আঞ্চলিক সংবাদ

উচ্ছেদ আতংক কাটেনি নাহার পুঞ্জির খাসিয়া আদিবাসীদের

শ্রীমঙ্গল থেকে ফিরে রিপন বানাই, ৪ মে, বৃহস্পতিবার, ঢাকাঃ শ্রীমঙ্গল উপজেলার নাহার খাসিয়া পুঞ্জিতে বহুবছর ধরে বসবাস করছে প্রায় ৮০ টিরও অধিক খাসিয়া পরিবার। যারা সংখ্যায় প্রায় তিন শতাধিক। ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের সীমান্তের কোল ঘেষে এই পুঞ্জির আদিবাসীরা দুর্গম পাহাড়কে তাদের বসবাস উপযোগী করে তোলে অনেক বছর পূর্বেই। জীবিকা নির্বাহের জন্য তাদের ঐতিহ্যগত পেশা পান জুম চাষ গড়ে তুলে খাসিয়ারা। এমনিভাবে যখন জীবন চলছিল খাসিয়াদের ঠিক সেই সময় ২০১২ সালে নাহার চা বাগান কর্তৃপক্ষের লোলুপ দৃষ্টি পরে খাসিয়াদের জীবিকার একমাত্র অবলম্বন পানজুমের সেই গাছ গুলোর উপর। বিপত্তির শুরু তখন থেকেই। যুগ যুগ ধরে সেখানে বসবাসকারী আদিবাসীরা বাধা প্রদান করে।। পরবর্তিতে বিষয়টি নিয়ে আদালতে মামলা হয়। গাছ কাটার স্থগিতাদেশ দেয় আদালত। কিন্তু চা কর্তৃপক্ষ হারতে নারাজ। এবার তারা পুরো পুঞ্জি দখলের ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়। প্রশাসনকে হাতিয়ে নিয়ে নিরীহ চা শ্রমিকদের লেলিয়ে দেয় খাসিয়াদের ভূমি দখল করার জন্য। ২০১৪ সালের জুন মাসে বাগান কর্তৃপক্ষের প্ররোচনায় পুঞ্জিতে দুই শতাধিক চা শ্রমিক পুঞ্জি দখলের উদেশ্যে বসতি নির্মাণের প্রস্তুতি নেয়। শুরুতে পুঞ্জির লোকজন বাধা প্রদান করলেও তা উপেক্ষা করে শ্রমিকেরা ঘর নির্মাণ অব্যাহত রাখলে খাসিয়াদের সাথে শ্রমিকদের সংঘর্ষ বাধে। এতে পাহাড় থেকে পড়ে পাথরের সাথে ধাক্কা লেগে আহত হয় চা শ্রমিক নিতাই তাতী । পরে তিনি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। এই ঘটনায় হত্যা মামলা দায়ের করে চা কর্তৃপক্ষ। আসামী করা হয় পুঞ্জি প্রধান দিবারমিনসহ খাসিয়া নারী পুরুষদের। ষড়যন্ত্রের ফাঁদে পা দিয়ে জীবন দিতে হয় আরেক নিরীহ অসহায় চা শ্রমিকের। সে সময় আমরা নাগরিক প্রতিনিধি দল কথা বলেছিলাম নিতাই তাতীর পরিবারের সাথে। তারা পরিস্কার ভাবে বলেছিলেন খাসিয়াদের সাথে তাদের কোন বিরোধ নেই বরং খাসয়া পুঞ্জিতে অনেক চা শ্রমিক কাজ করে অর্থ উপার্জন করে। খাসিয়ারা তাদের শ্রমের ন্যায্য মূল্য দেয়। হত্যা মামলায় আতংকিত হয়ে পুঞ্জির অধিকাংশ লোকজন গ্রেফ্তার এড়াতে পালিয়ে থাকে। থমথমে অবস্থা বিরাজ করে পুঞ্জিতে। পরবর্তীতে আত্মসমর্পণ করলে আদালত তাদের হাজতে পাঠায়। এরপর উচ্চ আদালত হতে তারা জামিন নেয়। এই ঘটনাগুলো যখন চলমান ঠিক সেসময় কোন ধরনের আইনের তোয়াক্কা না করে প্রশাসন খাসিয়াদের উচ্ছেদ নোটিশ প্রদান করে। বিবাদমান বিষয়ের কোনো সমাধান না করে এভাবে বেআইনি নোটিশ পরে বিভাগীয় কমিশনার স্থগিত করেন। বর্তমানে তিনটি মামলা চলমান রয়েছে। অসহায় এই আদিবাসীদের মামলা চালিয়ে যাওয়া একই সাথে প্রভাবশালী চা বাগান মালিক ও প্রশাসনের বৈরীতায় খাসিয়ারা অন্ধকার দেখছেন। তাদের একটাই দাবি এদেশের নাগরিক হিসেবে তাদের এই ভূমির স্থায়ী বন্দোবস্ত করা। সকলের চোখে মুখে একটাই ভয় এভাবে যদি রাষ্ট্র তাদের তাড়িয়ে দেয় তাহলে তারা আশ্রয়ের জন্য যাবে কোথায়?

Back to top button