জাতীয়

ঐক্য ন্যাপের প্রতিবাদী মানববন্ধন অনুষ্ঠিত

২৮ জুন, ২০১৬ ইং সকাল ১১ টা জাতীয় জাদুঘরের সামনে লাউয়াছড়ায় ২৫ হাজার বৃক্ষ নিধন, মধুপুরে রিজার্ভ ফরেস্ট ঘোষণা ও মৌলভীবাজারের নাহারপুঞ্জির খাসিয়া আদিবাসী উচ্ছেদের চক্রান্ত বন্ধের দাবীতে প্রতিবাদী মানববন্ধন করেছে ঐক্য ন্যাপ।
ঐক্য ন্যাপের সভাপতি পঙ্কজ ভট্টাচার্যের সভাপতিত্বে প্রতিবাদী মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। মানববন্ধনে ঘোষণা পাঠ করেন ঐক্য ন্যাপের সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট আসাদুল্লাহ তারেক, আরও বক্তব্য রাখেন বিশিষ্ট কলামিস্ট বুদ্ধিজীবী সৈয়দ আবুল মকসুদ, ঐক্য ন্যাপের নেতা এডভোকেট এস এম এ সবুর, আব্দুল মুনায়েম নেহরু, চঞ্চনা চাকমা এছাড়া উপস্থিত ছিলেন হারুনার রশিদ ভূঁইয়া, অলিজা হাসান, রঞ্জিত কুমার সাহা, লায়লা খালেদা, পার্বত্য চট্টগ্রামের জনসংহতি সমিতির নেতা দীপায়ন খীসা প্রমুখ।
মানববন্ধন থেকে নিম্নোক্ত দাবীগুলো উত্থাপন করা হয়ঃ
(ক) অবিলম্বে আদিবাসীদের ভূমি রিজার্ভ ফরেস্ট ঘোষণা বাতিল করুন। আদিবাসীদের প্রথাগত ও ঐতিহ্যগত জমির মালিকানার স্বীকৃতি দিতে হবে।
(খ) আদিবাসীদের সব ভূমি জাতীয় উদ্যান প্রকল্পের বাইরে রাখতে হবে।
(গ) মধুপুর জাতীয় প্রকল্প গ্রহণের পূর্বে আদিবাসীদের সাথে অর্থপূর্ণ আলাপ আলোচনা করতে হবে।

ঐক্য ন্যাপের প্রতিবাদী মানববন্ধনের ঘোষণা
১। লাউয়াছড়ায় ২৫ হাজার বৃক্ষ নিধন বন্ধ করুন
আমরা গভীর উদ্বেগ সহকারে লক্ষ করছি যে লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানের ভিতর নির্মিত রেললাইনের দূর্ঘটনা এড়াতে রেললাইনের দুই পাশের ২৫ হাজার শত বর্ষী বৃক্ষ নিধনের পদক্ষেপ নিয়েছে রেল কর্তপক্ষ। রেলওয়ের মরণ পদক্ষেপের শিকার হবে প্রকৃতি- পরিবেশ- বন্যপ্রাণী এবং শত শত বছর ধরে বসবাসরত ভূমিজ আদিবাসী সন্তানেরা । বন বিভাগ সূত্রে জানা গেছে লাউয়াছড়া বনে ১৬৭ প্রজাতির বৃক্ষ, ২৪৬ প্রজাতির পাখি ২০ প্রজাতির স্তন্যপায়ী অসংখ্য বিরল ও বিপন্ন প্রজাতির প্রাণী ও উদ্বিদের আবাসস্থল।

দুনিয়ার কোন জাতীয় উদ্যানের ভিতর রেললাইন না থাকলেও বাংলাদেশে তা রয়েছে। প্রকৃতি- পরিবেশ নিসর্গপ্রেমিদের আপত্তি অগ্রাজ্য করে বনের ২৫ হাজার গাছ কর্তন করা হলে পরিবেশের উপর বিরূপ প্রভাব পড়বে, ইকো সিস্টেমে বিপর্যয় নেমে আসবে, পশুপাখির অভয়ারন্য হুমকির মুখে পড়বে, বনের সন্তান আদিবাসীরা অস্তিত্বের সংকটে পড়বে। দেশবাসী জোর দাবী কালবিলম্ব না করে বনের ভিতরে রেললাইনটি বনের বাইরে সরিয়ে নিন। ২৫ হাজার বৃক্ষ নিধনের আত্মঘাতি পদক্ষেপ বন্ধ করুন।

২। মধুপুরের বনে ২৫ হাজার গারো-কোচ-বর্মনদের নিজ ভূমি থেকে উচ্ছেদ বন্ধ করুন

স্মরণাতিত কাল থেকে টাঙ্গাইরের মধুপুর বনাঞ্চলে ২৫ হাজারের অধিক গারো-কোচ বর্মন ও অন্যান্য আদিবাসীরা শান্তিপূর্ণভাবে বসবাস করে এসেছেন। সরকার ও বন বিভাগ বিভিন্ন সময় বন ও পরিবেশ ধ্বংস কারী মুনাফাকেন্দ্রীক প্রকল্প গ্রহণ করে প্রাকৃতিক বনকে ধ্বংস করে এসেছেন। উডলট ও রাবার বাগানের নামে প্রাকৃতিক শালবন তারা উজাড় করেছেন। এছাড়া বনের ভিতর বিভিন্ন স্থাপনা, ন্যাশনাল পার্ক, পিকনিক স্পট, বিমান বাহিনীর ফায়ারিং রেঞ্জ ইত্যাদি প্রতিষ্ঠা করে বনের সর্বনাশ করেছেন। ২০০৪ সনে ইকোপার্ক বিরোধী আদিবাসী- স্থানীয় জনগণের বিশাল আন্দোলন পীরেন স্লানদের রক্তের বিনিময়ে ইকোপার্ক প্রকল্প সরকারকে বাতিল করতে বাধ্য করেছিল।

