অন্যান্য

ঢাকায় এ্যালায়েন্স বিল্ডিং কর্মশালা অনুষ্ঠিত

‘ইম্প্রুভিং ইনডিজিনাস পিপলস একসেস টু জাস্টিস এন্ড ডেভেলেপমেন্ট থ্রু কমিউনিটি বেসড মনিটরিং’ প্রকল্পের এ্যালায়েন্স বিল্ডিং কর্মশালা আজ ১৩ ডিসেম্বর ২০১৭ তারিখ সকাল ১০টায় গ্রান্ড বলরুম এসকট প্যালেসে অনুষ্ঠিত হয়েছে। ইউরোপীয়ান ইউনিয়নের আর্থিক সহযোগিতায় এই কর্মশালার আয়োজন করে মানবাধিকার সংগঠন কাপেং ফাউন্ডেশন ও আর্ন্তজাতিক শ্রম সংস্থা।
কাপেং ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক পল্লব চাকমা এর সভাপতিত্বে এই কর্মশালার উদ্বোধনীর আলোচনা সভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যূরোর সম্মানিত পরিচালক মো: কবির উদ্দিন আহমদ। সম্মানিত অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন সিপিডি’র ডায়লগ এবং কমিনিকেশন বিভাগের অতিরিক্ত পরিচালক ড. আনিস পারভেজ, বিসিএস প্রশাসন একাডেমীর সিনিয়র সহকারী সচিব, মাহমুদুল হক মনি, বিশিষ্ট মানবাধিকার কর্মী ও জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সদস্য ড. মেঘনা গুহ ঠাকুরতা প্রমুখ। স্বাগত বক্তব্য এবং প্রকল্পের পরিচিতমূলক সারসংক্ষেপ তুলে ধরেন আর্ন্তজাতিক শ্রম সংস্থার প্রতিনিধি আলেক্সসিউস চিছাম।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে মো: কবির উদ্দিন আহমদ বলেন, আদিবাসী নেভিগেটর প্রকল্পটি’র মাধ্যমে বাংলাদেশের আদিবাসী জনগণ নিজেরাই নিজেদের পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন করবে বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে এটি সত্যিই প্রশংসনীয় উদ্যোগ। এমডিজি উত্তর বাংলাদেশে এসডিজি’র ভিশন ২০৩০ সাফল্য অর্জনে এই উদ্যোগ সরকারকে সহায়তা করবে। তিনি বলেন, আগ্রহী কোন ব্যাক্তি বা প্রতিষ্ঠান নিজ উদ্যোগে কোন বিষয়ে তথ্য গ্রহন করার যদি দেখেন সেটার ব্যবধান সরকারি পরিসংখ্যানের সাথে বিস্তর। তাহলে সে ব্যাক্তি বা প্রতিষ্ঠান জাতীয় পরিসংখ্যান কর্মকর্তার বরাবর তাদের সেই সংগ্রহীত তথ্য উপাত্ত জমা দিতে পারেন। তিনি আশ্বস্ত করে বলেন বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যূরো এই ব্যাপারে সার্বিক সাহায্য সহযোগিতা করবেন।
মাহমুদুল হক মনি বলেন, আদিবাসীদের উন্নয়নের জন্য সর্বোপরি দেশের সার্বিক উন্নয়নের জন্য আদিবাসী বিষয়ে কাজ করার ক্ষেত্রে সরকারি কর্মকর্তা এবং আদিবাসী প্রতিনিধিদের আন্তরিক হতে হবে। ড. আনিস পারভেজ বলেন, মাঠ পর্যায়ের সঠিক তথ্য উপাত্ত তুলে আনার মাধ্যমে প্রান্তিক আদিবাসী জাতিগোষ্ঠীর সম্মিলিত কন্ঠস্বর’কে সরকারের বিভিন্ন মহলে পৌঁছে দিতে সাহায্য করতে পারে নাগরিকদের সুচিন্তিত মতামত ও কার্যক্রম। আদিবাসী নেভিগেটর প্রকল্পের মাধ্যমে প্রাপ্ত লব্ধ তথ্য শোষিত, বি ত আদিবাসী জনগণের কন্ঠস্বর বাংলাদেশের নীতি নির্ধারণে পর্যায়ে পরিবর্তন আনবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন। খুশি কবির বলেন, আদিবাসী নেভিগেটরের মাধ্যমে স্থানীয় পর্যায়ের আদিবাসীদের প্রাপ্ত তথ্য জাতীয় পর্যায়ে আদিবাসীদের জন্য নীতি নির্ধারণে সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণায়গুলোর ব্যবহার করা উচিত। ড. মেঘনা গুহ ঠাকুরতা বলেন, পুঁজিবাদী বিশ্বে আদিবাসীরা প্রান্তিকতার শীর্ষে অবস্থান করছে। রাষ্ট্র বহুজাতিক কোম্পানির শর্তের জালে আবদ্ধ হয়ে আদিবাসীদের স্বার্থ রক্ষায় প্রতিনিয়ত ব্যর্থ হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, আদিবাসী নেভিগেটরের তের’টি সূচকের প্রাপ্ত তথ্যের মাধ্যমে বাংলাদেশের আদিবাসীরা নিজেরাই নিজেদের অস্তিত্বের সংগ্রামকে আরো বেগবান করবে।
সরকারি ও বেসরকারি বিভিন্ন পর্যায়ে আদিবাসী বিষয়ে প্রাপ্তলব্ধ তথ্যের এই সংমিশ্রন দেশের সামগ্রিক উন্নয়নের মাপকাঠিতে আদিবাসীদের প্রতিনিধিত্বকে সঠিকভাবে তুলে ধরতে পারবে। বাংলাদেশের বিভিন্ন অ ল হতে আগত প্রায় ৩০ জনের অধিক আদিবাসী প্রতিনিধি, মানবাধিকার, উন্নয়ন ও গবেষণা সংস্থার প্রতিনিধিবৃন্দ, সরকারি কর্মকর্তাবৃন্দ এবং শিক্ষাবিদবৃন্দ এই এ্যালায়েন্স বিল্ডিং কর্মশালায় উপস্থিত ছিলেন।

