মতামত ও বিশ্লেষণ

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসঃ ইউনেস্কো মহাপরিচালকের বাণী

“আমাদের ভাষা সর্বোপরি চোখের জল ফেলছে কারণ তার নিজের সন্তানেরা এটিকে নির্বাসনে দিচ্ছে, ভারী বোঝা কাঁধে তুলে দিয়ে একা ফেলে রেখে চলেছে” – সেনেগাল এর আদিবাসী কবি উসেইনো গেই কোসান-এর লেখা ‘উলোফ’ ভাষার কবিতা হতে।

ইউনেস্কো প্রত্যেকটি মাতৃভাষার পরিচিত লাভ, স্বীকৃতি দান এবং মানুষের জীবনের সমস্ত ক্ষেত্রে অধিক গুরুত্ব দেয়। এটি যে সবসময় হয়ে ওঠে তা কিন্তু নয়। পৃথিবীর অনেক মাতৃভাষারই রাষ্ট্রভাষা হিসেবে, সরকারী কার্যালয়ের ভাষা হিসেবে, বা নির্দেশনার ভাষা হিসেবে কোন মর্যাদা নেই। এই পরিস্থিতি মাতৃভাষাকে অবমূল্যায়ন এবং চিরতরে বিলুপ্তির পথে ধাবিত করে।

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস স্বীকৃতির এই বিশতম বার্ষিকী উপলক্ষে আমাদের অবশ্যই মনে রাখতে হবে যে, সকল মাতৃভাষাকে বিবেচনায় আনতে হবে এবং শান্তি বজায় রাখা ও টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্য পূরণে সকল ভাষার প্রতি গুরুত্ব দিতে হবে।

মাতৃভাষা শিক্ষাক্ষেত্রে খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে কারণ এটি স্কুলের প্রথম বছরে পড়া এবং লেখার মৌলিক দক্ষতা অর্জনের পাশাপাশি মৌলিক সংখ্যাজ্ঞান অর্জনে সহায়তা করে। এই দক্ষতা মানুষের ব্যক্তিত্ব বিকাশে ভিত্তি প্রস্তুত করে। সে সাথে মাতৃভাষা হলো সৃজনশীল বৈচিত্র্য এবং পরিচয়ের একটি অনন্য অভিব্যক্তি, এবং এটি জ্ঞান এবং উদ্ভাবনেরও একটি উৎস।

অনেক কিছু করা বাকী আছে। বিদ্যালয়ের প্রথম বছরগুলিতে এখনো খুবই কম শিশুর জন্যই মাতৃভাষায় শিক্ষা দানের নির্দেশনা রয়েছে। ইউনেস্কোর মতে, বিশ্বব্যাপী প্রায় ৪০ শতাংশ জনগোষ্ঠী যে ভাষায় কথা বলে বা তাদের ভাব বিনিময় করে সেই ভাষায় শিক্ষা গ্রহণের সুযোগ হতে বঞ্চিত। এই অবস্থায় গবেষণাটি বলছে সাধারণ শিক্ষা এবং অন্যান্য ভাষা শেখার ক্ষেত্রে মাতৃভাষা চর্চার গুরুত্ব অনেক।

আদিবাসীরা সর্বদা তাদের নিজস্ব মাতৃভাষায় শিক্ষার গ্রহণের জন্য ইচ্ছা প্রকাশ করেছে, আদিবাসী অধিকার বিষয়ক জাতিসংঘ ঘোষণাযপত্রেও এটি উল্লেক রয়েছে। ২০১৯ সাল আদিবাসীদের ভাষার আন্তর্জাতিক বর্ষ হিসেবে ঘোষিত হয়েছে। এ বছরের আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের থিমটি উন্নয়ন, শান্তিও পূনর্মিলনের ক্ষেত্রে আদিবাসীদের ভাষা একটি স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য বহন করবে।

পৃথিবীতে প্রায় ৩৭ কোটি আদিবাসী জনসংখ্যা রয়েছে এবং এ পৃথিবীর প্রায় ৭০০০ জীবিত ভাষার অধিকাংশই এই আদিবাসী মানুষের। অনেক আদিবাসী মানুষ প্রতিনিয়ত প্রান্তিককরণ, বৈষম্য ও চরম দারিদ্র্যে ভুগছে এবং মানবাধিকার লংঘনের শিকার হচ্ছে।

‘কাউকে পেছনে ফেলে নয়’ এই উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট ৪ নং লক্ষ্যের আলোকে আদিবাসীদের তাদের নিজস্ব ভাষায় শিক্ষা লাভের সুয়োগ রয়েছে।

এই আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে, আমি এইভাবে সকল ইউনেস্কো সদস্য রাষ্ট্র, আমাদের অংশীদার এবং শিক্ষাগত অংশীদারকে আদিবাসী অধিকারগুলি সনাক্ত এবং প্রয়োগ করার জন্য আমন্ত্রণ জানাচ্ছি।

মিস.অড্রি অ্যাজ্যুউলে, মহাপরিচালক ইউনেস্কো
২১ শে ফেব্রুয়ারি ২০১৯
…………………………
বাংলায় অনুবাদ
সোহেল হাজং, কেন্দ্রীয় সদস্য বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরাম

Back to top button