ইসিকে ৩ বাম দলের ১৮ দফা সুপারিশ
আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অবাধ, নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু করতে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি), বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ) ও বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি যৌথভাবে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) কাছে ১৮ দফা সুপারিশ দিয়েছে। আজ মঙ্গলবার আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে সিইসির কার্যালয়ে এক বৈঠকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নূরুল হুদার কাছে এসব সুপারিশ তুলে ধরেন এই তিন বাম দলের নেতারা।
সিপিবি, বাসদ ও বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির ১৮ দফা সুপারিশ হচ্ছে-
১) জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার জন্য জামানতের পরিমাণ সর্বোচ্চ ৫ (পাঁচ) হাজার টাকা করতে হবে।
২) ভোটার তালিকার সিডি কেনার বাধ্যবাধকতা বাতিল করে প্রার্থীদেরকে বিনামূল্যে ভোটার তালিকা সরবরাহ করতে হবে।
৩) জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সকল প্রার্থীর জন্য টিআইএন বাধ্যতামূলক করার পরিবর্তে কেবল যে সব প্রার্থীর আয় করারোপযোগ্য সীমার উর্ধ্বে তাদের ক্ষেত্রে টিআইএন বাধ্যতামূলক করতে হবে।
৪) জাতীয় নির্বাচনে অনলাইনে মনোনয়নপত্র জমা দেবার বিধান চালু করতে হবে। এতে মনোনয়পত্র জমা প্রদানকে কেন্দ্র করে উত্তেজনা, সহিংসতা রোধ করা যাবে।
৫) জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর থেকে নির্বাচনী প্রক্রিয়া শেষ না হওয়া পর্যন্ত জাতীয় নিরাপত্তা ব্যতীত বেসামরিক প্রশাসন, সশস্ত্র বাহিনীসহ যাবতীয় আইন-শৃংখলা রক্ষকারী বাহিনী, মন্ত্রী পরিষদ বিভাগ, স্বরাষ্ট্র, জনপ্রশাসন, অর্থ, তথ্য ও স্থানীয় সরকার বিষয়ক মন্ত্রণালয়সহ নির্বাচনের সাথে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়সমূহ নির্বাচন কমিশনের প্রত্যক্ষ তত্ত¡াবধানে পরিচালিত হবে।
৬) জাতীয় সংসদ নির্বাচনে রাজনৈতিক দলের মনোনীত প্রার্থী হতে হলে কোন ব্যক্তিকে কমপক্ষে ৫ (পাঁচ) বছর সংশ্লিষ্ট রাজনৈতিক দলের সদস্য হিসেবে সক্রিয় থাকতে হবে। চিহ্নিত দুর্নীতিবাজ, কালো টাকার মালিক, ঋণখেলাপি, সরকারি সম্পদ আত্মসাৎকারি, অর্থসহ জাতীয় সম্পদ পাচারকারি, ফৌজদারি অপরাধে দন্ডিত, চিহ্নিত যুদ্ধাপরাধী, মানবতাবিরোধী অপরাধী প্রভৃতি গণবিরোধী ব্যক্তিদের নির্বাচনে প্রার্থী হবার সুযোগ দেয়া যাবে না।
৭) দলের মনোনয়ন প্রাপ্তির ক্ষেত্রে তৃণমূল থেকে স্বচ্ছ মনোনয়ন প্রক্রিয়ার ব্যবস্থা বাধ্যতামূলক করতে হবে। মনোনয়ন বাণিজ্য রোধকল্পে নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে নিবিড় পর্যবেক্ষণসহ কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহন করতে হবে।
৮) প্রতিটি নির্বাচনী এলাকায় নির্বাচন কমিশনের উদ্যোগে প্রার্থীদের পরিচিতি সভা আয়োজন করতে হবে।
৯) জাতীয় সংসদ নির্বাচনে একজন প্রার্থীর নির্বাচনী ব্যয়ের সর্বোচ্চ সীমা কমিয়ে ৩ লাখ টাকা নির্ধারণ করতে হবে।
১০) প্রতিটি নির্বাচনী এলাকায় একজন কর্মকর্তাকে প্রার্থীদের নির্বাচনী ব্যয় সার্বক্ষণিকভাবে মনিটর করা এবং নির্বাচন কমিশনকে সে সম্পর্কে দৈনন্দিন ভিত্তিতে রিপোর্ট প্রদানের ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। প্রার্থী ও তার পরিবারের সদস্যদের সম্পদের পূর্ণ বিবরণী এবং প্রার্থীর নির্বাচনী আয়-ব্যয়ের হিসাব সর্বসাধারণের জ্ঞাতার্থে উন্মুক্ত দলিল হিসেবে রাখতে হবে এবং প্রচার মাধ্যমকে তা সরবরাহ করতে হবে। যেকোনো ভোটারকে এসব বিবরণী ও হিসাবের তথ্য চ্যালেঞ্জ করার সুযোগ দিতে হবে।
