ওঁরাও জনগোষ্ঠীর নেতা মিলন ওঁরাংকে অপহরণের প্রতিবাদে মানববন্ধন ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত

২১ অক্টোবর বুধবার বিকেল ৩টায় নগরীর কোর্ট পয়েন্টে ওঁরাও জনগোষ্ঠী ভূমিরক্ষা কমিটি, সিলেটের উদ্যোগে ওঁরাও জনগোষ্ঠীর নেতা মিলন ওঁরাংকে অপহরণ, তাদের ভূমি দখল এবং অব্যাহত নির্যাতন নিপীড়নের প্রতিবাদে মানববন্ধন ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
সংগঠনের সদস্য গণতন্ত্রী পার্টির কেন্দ্রীয় সভাপতি ব্যারিস্টার মো. আরশ আলীর সভাপতিত্বে ও সংগঠনের সদস্য মানবাধিকার কর্মী ইন্দ্রানী সেন সম্পার পরিচালনায় প্রতিবাদী সমাবেশে বক্তারা বলেন, বালুচর চন্দন টিলায় বসবাসরত ওঁরাও আদিবাসী জনগোষ্ঠীর মানুষজন উত্তরাধীকার সূত্রে বংশ পরম্পরায় বসবাস করে আসলেও দীর্ঘদিন ধরে সিলেটের একদল ভূমিখেকো চক্র তাদের জমিজমা জাল দলিলের মাধ্যমে দখল করে আসছিল। রাজনৈতিক ক্ষমতার আশ্রয়ে প্রশ্রয়ে এসব ভূমিখেকোরা তাদেরকে উচ্ছেদ করার পায়তারা চালিয়ে আসছে। কিন্তু আদিবাসী জনগোষ্ঠী একদল শিক্ষিত তরুণ বিশেষ করে মিলন ওঁরাং এর নেতৃত্বে তাদের জমিজমা সংক্রান্ত মামলা পরিচালনা সহ তাদের নিরাপত্তা ও অস্থিত রক্ষার লড়াই সংগ্রাম করে আসছে। ভূমিদস্যুরা মনে করে যে মিলন ওঁরাংকে জব্দ করতে পারলে তাদের ভূমি রক্ষার আন্দোলন স্থিমিত হয়ে যাবে তাই তারা বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন চক্রান্ত করে তার প্রতিবাদের পথ রুদ্ধ করতে চায়। কিন্তু প্রতিবাদী মিলন ওঁরাং বিভিন্ন রকম হুমকি উপেক্ষা করে তার লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে।
বক্তারা আরো বলেন, ওঁরাও জনগোষ্ঠী ভূমি রক্ষার এ লড়াইয়ে সিলেটের সকল প্রগতিশীল রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক, আদিবাসী সংগঠনগুলো একাত্বতা প্রকাশ করে তাদের লড়াইকে আরো জোরদার ও বেগবান করার ফলে ভূমিখেকোরা কিছুদিন নিষ্ক্রিয় থাকলেও আবার তাদের চক্রান্ত মাথা ছারা দিয়ে উঠেছে। বক্তারা ক্ষোভ প্রকাশ বলেন, পুলিশ যেখানে রাষ্ট্রের নাগরিকের নিরাপত্তা বিধানে সচেষ্ট থাকার কথা সেখানে মিলন ওঁরাও অপহরণের পর থানায় সাধারণ ডায়েরী করতে গেলে পুলিশ নানা রকম হয়রানি করে। পুলিশের এ ধরণের আচরণের তীব্র নিন্দা জানান।
বক্তারা আরো বলেন, মূলস্রোতধারার জনগনের পাশাপাশি আদিবাসীরা এ দেশের নাগরিক। আদিবাসীদের নিরাপত্তার অধিকার সংবিধানিক অধিকার তাই তাদের জমিজমা রক্ষাসহ তাদের সকল প্রকার নিরাপত্তা প্রদান রাষ্ট্রের দায়িত্ব। বক্তারা তাই ওঁরাও জনগোষ্ঠীর জমিজমা সংক্রান্ত মামলায় ন্যায় বিচার প্রাপ্তিতে সরকারে প্রতি দাবী জানান।
