আন্তর্জাতিক আদিবাসী ভাষা বর্ষ হিসেবে পালিত হবে ২০১৯ সাল
আজ ২৮ জানুয়ারি ২০১৯ রোজ সোমবার সকাল ১১:০০ টায় জাতীয় প্রেস ক্লাবের ভিআইপি লাউঞ্জে আন্তর্জাতিক আদিবাসী ভাষা বর্ষ উদযাপন কমিটি একটি প্রেস ব্রিফিং-এর মাধ্যমে ‘আন্তর্জাতিক আদিবাসী ভাষা বর্ষ’ উদযাপনের জন্য গৃহিত বছরব্যাপী কর্মসূচির আনুষ্ঠানিক ঘোষণা করা হয়। উদযাপন কমিটির পক্ষে কর্মসূচি ঘোষণা করেন কমিটির আহবায়ক লেখক ও গবেষক মথুরা বিকাশ ত্রিপুরা। ঘোষণায় তিনি বাংলাদেশে বিদ্যমান বিভিন্ন জাতিসমূহের ভাষা সুরক্ষা ও বিকাশে এগিয়ে আসার আহবান জানান। অনুষ্ঠানটি উপস্থাপন করেন কমিটির সদস্য সচিব কলামিস্ট ও লেখক বাঁধন আরেং। প্রেস ব্রিফিং-এ উপস্থিত ছিলেন- সন্ধ্যা মালো, গণেশ সরেন, লালসা চাকমা, মংচিন থান, মিঠুন কুমার উরাও, প্রহলাদ বর্মন, অমল বিকাশ ত্রিপুরা প্রমূখ।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, জাতিসংঘ কর্তৃক ঘোষিত আন্তর্জাতিক আদিবাসী ভাষা বর্ষ ২০১৯ উদযাপনের জন্য ৪ ধরণের কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। কর্মসূচিগুলোর মধ্যে রয়েছে- ১) ইস্যুভিত্তিক বিভিন্ন কনফারেন্স করা, ২) সক্ষমতা উন্নয়নমূলক বিভিন্ন কর্মসূচি বাস্তবায়ন, ৩) সাংস্কৃতিক কার্যক্রমের মাধ্যমে প্রচারনামূলক কার্যক্রম, ও ৪) মিডিয়া মবিলাইজেনমূলক কার্যক্রম।
গৃহিত কর্মসূচিগুলো নিম্নরূপ:-
১। কনফারেন্স:
ক) ফেব্রুয়ারি মাসে মহান ভাষা শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে বিভিন্ন সেমিনার ও আলোচনাচক্র আয়োজন। এই আয়োজনে সরকারি- বেসরকারি বিভিন্ন সংস্থার সিদ্ধান্ত গ্রহণকারী কর্তৃপক্ষ ও কর্মকর্তা, শিক্ষক, গবেষক, লেখকসহ বিশিষ্টজনরা অংশগ্রহণ করবেন। সরকারি প্রতিষ্ঠানসমূহের মধ্যে শিক্ষা মন্ত্রণালয়, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়, পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট, জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড, পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ ও পার্বত্য জেলা পরিষদসমূহসহ সংশ্লিষ্ট আরো অনেক বিভাগ ও মন্ত্রণালয়কে বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মসূচিতে সম্পৃক্ত করা হবে।
খ) বিভিন্ন জাতিসত্তার শিক্ষকদের একটি বা একাধিক শিক্ষক সমাবেশের আয়োজন করা হবে। এই সমাবেশের মাধ্যমে সরকার কর্তৃক গৃহিত মাতৃভাষায় শিক্ষা কর্মসূচি বাস্তবায়নে শিক্ষকদের ভূমিকা নিয়ে আলোচনা করা যেতে পারে, যেখানে শিক্ষকগণও তাঁদের অবস্থান থেকে এই কর্মসূচি বাস্তবায়নে অঙ্গীকার ব্যক্ত করবেন।