১১) নির্বাচনী কাজের আয়-ব্যয়ের হিসাব নির্বাচন অনুষ্ঠানের ৭ দিনের মধ্যে জমা দিতে হবে এবং তা করতে না পারলে নির্বাচিত সদস্যের শপথ গ্রহণ বন্ধ রাখতে হবে। ঐ বিবরণীর যথার্থতা যাচাইয়ের ব্যবস্থা করতে হবে। আয়-ব্যয় ও সম্পদের মিথ্যা তথ্য প্রদানকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা নিতে হবে।
১২) নির্বাচনে যে কোনো প্রকার বল প্রয়োগ, অস্ত্র বহন ও প্রদর্শন ইত্যাদি সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করতে হবে এবং এ ধরনের ঘটনায় কঠোর শাস্তির বিধান করতে হবে। কোনো প্রার্থী অথবা রাজনৈতিক দলের পক্ষে পেশিশক্তির মহড়া, প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে ভয়-ভীতি প্রদর্শন, নির্বাচনী কাজে সন্ত্রাসী-অপরাধী ব্যক্তিকে ব্যবহার ইত্যাদি কঠোরভাবে রোধ করতে হবে। এরুপ অনুকূল পরিবেশ নিশ্চিত করার জন্য নির্বাচন কমিশনকে তার বিবেচনামত বিভিন্ন রাষ্ট্রীয় বাহিনী নিয়োগ করতে হবে।
১৩) নিবাচনে ধর্মের সর্বপ্রকার অপব্যবহার ও সাম্প্রদায়িক প্রচার-প্রচারণার ভিত্তিতে ভোট চাওয়া নিষিদ্ধ এবং শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে গণ্য করতে হবে। ধর্মীয় উপাসনালয়, মসজিদ, মন্দির, গীর্জা, মঠ, ওয়াজ মাহফিল, ধর্মসভায় প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ কোনো প্রকার নির্বাচনী প্রচার, পোস্টার-হ্যান্ডবিল বিলি নিষিদ্ধ করতে হবে। ‘আঞ্চলিকতা’র ধুয়া তুলে প্রচারণা ও ভোট চাওয়া নিষিদ্ধ করতে হবে।
১৪) পোস্টার, লিফলেট, বৈদ্যুতিক বিজ্ঞাপন, মাইক, নির্বাচনী ব্যানার, দেয়াল লিখন, গেইট নির্মাণ ইত্যাদি বিষয়ে যেসব নিয়ন্ত্রণমূলক ব্যবস্থা আছে তার ব্যতিক্রমহীনভাবে পালন নিশ্চিত করতে নির্বাচন কমিশনকেই ‘সুয়োমটো’ ব্যবস্থা নিতে হবে। বিশেষ দায়িত্বপ্রাপ্ত স্থানীয় নির্বাচন কর্মকর্তার মাধ্যমে সকল প্রার্থী ও দলের মহাসমাবেশ, সমাবেশ, র্যালি, জনসভা ও অন্যান্য সকল নির্বাচনী কার্যক্রমের ক্ষেত্রে আচরণবিধি ও অন্যান্য বিধি-বিধান মেনে চলা হচ্ছে কিনা তা পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে মনিটরিং ও কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। এসব প্রতিটি বিষয়ে নির্বাচন কমিশনের তত্ত্বাবধানের ব্যবস্থা রাখতে হবে এবং লঙ্ঘনকারীদের প্রার্থীতা বাতিল করতে হবে।
১৫) নির্বাচনী এলাকার সীমানা নির্ধারণের জন্য প্রকাশ্য শুনানীর ব্যবস্থা আরো স্বচ্ছ, উন্মুক্ত ও কার্যকর করতে হবে। সাধারণভাবে ভোটারের সম-সংখ্যার ভিত্তিতে নির্বাচনী এলাকার সীমানা নির্ধারণ করতে হবে।
১৬) প্রিসাইডিং অফিসার, সহকারি প্রিসাইডিং অফিসার ও পোলিং অফিসারদের তালিকা এবং ভোট গ্রহণ কেন্দ্রের তালিকা নির্বাচনের কমপক্ষে দুই সপ্তাহ আগেই প্রার্থীদের সরবরাহ করতে হবে, যাতে এ বিষয়ে কারো কোনো আপত্তি থাকলে তা নির্বাচনের আগেই নিষ্পত্তি করা যায়।
১৭) জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ক্ষেত্রে এখনও পর্যন্ত বাংলাদেশে ইভিএম ব্যবস্থা চালু করার পরিবেশ তৈরি হয়নি। সে জন্য আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ইভিএম ব্যবস্থা চালু না করাই সমচীন হবে।
১৮) রাজনৈতিক দলের নিবন্ধনের শর্তাবলী দশের সংবিধানের সাথে অসংগতিপূর্ণ। কোন কোন ক্ষেত্রে সাংঘর্ষিকও। আরপিও’র এসব অগণতান্ত্রিক ও অসাংবিধানিক ধারাসমূহ বাতিল করতে হবে। স্বতন্ত্র প্রার্থীদের ১ (এক) শতাংশ ভোটারের স্বাক্ষর সংগ্রহের বিধান অগণতান্ত্রিক বিধায় বাতিল করতে হবে।