অপহরণের শিকার মানবাধিকারকর্মী ও আদিবাসী নেতা মিলন ওঁরাং বলেন, দীর্ঘদিন ধরে আমাদের ভূমি অবৈধ দখল করে নিচ্ছে ক্ষমতাসীন আওয়ামীলীগের নেতা সাবেক ইউনিয়ন চেয়ারম্যান মছব্বির গংরা এরই সাথে অল্প কিছু দিন আগে অন্য আরেকটি জমির মামলায় আমাদের সাথে জমিজমা নিয়ে বিরোধে লিপ্ত হয়েছে সমরজিৎ গংরা উক্ত জমিজমার মামলা সংক্রান্ত বিষয়ে আইন পরামর্শ নেওয়ার জন্য গত ১৭ অক্টোবর (শনিবার) রাত আনুমানিক সাড়ে ৯ টায় আমাদের আইনজীবি এড. বেদানন্দ ভট্টাচার্যের বাসায় যাই। সেখান থেকে ফেরার পথে শাহীঈদগাঁহ মোড়ে পিছন থেকে একটি সিএনজিতে এসে চার যুবক আমাকে তুলে নিয়ে চোখ বেঁধে অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে যায়। সেখানে তারা আমার মামলা পরিচালনার কাজ থেকে আমি যাতে সরে যাই সে বিষয়ে হুমকি দেয়। এক পর্যায়ে তারা বলে আমি যদি মামলা চালাই তবে তারা আমার পরিবার সহ আমার জীবননাশ করবে। এমনকি মিথ্যা নারী নির্যাতন মামলায় ফাঁসানোসহ নানা প্রকার ভয়ভীতি প্রদর্শন করে। উল্লেখ্য যে, বিগত সময়েও মছব্বির গং সহ ভূমিখেকোরা আমার উপর নানা রকম নির্যাতন চালিয়ে ছিল। আমি জীবন বাঁচানোর দায়ে আমার পরিবারে পরামর্শ করে মামলা সংক্রান্ত বিষয়ে চিন্তাভাবনা করব বললে তারা ১৮ অক্টোবর (রবিবার) রাত আনুমানিক সাড়ে ১০টার দিকে চোখ বাঁধা অবস্থায় আমাকে কদমতলী এলাকায় ছেড়ে দেয়। এসব ভূমিখেকো এই নৃশংসতায় আমি মানসিকভাবে বিপর্যস্ত এতে আমার স্বাভাবিক জীবনযাপন ব্যাহত হচ্ছে এবং আমি ও আমরা চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি।
সমাবেশে অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, ওঁরাও জনগোষ্ঠী ভূমিরক্ষা কমিটি সিলেটের আহ্বায়ক ফারুক মাহমুদ চৌধুরী, গণফোরাম সিলেট জেলা আহ্বায়ক এড. আনছার খান, সাম্যবাদী দল সিলেটের সম্পাদক কমরেড ধীরেণ সিংহ, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি সিলেট জেলার সভাপতি কমরেড সিকন্দর আলী, বাসদ (মার্কসবাদী) সিলেটের সমন্বয়ক কমরেড উজ্জ্বল রায়, গণতন্ত্রী পার্টি সিলেট জেলা সাধারণ সম্পাদক জুনেদুর রহমান চৌধুরী, বাসদ সিলেট জেলা সমন্বয়ক কমরেড আবু জাফর, বাপা সিলেটের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল করিম কীম, আদিবাসী ফোরাম সিলেট জেলা সভাপতি গৌরাঙ্গ পাত্র, আদিবাসী নেতা লক্ষিকান্ত সিংহ, টি.ডব্লিউ. এ সিলেট জেলার সভাপতি দানেশ সাংমা, দলদলি চা বাগান পঞ্চায়েত কমিটির সভাপতি মিন্টু দাস, গণতন্ত্রী পার্টি সিলেটের নেতা গোলজার আহমেদ, ওয়ার্কার্স পার্টি সিলেট জেলা নেতা দীনবন্ধু পাল, অজিত দেবনাথ, বাসদ সিলেটের নেতা প্রণব জ্যোতি পাল, এড. দেবব্রত চৌধুরী লিটন, গণ জাগরণ মঞ্চের সংগঠক রাজীব রাসেল, ছাত্রনেতা মাসুদ রানা চৌধুরী, আদিবাসী নেতা অরুণ মাল, বিরবল লোহার, শৈলেন মুন্ডা, সত্যজিৎ মুন্ডা, গোপাল উরাং, সারতি উরাং, সিমা মাল, শিপা উরাং প্রমুখ। এছাড়াও বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠন সহ উত্তর সুরমা মুন্ডা ছাত্রপরিষদের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।