গ) নিজ নিজ মাতৃভাষায় যাঁরা লেখালেখি চর্চা করেন, তাঁদের জন্য একটি লেখক সমাবেশের আয়োজন করা হবে। এই সমাবেশের মাধ্যমে নিজ নিজ মাতৃভাষা চর্চাকে উৎসাহিত করা হবে।
২। সক্ষমতা উন্নয়ন:
ক) দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বিদ্যমান ভাষাগুলোকে ডকুমেন্টেশন করার জন্য আঞ্চলিক মতবিনিময় কাম ভাষা ডকুমেন্টশেন কর্মশালার আয়োজন করা হবে। বিভিন্ন জাতিসত্তার অবস্থান অনুসারে আপাতত পুরো দেশটিকে ৮টি জোনে বিভাজন করে কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে। পরবর্তীতে প্রয়োজন অনুসারে সাব-জোনাল পর্যায়েও কার্যক্রম পরিচালনা করা যেতে পারে। বর্তমান পরিকল্পনা অনুসারে ১) পার্বত্য চট্টগ্রাম, ২) গাজীপুর ও ঢাকা, ৩) উপকূল অঞ্চল, ৪) বারিশাল, ৫) উত্তর বঙ্গ ১, ৬) উত্তর বঙ্গ ২, ৭) বৃহত্তর চট্টগ্রাম ও ৮) বৃহত্তর সিলেট অঞ্চল। এই কর্মশালার মাধ্যমে বিভিন্ন জাতিসত্তার প্রতিনিধিবৃন্দকে তাদের নিজ নিজ মাতৃভাষার বর্তমান অবস্থা চিহ্নিত করতে এবং সেসব নির্ধারিত পদ্ধতি অনুসরণ করে ভাষা ডকুমেন্টেশন করার প্রক্রিয়া সম্পর্কে ওরিয়েন্টেশন করা হবে এবং হাতে কলমে তা করতে সহায়তা করা হবে।
খ) নির্ধারিত অঞ্চলগুলোতে বিভিন্ন জাতিসত্তার যুবসমাজের অংশগ্রহণে ডিজিটাল ডিভাইস ব্যবহার করে ভাষা ডকুমেন্টেশন করার পদ্ধতি বিষয়ে ওরিয়েন্টেশন করা হবে।
গ) নির্ধারিত অঞ্চলগুলোতে বিভিন্ন জাতিসত্তার বয়স্ক নারীদের অংশগ্রহণে ‘প্রজন্ম সংলাপ’-এর আয়োজন করা। এই সংলাপে যুব নারী ও বয়স্ক নারীদের মধ্যে ভাষার অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যত নিয়ে আলোচনা করা হবে।
৩। সাংস্কৃতিক কার্যক্রম:
ক) বাংলাদেশে বিদ্যমান বিভিন্ন ভাষার হরফ হস্তাক্ষরে ও ডিজিটাল পদ্ধতিতে লিখে তা প্রদর্শনীর ব্যবস্থা করা।
খ) মাতৃভাষার পরিস্থিতি, অবস্থা ও করণীয় বিষয়ক সৃজনশীল আইডিয়া সংগ্রহ করার জন্য অংকনশিল্পীদের পোস্টার অংকন প্রতিযোগিতার আয়োজন করা।
গ) পোস্টার অংকন প্রতিযোগিতায় যেসব পোস্টার সেরা হিসেবে বিবেচিত হবে, সেগুলোকে বাইন্ডিং করে প্রদর্শনীর ব্যবস্থা করা।
৪। মিডিয়া:
ক) বাংলাদেশের বিভিন্ন জাতিসত্তার মাতৃভাষার অবস্থা বিষয়ে বিভিন্ন টিভি চ্যানেলে টিভি টকশো, স্পেশাল ফিচার, আলোচনাচক্র ইত্যাদি আয়োজন করা।
খ) পোস্টার প্রতিযোগিতা হতে বাছাই করে সেরা পোস্টারগুলো ছাপিয়ে প্রকাশ ও প্রচার করা।
গ) মাতৃভাষা বিষয়ক বিভিন্ন বইপুস্তক ও ম্যাগাজিন প্রকাশ করা।