জাতীয়

বিপ্লবী নেতা মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমার ৭৮তম জন্ম দিবস পালন

রাঙ্গামাটি প্রতিনিধি: জুম্ম জনগণ দীর্ঘ সংগ্রাম করে যে অধিকার অর্জন করেছে শোষকগোষ্ঠি তা নির্মমভাবে হরণ করছে। মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমার স্বাধিকার অধিকারের স্বপ্ন শুধু স্বপ্নই থেকে যাচ্ছে। পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি স্বাক্ষরের পরেও এই অঞ্চলে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা হয়। জুম্মদের বুকে অনেক জ্বালা যন্ত্রনা । সম্পূর্ণ এক অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে আজ জুম্মদের ভাগ্য। এর ধারাবাহিকতা চলতে থাকলে জুম্মদের অস্তিত্ব শেষ হতে বেশী সময় লাগবেনা। ১৫ সেপ্টেম্বর ২০১৭ মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমার ৭৮তম জন্ম দিন উপলক্ষে রাঙ্গামাটির শিল্প কলা একাডেমির মিলনায়তনে আয়োজিত আলোচনা সভা ও পুরষ্কার বিতরনী অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির সভাপতি জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় লারমা। পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি, রাঙ্গামাটি জেলা কমিটির উদ্যোগে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন চাকমা সার্কেলের চীফ ব্যারিস্টার দেবাশীষ রায়। সুবর্ণ চাকমার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য রাখেন আদিবাসী লেখক ফোরামের সভাপতি শিশির চাকমা, বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরাম, পার্বত্য অঞ্চলের সভাপতি প্রকৃতি রঞ্জন চাকমা, জনসংহতি সমিতির কেন্দ্রীয় সদস্য কল্পনা চাকমা,যুব সমিতির সাধারণ সম্পাদক অরুন ত্রিপুরা, পাহাড়ী ছাত্র পরিষদের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক সুমন মারমা প্রমুখ। অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন আনন্দ জ্যোতি চাকমা ও সুপ্রভা চাকমা।
আঞ্চলিক পরিষদের চেয়ারম্যান বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে পশ্চাৎপদ সমাজ ব্যবস্থায় মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমার মত চিন্তাশীল মানুষের জন্ম অনেকে বিশ্বাস করতে চায়না। তাঁর সংগ্রামী চেতনা অধিকার হারা মানুষকে সংগ্রামে উজ্জীবিত করে। তিনি বলেন, মানবেন্দ্র নারায়ণ লামরমা ছোট বেলা থেকেই পাহাড়ে অধিকার হারা মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠায় সচেতন ছিলেন। ১৯৭২ সালে জুম্ম জনগণের স্বাধিকার অধিকারের দাবি উত্থাপন করেছিলেন। অসীম দেশপ্রেম, জাতীয়তাবোধ, মানবতাবোধ মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমাকে মেহনতি মানুষের নেতায় পরিণত করেছে। তিনি শুধু পাহাড়ের মানুষের অধিকারের কথা বলেননি তিনি গোটা বাংলাদেশের অধিকারহীন মানুষের কথাই বলেছেন। সন্তু লারমা বলেন, সরকার চুক্তি বাস্তবায়নে দ্বিধাগ্রস্ত। উন্নয়নের নামে জুম্ম জনগণের স্বার্থ পরিপন্থি কাজে লিপ্ত। ১৯৪৭ সালের নীল নকশা ধাপে ধাপে বাস্তবায়ন করছে সরকার। ১৯৫৮ সালের ভূমি অধিগ্রহণ আইন,১৯৬০ সালের কাপ্তাই বাঁধ,১৯৬৩ সালে বিশেষ শাসিত অঞ্চলের মর্যাদা ক্ষুন্ন এবং বর্তমান পর্যায়ে দমনপীড়ন জুম্ম জনগণের অস্তিত্বকে ধ্বংসের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। তিনি বলেন, শোষক গোষ্ঠীর এই নীল নকশা বাস্তবায়ন করছে জেলা পরিষদে দলীয় বিবেচনায় নিয়োগ পাওয়া সদস্যরা। সন্তু লারমা আরো বলেন, পাহাড়ের শিক্ষিত সমাজকে আন্দোলন সংগ্রামে শামিল হওয়ার আহবান জানিয়ে সন্তু লারমা বলেন, পার্বত্য অঞ্চলে চলমান অত্যাচার নির্যাতন অনাচার নিয়ে আত্মজিজ্ঞাসা করার সময় হয়েছে। শিক্ষিত সমাজ এবং উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছাত্র যুব সমাজকে পার্বত্য চট্টগ্রামের বাস্তবতাকে উপলব্ধি করতে হবে। উগ্রজাতীয়তাবাদী ও সাম্প্রদায়িক শাসনের বিরুদ্ধে সোচ্চার প্রতিরোধ আন্দোলন গড়ে তুলতে না পারলে আদিবাসীদের অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যাবেনা।
আদিবাসী হিসেবে সাংবিধানিক স্বীকৃতির জন্য যে আন্দোলন তা মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমার চিন্তা ধারার আলোকেই হচ্ছে উল্লেখ করে প্রধান অতিথি রাজা দেবাশীষ রায় বলেন, ৭২ সালে সংবিধানে মানুষের সামষ্টিক অধিকার ছিলনা বর্তমানেও নেই তার ইঙ্গিত মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমা দিয়েছিলেন। জাতীয় সংসদে তার যে বক্তব্য তাতে করে জুম্ম জনগণের মৌলিক অধিকার তথা মৌলিক স্বাধীনতার কথাই বলেছেন তিনি। এমএন লারমাই এক মাত্র ব্যক্তি যিনি বঙ্গবন্ধুর সামনে দাড়িয়ে জুম্ম জনগণসহ দেশের মেহনতি মানুষের অধিকারের দাবি উত্থাপন করেছিলেন। তিনি বেঁচে থাকলে আদিবাসীদের অধিকারের সংগ্রাম অনেক দূর এগিয়ে যেতো বলে মনে করেন রাজা দেবাশীষ রায়। বক্তারা সকলে মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমার দর্শন নীতি আদর্শকে ধারণ করে মেহনতি মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠায় এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।

Back to top button