জাতীয়

আন্তর্জাতিক নারী দিবসে ৫ আদিবাসী নারীকে শুভেচ্ছা স্মারক প্রদান

অনন্ত বিকাশ ধামাই, ঢাকা: বাংলাদেশ আদিবাসী নারী নেটওয়ার্ক কর্তৃক আয়োজিত আন্তর্জাতিক নারী দিবসের কর্মসূচিতে অগ্রগামী আদিবাসী নারীদের শুভেচ্ছা স্মারক প্রদান করা হয়। ৮ মার্চ, শুক্রবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলার বকুলতলায় এই অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়। পাঁচ অগ্রগামী আদিবাসী নারীদের সংক্ষিপ্ত পরিচিতি নিয়ে আমাদের এই আয়োজন।

লাভলী চাকমা, ভাস্করঃ রাঙ্গামাটির মেয়ে লাভলী চাকমা চট্টগ্রামের সোনারগাঁও উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাস করেছেন। বাবার সরকারী চাকুরীর সুবাদে দেশের বিভিন্ন জায়গায় তাঁর শৈশব ও স্কুল জীবন কেটেছে। পরবর্তীতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইনস্টিটিউট থেকে ব্যাচেলর ডিগ্রি লাভ করেন। সেখানে তিনি ভাস্কর্য্ বিভাগে প্রথম শ্রেণী লাভ করেন। পরবর্তীতে উচ্চ শিক্ষা গ্রহণের জন্য কলকাতায় চলে যান। কলকাতায় রবীন্দ্র ভারতী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ভিস্যুয়াল আর্টের ওপর মাস্টার্স ডিগ্রি লাভ করেন। সেখানেও তিনি ভাল ফলাফল করেন এবং ভাস্কর্য্ বিভাগে প্রথম শ্রেণীতে উত্তীর্ণ হন । কলকাতায় তিনি বার্ষিক চিত্র প্রদর্শনীতে স্বর্ণ পদক অর্জন করেন। এছাড়াও তিনি রবীন্দ্র ভারতী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ‘নিরোদ বরণ স্মৃতিস্মারক’ ও ‘ভূনাথ মুখার্জী স্মৃতি পুরস্কার’ অর্জন করেন। কলা, সঙ্গীত এবং নৃত্যে পারদর্শীতার জন্যে জাতীয় ও আন্তজার্তিক পর্যায়ে বিভিন্ন পুরস্কার লাভ করেছেন। জলরঙের উপর তার একটি চিত্র ঢাকার জাতীয় জাদুঘরে এবং রবীন্দ্র ভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে সংগ্রহ শালায় লাভলী চাকমার নির্মিত একটি ভাস্কর্য রয়েছে। তিনি সময় পেলে লেখালেখিও করেন। রাঙ্গামাটির জুম ইসথেথিক কাউন্সিলের প্রকাশনায় চাকমা গয়নার উপর তাঁর একটা লেখাও রয়েছে। বর্তমানে উত্তরার আগাখান বিদ্যালয়ে কর্মরত আছেন। লাভলী চাকমা ভাস্কর্য হিসেবে সাফল্যের ধারাবাহিকতা বজায় রেখে চলেছেন।

জ্যোতিস্বী চাকমা, ঢাবি শিক্ষকঃ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পালি ও বুদ্ধিস্ট স্টাডিজ বিভাগে পড়াশোনা শেষ করে সেখানেই প্রভাষক পদে কর্মরত আছেন জ্যোতিস্বী চাকমা । পিতা- ত্রিদীপ প্রসাদ চাকমা ও মা – বিরলা চাকমা। বাড়ি রাঙ্গামাটি জেলার বাঘাইছড়ি। ২০০০ সালে রাঙ্গামাটি সরকারী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি এবং ২০০৩ সালে রাঙ্গামাটি সরকারী কলেজ থেকে মানবিক বিভাগে পাস করেন। ২০০৩-২০০৪ শিক্ষাবর্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পালি ও বুদ্ধিস্ট স্টাডিজ বিভাগে ভর্তি হন। তিনি অনার্স ও মাস্টার্সে প্রথম শ্রেনীতে প্রথম হন। ২০১৪ সালে জ্যোতিস্বী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন।

