উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ৫% কোটা ও সকল আদিবাসী মাতৃভাষায় প্রাথমিক শিক্ষা চালুর দাবি পিসিপি’র
আইপিনিউজ ডেক্স(ঢাকা): আজ ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ ৬২তম শিক্ষা দিবস উপলক্ষে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির পূর্ণাঙ্গ ও যথাযথ বাস্তবায়ন কর, সকল প্রকার সরকারি চাকরিতে ও দেশের সকল উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ৫% কোটা ও সকল আদিবাসী মাতৃভাষার মাধ্যমে প্রাথমিক শিক্ষা চালু করার দাবিতে পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ, রাঙ্গামাটি জেলা শাখার উদ্যোগে মিছিল ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক টিকেল চাকমার সঞ্চালনায় বক্তয্য রাখেন পার্বত্য চট্টগ্রাম যুব সমিতির রাঙ্গামাটির জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক সুমিত্র চাকমা, পিসিপির কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি নিপন ত্রিপুরা ও হিল উইমেন্স ফেডারেশনের সাংগঠনিক সম্পাদক উলি সিং মারমা ও বিএমএসসি রাঙ্গামাটি জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক মংগ্রি মারমা। সমাবেশে পিসিপি, যুব সমিতি, হিল উইমেন্স ফেডারেশন, মহিলা সমিতি ও পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির কর্মীর পাশাপাশি রাঙ্গামাটি শহরের বিভিন্ন উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে প্রায় ১৫০০ অধিক ছাত্র—ছাত্রী অংশগ্রহণ করেন। সমাবেশের আগে কুমার সুমিত রায় জিমনেসিয়াম প্রাঙ্গণ থেকে মিছিল নিয়ে বনরুপার পেট্রোল পাম্প প্রদক্ষিণ করে ডিসি অফিসের সামনে সমবেত হয়। সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন পিসিপি, রাঙ্গামাটি জেলা শাখার সভাপকি জিকো চাকমা। স্বাগত বক্তক্য রাখেন পিসিপি, রাঙ্গামাটি জেলা শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক সুমন চাকমা।
উক্ত বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ পার্বত্য চট্টগ্রাম যুব সমিতির রাঙ্গামাটি জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক সুমিত্র চাকমা বলেন, ১৯৬২ পূর্ব পাকিস্তানের সামরিক শাসক আইয়ুব খান যে গণবিরোধী বৈষম্যমূলক শিক্ষা নীতি চালু করেছিল সেটা স্বাধীনতার ৫৩ বছরেও বাংলাদেশে আমরা লক্ষ্য করি। আমরা বারে বারে দেখেছি শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে দুর্নীতিবাজদের একটা লড়াই প্রতিনিয়ত চলছে। জেলা পরিষদ পুণর্গঠন নয় বরং জেলা পরিষদ পার্বত্য চুক্তি মোতাবেক নির্বাচন দেওয়া হোক।
ছাত্র সমাজের প্রতি বলেন নিজেদের অধিকার প্রতিষ্ঠা করার জন্য নিজেরা লড়াই সংগ্রাম করে আদায় করতে হবে এবং সেইভাবে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন চালিয়ে নিতে হবে। তিনি অন্তবর্তীকালীন সরকারের কাছে পার্বত্য চুক্তি পূর্ণাঙ্গ ও যথাযথ বাস্তবায়ন করে সকল প্রকার সরকারি চাকুরিতে ও দেশের সকল উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আদিবাসীদের ৫% কোটা বহাল রাখার দাবি জানান।
