদ শাহ্ আলম এর সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন সিপিবির কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স, কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম, প্রেসিডিয়াম সদস্য শামছুজ্জামান সেলিম, প্রেসিডিয়াম সদস্য অধ্যাপক এ এন রাশেদা, সিপিবি কেন্দ্রীয় কমিটির অন্যতম সদস্য অধ্যাপক এম.এম. আকাশ, ঐক্য ন্যাপ এর সভাপতিমন্ডলীর সদস্য এস এম এ সবুর, ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের নেতা কাজী রুহুল আমীন। সভা পরিচালনা করেন সিপিবি কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য মানবেন্দ্র দেব।
মোহাম্মদ শাহ্ আলম তার বক্তব্যে বলেন, বাংলাদেশের কৃষক শ্রমিক মেহনতি মানুষের মুক্তিসংগ্রামের অগ্রনায়ক ছিলেন কমরেড ফরহাদ। মোহাম্মদ ফরহাদ মহান ভাষা আন্দোলন, ৬২’র শিক্ষা আন্দোলন, ৬৯’র গণঅভ্যুত্থান, ৭১’র মুুক্তিযুদ্ধ, স্বৈরাচারবিরোধী লড়াইয়ে প্রথম সারির নেতৃত্বের ভূমিকা পালন করেছেন। ৩৫ বছরের ঘটনাবহুল রাজনৈতিক জীবনে তিনি পাকিস্তানের দুঃশাসন এবং স্বাধীন বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক আন্দোলনের গুরুত্বপূর্ণ সংগঠকের ভূমিকা পালন করেন। ১৯৬২ সাল থেকে প্রায় এক বছর হুলিয়া মাথায় নিয়ে গোপনে ছাত্র গণআন্দোলন সংগঠন ও শ্রমিক শ্রেণীর পার্টির বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। ৬৯’র গণঅভ্যুত্থানে কমরেড ফরহাদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। মুক্তিযুদ্ধে কমিউনিস্ট পার্টি-ন্যাপ-ছাত্র ইউনিয়নের সমন্বয়ে গঠিত বিশেষ গেরিলা বাহিনীর প্রধান সংগঠক ছিলেন তিনি।
রহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা ও গণতন্ত্র রক্ষার জন্য সমাজ বিপ্লবের কোন বিকল্প নেই। সমাজ বিপ্লব ছাড়া গণতন্ত্রকে স্থায়ী করা যাবেনা। তিনি দুঃশাসনের অবসান এর সংগ্রাম জোরদার করার আহ্বান জানান। এইজন্য বাম গণতান্ত্রিক প্রগতিশীলদের বিকল্প শক্তি সমাবেশ গড়ে তোলারও আহ্বান জানান। কমরেড ফরহাদ স্বাধীনতা পরবর্তী বাংলাদেশে তরুণ সমাজ এবং শ্রমিক শ্রেণির মধ্যে তার রাজনৈতিক এবং মতাদর্শিক দক্ষতা দিয়ে এই বিপ্লবের স্বপ্নকে ছড়িয়ে দিতে পেরেছিলেন। আজকের দিনে গণতন্ত্রহীনতা এবং নৈরাজ্যের বিরুদ্ধে লড়াই করতে কমরেড ফরহাদ আমাদের কাছে প্রাসঙ্গিক হয়ে আছেন। এদেশের মুক্তিযুদ্ধ সহ সকল গণতান্ত্রিক আন্দোলনে কমরেড ফরহাদ এক উজ্জল নক্ষত্র।
মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেন, ৬৯’র গণঅভ্যূত্থান থেকে শুরু করে মুক্তিযুদ্ধ এবং স্বাধীন বাংলাদেশে স্বৈরাচার বিরোধী লড়াই সহ সকল গণতান্ত্রিক আন্দোলনে কমরেড ফরহাদ গুরুত্বপূর্ণ সংগঠক এর ভুমিকা পালন করেন। তার নিজের কর্মক্ষমতা এবং সঠিক সিন্ধান্ত নেওয়ার যোগ্যতার কারণে তিনি একজন জাতীয় নেতায় পরিণত হন। কমরেড এম.এম. আকাশ বলেন, কমরেড ফরহাদ একজন আজন্ম বিপ্লবী। কমরেড ফরহাদ ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের বিপ্লবী এবং স্বাধীন বাংলাদেশের তরুণসমাজতন্ত্রীদের মধ্যে সেতুবন্ধন ঘটাতে পেরেছেন। কমরেড ফরহাদ ছিলেন একজন অতুলনীয় নেতা। একজন দক্ষ ও পরিশ্রমী নেতা ছিলেন তিনি। এস এম এ সবুর বলেন, কমরেড ফরহাদ বাংলাদেশের কৃষক শ্রমিক মেহনতি মানুষের অকৃত্রিম বন্ধু ছিলেন। তিনি খুব সঠিকভাবে উপলব্ধি করতে পেরেছিলেন, বাংলাদেশের কৃষক ক্ষেতমজুরদের মুক্তি ব্যতিত মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠিত হবেনা। যার কারণে তিনি কৃষক ক্ষেতমজুর আন্দোলন সংগঠিত করার বিষয়ে গভীর মনোযোগ দিয়েছিলেন।
শ্রমিকনেতা রুহুল আমিন বলেন, মাত্র ৪৯ বছর বয়সে কমরেড ফরহাদ বাংলাদেশের শ্রমিক আন্দোলন সংগঠিত করার কাজে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করেছেন। আজকের দিনে শ্রমিক নির্যাতন ও নিষ্পেশনের বিরুদ্ধে লড়াই করতে যেয়ে কমরেড ফরহাদের দেখানো পথ আমাদের জন্য বিশেষ অর্থ বহন করে।
উল্লেখ্য, ১৯৮৭ সালের ৯ অক্টোবর তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়নের রাজধানী মস্কোতে কমরেড ফরহাদ মৃত্যুবরণ করেন। এই নেতার স্মৃতির প্রতি যথাযথ সম্মান ও শ্রদ্ধা জানিয়ে আজ ৯ অক্টোবর, রবিবার সকাল ৮টায় বনানী কবরস্থানে তাঁর সমাধিতে সিপিবিসহ বিভিন্ন দল-সংগঠনের পক্ষ থেকে পুষ্পমাল্য অর্পণ করেন। এসময় সিপিবির সভাপতি মোহাম্মদ শাহ্ আলম ও সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স সহ কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।