বন কর্তৃপক্ষ অতীত থেকে শিক্ষা না নিয়ে, জনগণকে না জানিয়ে গোপনে এক প্রজ্ঞাপন ও ২০ ধারা জারি করে মধুপুর বনে সম্পূর্ণ গ্রাম- বনাঞ্চল- স্কুল- মসজিদ- মন্দির- সমাধি- হাসপাতাল প্রভৃতি সহ রিজার্ভ ফরেস্ট ঘোষণা করেছে গত ফেব্রুয়ারি মাসে। সেই থেকে মধুপুরের ২৫ হাজার গারো-কোচ- বর্মন ও সাধারণ জনগণ উচ্ছেদ- আতংকে দিন কাটাছেন।

মধুপুরের ভূমির উপর আদিবাসীদের প্রথাগত ও ঐতিহ্যগত অধিকার রয়েছে যা জাতিসংঘ আইএলও কর্তৃক স্বীকৃত।
৩। মৌলভীবাজারের নাহারপুঞ্জির খাসিয়া আদিবাসী উচ্ছেদের চক্রান্ত বন্ধ কর।
মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলের নাহারপুঞ্জির ৭০০ জন খাসিয়া নরনারী শিশুকে ৩০ মে উচ্ছেদ নোটিশ দিয়েছেন জেলা প্রশাসন। ঐ নোটিশে বলা হয়েছে খাসিয়াদের ১২ জুনের মধ্যে ঘর বাড়ি জায়গা জমি ছেড়ে চলে যেতে হবে- নতুবা পুলিশ তাদের উচ্ছেদ করবে।

সরকারের এই আচারণ, অবিচার ও অত্যাচার বৃটিশ ও পাকিস্তানী শাসক চক্রকে হার মানিয়েছে। খাসিয়া পুঞ্জির ভূমি ঐতিহ্যগতভাগে ও প্রথাগতভাবে আদিবাসীদের। এই অধিকারের স্বীকৃতি রয়েছে জাতিসংঘ সহ বিভিন্ন মানবাধিকার দলিলে। আইএলও কনভেনশন এর ১০৭ অনুযায়ী সকল ভূমির মালিকানা আদিবাসীদের। জোর করে তাদের প্রথাগত জমি থেকে উচ্ছেদ করার অর্থ হবে মানবাধিকার লঙ্ঘন।

আমাদের সুস্পষ্ট নাহারপুঞ্জির ৭০০ খাসিয়াদের প্রথাগত জমি দখলের উচ্ছেদ নোটিশ বাতিল করুন। আদিবাসীদের ভূমিতে কোন প্রকল্প গ্রহণের পূর্বে তাদের স্বাধীন মতামত বাধ্যতামূলক ঘোষণা করুন।

সর্বোপরি পাহাড় ও সমতলে ভূমি জমি থেকে ক্রমবর্ধমান উচ্ছেদ, অবিচার অত্যাচার হুমকি ধামকি সহ দেশত্যাগের জন্য ভূমি দস্যুদের চাপ বন্ধ করতে, ভূমি সমস্যা সমাধানের সমতলের আদিবাসীদের জন্য পৃথক ভূমি কমিশন গঠন করা অতি জরুরী হয়ে উঠেছে।

এছাড়া হবিগঞ্জের চাঁদপুর চা বাগানের আদিবাসীদের শত শত বছরের চাষাবাদের জমি থেকে উচ্ছেদ করে সেই ফসলি জমিতে ‘বিশেষ অর্থনীতিক অঞ্চল’ গড়ে তোলার মানবতাবিরোধী ও প্রকৃতি-পরিবেশ বিরোধী প্রতারণাপূর্ণ সরকারী পদক্ষেপ বন্ধে জোর দাবি জানানো যাচ্ছে। রংপুর চিনি পাক আমলে অধিগ্রহণ কৃত বাগদাফার্ময়ের ১৮৪২.৩০ একর কৃষি জমি নিয়ে যুগযুগ ব্যাপী অসৎ কর্মকর্তাদের লুটপাট, ইজারা দান প্রভৃতি অপকর্মের পর সমপ্রতিক উক্ত কৃষি জমিতে ‘বিশেষ অর্থনীতিক অঞ্চল ঘোষণা এক ঘৃণ্য প্রতারণার সামিল। অবিলম্বে চা বাগান ও প্রকৃতি পরিবেশ বিনাশী এই গরিব মারার ও কৃষি ধ্বংসের পদক্ষেপ বন্ধ করার জন্য জোর দাবি জানাচ্ছি।

Back to top button