পিসিপি কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি নিপন ত্রিপুরা বলেন, শিক্ষা হলো একটি নাগরিকের মৌলিক অধিকার। সংবিধানে গণমুখী, সার্বজনীন ও অবৈতনিক শিক্ষা ব্যবস্থা প্রণয়নের কথা বলা হয়েছে। কিন্তু আজকে আমরা সেটা দেখতে পায়না। বাংলাদেশে বর্তমানে নানা ধারার শিক্ষা ব্যবস্থা চালু আছে। শিক্ষা ব্যবস্থাকে ব্যবসায়িক রুপ দিয়ে বাংলাদেশ সরকার জনগণের সাথে প্রতারণা করেছে, বৈষম্য করছে। সকল ক্ষেত্রে বৈষম্য দূরীকরণের জন্য সংবিধান সংশোধন করা জরুরী। বাংলাদেশের সংবিধানে আদিবাসীদের জাতিগত পরিচয় বাঙালি হিসেবে পরিচয় চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে। আদিবাসীদের উপড় দমন পীড়ন জারি রেখেছে উগ্র সাম্প্রদায়িক সরকার। আদিবাসীরা একদিন স্বনির্ভর ছিল। কিন্তু তাদেরকে ক্রমাগত ভাবে স্বভূমি থেকে উচ্ছেদ করে, তাদের সম্পত্তি দখল করা হচ্ছে। এজন্য রাষ্ট্রই দায়ী। পার্বত্য চট্টগ্রামে শিক্ষা ক্ষেত্রে বৈষম্য, দুর্নীতি ও অনিয়ম হয় মূলত পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি যথাযথভাবে বাস্তবায়ন না হওয়ার কারণে।
তিনি বলেন আজকে জেলা পরিষদ পুনর্গঠনের কথা বলা হচ্ছে। কিন্তু গণমুখী পরিষদ গঠন করতে হলে আগে পার্বত্য চুক্তি মোতাবেক স্থানীয় ভোটার তালিকা প্রণয়নের মাধ্যমে নির্বাচন দিতে হবে।
হিল উইমেন্স ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক উলিচিং মারমা বলেন, পার্বত্য চুক্তি অনুযায়ী অনগ্রসর আদিবাসীদের জন্য শিক্ষা ও চাকরি সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিশেষ সুবিধা দেওযার কথা থাকলেও সেটি বাস্তবায়ন করা হয় না। উপরন্তু আদিবাসী শিক্ষার্থীরা মৌলিক শিক্ষা থেকে বঞ্চিত। বিজ্ঞানভিত্তিক শিক্ষা ব্যবস্থা পাহাড়ে নেই। জেলা পরিষদে শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে চরম দুর্নীতি করা হয়। চুক্তি অনুযায়ী আদিবাসীদের স্ব স্ব মাতৃভাষায় পাঠদানের ব্যবস্থা করার কথা থাকলে তার বাস্তবে করা হয়নি। পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি মোতাবেক পাহাড়ের সমস্ত সমস্যার সমাধান করতে হবে।
সংহতি বক্তব্যে বিএমএসসি রাঙ্গামাটি জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক মংগ্রি মারমা বলেন, আমরা পার্বত্য চট্টগ্রামের ভিন্ন ভাষাভাষী ১৪ টি আদিবাসী জনগণ ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত। আদিবাসীদের জন্য সকল প্রকার সরকারি চাকুরিতে বরাদ্দ ৫% কোটা ১% এ নামিয়ে এনে আদিবাসীদের সাথে চরম বৈষম্য করা হয়েছে। আদিবাসীদের অধিকার নিশ্চিত করতে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির দ্রুত ও যথাযথভাবে বাস্তবায়ন করতে হবে।
সভাপতির বক্তব্যে জেলা শাখার সভাপতি জিকো চাকমা স্বাধীনতার ৫৩ বছরেও বাংলাদেশে যে ৫০টির অধিক জাতিগোষ্ঠী রয়েছে সেই জাতিগোষ্ঠীর সন্তানেরা নিজস্ব মাতৃভাষায় প্রাথমিক শিক্ষায় শিক্ষিত হতে পারছে না। বৃহৎ জাতির সাথে সমানতালে চলতে পারছে না। বিগত ১৬টি বছর আওয়ামীলীগ সরকার থাকার পরেও পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি মৌলিক বিষয় সমূহ বাস্তবায়ন করেনি। আমরা অন্তবর্তীকালীন সরকারের কাছে আমরা দাবি রাখতে চাই অবিলম্বে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়ন করে বাংলাদেশের ৫০টির অধিক আদিবাসী জাতিগোষ্ঠী যাহাতে বৃহৎ জাতিগোষ্ঠীর সাথে শিক্ষায় সমানতালে মর্যাদা পায় আর আদিবাসীদের সকল প্রকার সরকারি চাকরিতে ও দেশের সকল উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ৫% কোটা চালু রাখার দাবি জানিয়ে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ সমাপ্তি ঘোষণা করেন।