মহুয়া হাজং, পুলিশ সার্জেন্টঃ হাজং জাতির প্রথম নারী পুলিশ সার্জেন্ট। ১৯৯০ সালে মধ্যবিত্ত পরিবারে নেত্রকোনা জেলার জন্মগ্রহণ করেন। ময়মনসিংহের আনন্দমোহন কলেজ থেকে সমাজবিজ্ঞান বিষয়ের উপর স্নাতক ও স্নাকত্তোর সম্পন্ন করেন। ছাত্রজীবন থেকে তিনি বাংলাদেশ হাজং ছাত্র সংগঠনের সাথে জড়িত এবং কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি ছিলেন। ২০১৭ সালে ২৫তম ব্যাচে পুলিশ সার্জেন্ট হিসেবে যোগদান করেন। বর্তমানে তিনি ঢাকা রমনায় সার্জেন্ট পদে কর্মরত আছেন।

ডমেপ্রু মারমা হ্যাপী, সংবাদ কর্মীঃ একজন নারী সাংবাদকর্মী। সকলের কাছে হ্যাপী নামে পরিচিত। পিতা- অংচ মং এবং মা-খ্যাইনুপ্রু। বাবার চাকরির সুবাদে রাজশাহী ক্যান্টনমেন্ট স্কুল থেকে ২০০৩ সালে এসএসসি এবং নিউ গর্ভমেন্ট কলেজ থেকে ২০০৫ সালে এইচএসসি পাশ করেন। এরপর ফ্যাশন ডিজাইনের উপর ডিপ্লোমা সম্পন্ন করেন। ২০১২ সালে একুশে টিভির বান্দরবান প্রতিনিধি হিসেবে যোগদান করেন। ২০১৩ সাল থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত চ্যানেল টোয়েন্টিফোরে সংবাদ পাঠিকা হিসেবে কর্মরত ছিলেন। বর্তমানে তিনি নিউজ টোয়েন্টিফোরে সংবাদ পাঠিকা এবং রিপোর্টার হিসেবে কর্মরত আছেন। নিজের মেধা ও প্রজ্ঞা দিয়ে হ্যাপী কর্মক্ষেত্রে এগিয়ে চলেছেন। পিতা অংচ মং বর্তমানে বান্দরবান জেলার দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) সভাপতি দায়িত্ব পালন করছেন।

কুহেলিকা আজিম, বিউটিসিয়ানঃ বাবা-মা ও পাঁচ ভাই-বোন নিয়ে পরিবার। জন্ম ১২ সেপ্টেম্বর ১৯৭৪। ময়মনসিংহ জেলার মুক্তাগাছা থানা লাঙ্গলভাঙ্গা গ্রামে জন্ম করেন।
চার বছর বয়সে মা মারা যান। মা মারা যাওয়ার পর ফরিদপুরে একটি মিশন স্কুলে পড়াশুনা করেন। এসএসসি পর্যন্ত পড়াশুনা করে এই মিশনেই। এরপর তিনি তেজগাঁও কলেজে ভর্তি হন। কিন্তু পরিবারে তার পড়াশুনা খরচ চালানোর কেউ ছিল না। এজন্য পড়াশুনা বন্ধ হয়ে যায়। বিবাহের পর নিজ উদ্যোগে পার্লারে কাজ শিখতে শুরু করেন। এরপর শুরু করেন চাকুরী জীবন। কুহেলিকা আজিমের পারসোনাতেও কাজ করার অভিজ্ঞতা রয়েছে। সেই অভিজ্ঞতাগুলো কাজে লাগিয়েই ২০০৮ সাল থেকে নিজে পার্লার খুলেন। বর্তমানে তিনি শুধু পার্লারের ব্যবসাই করছেন না তিনি একজন ট্রেনারও।

Back to top button