এ্যালায়েন্স বিল্ডিং কর্মশালার উদ্বোধণী বক্তব্যে আলেক্সসিউস চিছাম বলেন: এই প্রকল্পের মাধ্যমে আদিবাসীরা আত্মনিয়ন্ত্রনের অধিকারের মধ্যে নিজেদেরকে কিভাবে আরো বেশি অর্ন্তভূক্ত করতে পারবে সে বিষয়ে কাজ করবে। বিশেষ করে স্থানীয়, জাতীয় ও বিশ্বব্যপী এসডিজি পর্যবেক্ষণে তথ্য দিয়ে অবদান রাখা এবং আদিবাসী জনগণ পিছনে পড়ে রয়েছে কি না তা নিরীক্ষণের মাধ্যমে তুলনামুলক তথ্য তৈরীতে আদিবাসীদেরকে সাহায্য করবে প্রকল্পটি।
বৈশ্বিক উন্নয়ন কর্মসূচীতে প্রান্তিক পর্যায়ের মানুষের সংগ্রামের ভাষাকে মূল জন¯্রােতের উন্নয়নের ধারায় অর্ন্তভূক্ত করার জন্য কাপেং ফাউন্ডেশন ও আর্ন্তজাতিক শ্রম সংস্থা এ বছরের মার্চ মাস থেকে বাংলাদেশে ‘ইম্প্রুভিং ইনডিজিনাস পিপলস একসেস টু জাস্টিস এন্ড ডেভেলেপমেন্ট থ্রু কমিউনিটি বেসড মনিটরিং’ প্রকল্পের কার্যক্রম শুরু করেন। আদিবাসী নেভিগেটর প্রকল্পে আদিবাসীদের সুনিদিষ্ট তথ্য-উপাত্ত প্রাথমিক ভাবে ফোকাস গ্রুপ ডিসকাশনের মাধ্যমে মাঠ পর্যায় হতে সংগ্রহ করছেন নির্দিষ্ট জনগোষ্ঠীর প্রশিক্ষিত আদিবাসী প্রতিনিধি ও প্রকল্পে নিয়োজিত কর্মকর্তাবৃন্দ। এই পর্যন্ত সারা বাংলাদেশের ১৫’টি আদিবাসী জাতিগোষ্ঠীর তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ করা হয়েছে। এই তথ্য বিশ্লেষণে প্রান্তিক আদিবাসীদের করুণ চিত্র ফুটে উঠেছে। সংগ্রহীত তথ্য গুলোর ভিত্তিতে জাতীয় পর্যায়ে সরকারের বিভিন্ন নীতি নির্ধারণী মহলে আদিবাসীরা এ্যাডভোকেসীর কাজ করতে পারবে। এই প্রকল্পটি সরকারের বিভিন্ন জাতীয় পর্যায়ের জরিপের সাথে প্রকল্পের মাধ্যমে সংগৃহীত তথ্যের ব্যবধান কমানোর জন্য পরবর্তীতে জাতীয় পরিসংখ্যান কর্মকর্তা’র দপ্তরে প্রাপ্তলব্ধ তথ্য পৌঁছানোর কাজও প্রকল্প করবে। আদিবাসীরা সংগ্রহিত তথ্যের ভিত্তিতে নিজেদের জ্ঞান ভান্ডারকে সমৃদ্ধ করতে পারবে এবং নীতিমালা প্রণয়নের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের সরকারকে সহযোগিতা করতে পারবে। ‘কেউ বাদ যাবে না’ এসডিজির এই শ্লোগানের সহিত আর্ন্তজাতিক মানবাধিকারের মূল সনদ এবং বিশ্ব আদিবাসী সম্মেলনের সব বিষয়গুলোকে অর্ন্তভূক্ত করেই এ প্রকল্পের কার্যক্রম সম্পাদন করা হচ্ছে।

Back to top button