জাতীয়

ঐক্যবদ্ধ বাম শক্তি ‘বাম গণতান্ত্রিক জোট’

নিজস্ব প্রতিবেদক: ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের লক্ষ্যে সমমনা আট বাম দল মিলে বাম গণতান্ত্রিক জোট গঠন করা হয়েছে। আজ সকালে পুরানা পল্টনে মুক্তিভবনের মৈত্রী মিলনায়তনে এক সংবাদ সন্মেলনে এ বাম জোটের ঘোষণা দেয়া হয়। দলগুলো হলো বাংলাদেশর কমিউনিস্ট পার্টি(সিপিবি), বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল(বাসদ), বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল(মার্ক্সবাদী), গণসংহতি আন্দোলন, বাংলাদেশের ইউনাইটেড কমিউনিস্ট লীগ, গণতান্ত্রিক বিপ্লবী পার্টি ও বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক আন্দোলন।

সংবাদ সন্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন জোটের প্রথম সমন্বয়কারী বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক। সেখানে জানানো হয়, নতুন এই জোট মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত চেতনায় সমাজতন্ত্রের লক্ষ্যে জনগনের গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ও সরকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে তাদের আন্দোলন অব্যাহত রাখবে। বর্তমান সরকার, শাসক-শোষক শ্রেণীর মহাজোট-জোট কারোর কাছেই দেশের মানুষ, দেশের সার্বভৌমত্ব, জাতীয় নিরাপত্তা, জাতীয় স্বার্থ ও জাতীয় সম্পদ নিরাপদ নয়। বাংলাদেশের শাসকদের নতজানু নীতি বাংলাদেশে বিদেশীদের হস্তক্ষেপের সুযোগ বাড়িয়ে তুলছে যা দেশকে বিপদ্গ্রস্থ করছে। নতুন এই বাম জোট এর বিপরীতে জনগনের জন্য সরকার ও রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে এগিয়ে যাবে বলে সংবাদ সন্মেলনে জানানো হয়।
সংবাদ সন্মেলনে প্রশ্নোত্তর পর্বে সাংবাদিকদের জোট থেকে নির্বাচনে অংশগ্রহন বিষয়ে এক প্রশ্নে সিপিবির সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম জানান, নির্বাচনকে কেন্দ্র করে এই মূহুর্তের সব থেকে জরুরী কাজ হলো নির্বাচনকে যে প্রহসনে পরিণত করা হয়েছে তার বিরুদ্ধে শক্তিশালী আন্দোলন গড়ে তোলা। নির্বাচন কমিশন সহ যে সব জায়গায় প্রয়োজন আছে সেখানে লাগাতার আন্দোলনের মাধ্যমে আমাদের দাবিগুলোকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করবো। আমরা নির্বাচন ব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন চাই। নির্বাচনে টাকার খেলা, পেশীশক্তির ব্যবহার ও প্রশাসনিক কারসাজি হয় তা মুক্ত করতে চাই। সর্বোপরি এটা প্রমাণিত যে এই সরকারের অধীনে কোন নিরপেক্ষ নির্বাচন হতে পারেনা। সুতরাং সংসদ ভেঙে দিতে হবে যাতে সরকার ও নির্বাচন কমিশন প্রকৃত নিরপেক্ষ হয়ে দেশের জনগনের উপর কর্তৃত্ব রাখতে পারে।

বামরা নির্বাচনে আসলে নামসর্বস্ব ইসলামী দলগুলোর থেকেও কম ভোট পায়, বামরা কি জনসম্পৃক্তহীন এমন এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, নির্বাচন যদি প্রহসনমূলক হয় তবে সে নির্বাচনের ফলাফল বিচার করে বামদের প্রতি জন সমর্থন সেটা টের পাওয়া যাবেনা। আমাদের জনসমর্থন রাজপথে। জোটের অনেক শরীক দলগুলো মিলে আমরা হরতালসহ বিভিন্ন আন্দোলন করেছি, সরকারের দমনপীড়ন আমাদের কর্মীদের উপর নেমে এসেছে। অনেকে এখনো হাসপাতালে রয়েছেন। আমাদের শক্তি এতো কম হলে শাসকদের এতো দুঃশ্চিন্তা কেনো? নিজেদের শক্তি সম্পর্কে আমরা অতিমূল্যায়ন করিনা। তবে আমরা জানি আমরা জনগণের যে আকাঙ্খা আছে তা আমরা প্রতিধ্বনিত করি। আমাদের জোট ভোট সর্বস্ব জোট নয়। এটা সামগ্রিক আন্দোলনের অংশ, সেখানে অংশগ্রহন করতেও পারি, বয়কট করতেও পারি।

সরকারি দলে থাকা বামদলগুলো কি এই জোটে থাকতে পারবে কিনা এমন এক প্রশ্নের জবাবে ইউনাইটেড কমিউনিস্ট লীগের সাধারণ সম্পাদক মোশারফ হোসেন নান্নু বলেন, জনগনের উপর চরম ফ্যাসিবাদী শাসন চাপিয়ে দেয়া হয়েছে তার সাথে যারা হাত মিলিয়েছে, ছাত্র-শিক্ষকদের উপর অত্যাচার করেছে তার অংশীদার যারা তারা বামপন্থা ত্যাগ করেছে। ফলে তাদের সাথে অদূর ভবিষ্যতেও ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের কোন সম্ভবনা দেখছিনা। এর বাইরে যে সব বামপন্থী দল সত্যিকার অর্থে দেশের জন্য জনগণের জন্য আন্দোলন সংগ্রাম করতে চায় তাদের প্রতি আহবান থাকবে আসুন সবাই মিলে ঐক্যবদ্ধ হয়ে আন্দোলন করি, দেশের মানুষের পাশে থাকি।

সংবাদ সন্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক ও বাম গণতান্ত্রিক জোটের প্রথম সমন্বয়কারী সাইফুল হক, সিপিবির সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকী, সদস্য ফিরোজ আহমেদ, ইউনাইটেড কমিউনিস্ট লীগের সাধারণ সম্পাদক মোশারন হোসেন নান্নু, গণতান্ত্রিক বিপ্লবী পার্টির সাধারণ সম্পাদক মোশরেফা মিশু, বাসদের সাধারন সম্পাদক খালেকুজ্জামান, বাসদ মার্কসবাদীর নেতা শুভ্রাংশু চক্রবর্তীসহ জোটের অন্যান্য নেতৃবৃন্দ।

Back to top button