জাতীয়

উত্তরাঞ্চলের আদিবাসীদের পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান ১২টি সংগঠনের

করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) প্রতিরোধে লক ডাউনে অবরুদ্ধ উত্তরাঞ্চলের দিনমজুর, দু:স্থ ও গরীব আদিবাসীদের পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান জানিয়েছে ১২টি সংগঠন। জাতীয় আদিবাসী পরিষদ, সাহেবগঞ্জ বাগদাফার্ম ভূমি-উদ্ধার সংগ্রাম কমিটি, আদিবাসী যুব পরিষদ, আদিবাসী ছাত্র পরিষদ, আদিবাসী নারী পরিষদ, আদিবাসী সমাজ বির্নিমান সংস্থা, অনগ্রসর সমাজ উন্নয়ন সমিতি, আদিবাসী নারী ও শিশু কল্যান সংস্থা, কিরন-সার্বিক গ্রাম উন্নয়ন সমিতি, উইম্যান কমিশন ফর ডেভেলেপমেন্ট ইন বাংলাদেশ, সুন্দরবন আদিবাসী মুন্ডা সংস্থা, আদিবাসী সমাজ উন্নয়ন সমিতি-ফুলবাড়ী ও পার্বতীপুর।

সংগঠনগুলো তাদের একটি প্রচারপত্রে বলে যে, বাংলাদেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের রাজশাহী ও রংপুর বিভাগের কমপক্ষে ১৩টি জেলায় ৩৮টিরও অধিক প্রায় ১৫ লক্ষাধিক আদিবাসী জাতি যেমন: সাঁওতাল, উরাও, মুন্ডা, মাহাতো (বেদিয়া/কুড়মি), মালো, মাহালে, মুষহর, কড়া, কোডা, কোল, ভিল, ভুঁইমালি, বাগদী, তুরি, গঞ্জু, গড়াইত, তেলি, কোচ, কন্দ, রাজোয়াড়, রবিদাস, লোহার, শবর, হো ইত্যাদি জাতিস্বত্তার বসবাস। ভূ-সন্ত্রাস বা জমি জালিয়াতির কারনে এইসব জাতিস্বত্তার ৯০ শতাংশই আজ ভূমিহীন যাদের নিত্যদিনের খরচ দিনমজুরীর টাকায় মেটাতে হয়ে। দিনমজুরী শেষে সেই টাকায় নিত্যদিনের চাল, ডাল, তেল, লবন কিনে তারা বাড়ি ফিরে সেটা রান্না করে পরিবারের জীবন নির্বাহ করে। ফেব্রুয়াারি-মার্চ-এপ্রিল-মে মাসে অধিকাংশ আদিবাসী কৃষি শ্রমিকদেরই হাতে কাজ থাকে না। অন্যের কৃষি জমিতে নিড়ানি, সার-লাগানো, চারা পরিচর্যা ইত্যাদি কাজ করেই তাদের সংসার চলে। কিন্তু বৈশ্বিক মহামারী করোনা ভাইরাসের কারনে দেশে লক-ডাউন পরিস্থিতিতে তারা হয়ে পড়েছে কর্মহীন।

এ অবস্থায় আদিবাসীরা ইতিমধ্যে বিভিন্ন এলাকা থেকে জংলী আলু, কচু শাক, শামুক-ঝিনুক-কুচিয়া-কাঁকড়া সংগ্রহ করে জীবিকা-নির্বাহ করছে। আদিবাসী কৃষি শ্রমিকেরা ইতোমধ্যে চড়া সূদে মহাজনের কাছ থেকে ‘দাদন/আগাম শ্রম বিক্রি’ ও ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে ঋণ গ্রহণ করতে বাধ্য হচ্ছে এবং নামমাত্র টাকা দরে আগাম বরো ধান কাটার চুক্তিতে আবদ্ধ হচ্ছে। যা তাদের জন্য বরাবরই আত্মঘাতী। কারণ মৌসূমের ফসল উঠা মাত্রই ঋণ মহাজন ও চাল ব্যবাসায়ীরা দ্বিগুণ ও তিনগুণ দরে সেই কর্জ সুদে-আসলে আদায় করবে। এতে করে আদিবাসীরা দিনকে দিন আরো নিঃস্ব ও অসহায় হয়ে পড়বে।

তারা আরো বলেন যে, আজ সারা বিশ্বে যখন করোনাভাইরাস মহামারি আকার ধারণ করেছে তার ফলে সরকারের ঘোষিত লক ডাউনের কারণে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। এই মহামারীর চরম নেতিবাচক প্রভাব মানুষ আস্তে আস্তে অনুধাবন করতে পারছে। একদিকে গ্রামীণ জনপদের আদিবাসী জনগণ এখনও করোনা ভাইরাস নিয়ে তেমন সচেতন নয়। কেউ কেউ এ ভাইরাস এর নাম শুনলেও এর প্রতিরোধে অনেকেই নিয়ম পালন করছে না। প্রয়োজনীয় মাস্ক, হ্যান্ড-সেনিটাইজার, জীবানু-নাশক-স্প্রে ইত্যাদি আদিবাসী এলাকায় ঠিকমতো সরবরাহ করা হচ্ছে না। এ মহামারীর কারণে ঘোষিত সরকারি সহায়তা অধিকাংশ দরিদ্র আদিবাসী পরিবারগুলো পাচ্ছে না। যার ফলে, উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের রাজশাহী ও রংপুর বিভাগের আদিবাসীদের মধ্যে খাদ্য সংকট দেখা দিয়েছে এবং এভাবে চলতে থাকলে আর কিছুদিন পর আদিবাসী পরিবারগুলো খাদ্যের অভাবে চরম দূর্ভোগে পড়বে।

এমতাবস্থায়, তারা বিভিন্ন সংগঠন, সুধীজন, ব্যক্তি নির্বিশেষে সকল মানবিক মূল্যবোধসম্পন্ন মানুষকে এ দুর্যোগে সহযোগিতার হাত প্রসারিত করার আহ্বান জানিয়েছেন। সহযোগিতা প্রদানের জন্য- ব্যাংক হিসাব নাম: Jatiya Adivasi Parishad (নম্বর: ৪২০২-১০২২০০-০০০), Ab Bank Ltd. অথবা, বিকাশ নম্বরে (০১৭১৫৫১৯৩৬০; ০১৭২৩২৯৫৩৪৭; ০১৭১০৪৪০০৯৭)।

Back to top button