আন্তর্জাতিক আদিবাসী ভাষা বর্ষ উপলক্ষে সংবাদ সম্মেলনে পঠিত বক্তব্য
২০১৯ আন্তর্জাতিক আদিবাসী ভাষা বর্ষ সফল হোক
দেশের সকল ভাষা সুরক্ষা ও বিকাশে এগিয়ে আসুন
সুপ্রিয় কলমসৈনিক বন্ধুগণ,
আন্তর্জাতিক আদিবাসী ভাষা বর্ষ উপলক্ষে আমাদের আন্তরিক শুভেচ্ছা গ্রহণ করুন।
‘আন্তর্জাতিক বর্ষ’ ঘোষণা জাতিসংঘের সংহতি ও সহযোগিতামূলক একটি কাঠামো, যে বছরকে নির্ধারিত একটি বিষয়ে সচেতনতা বাড়ানোর কাজের জন্য উৎসর্গ করা হয়। জাতিসংঘ যখন ‘আন্তর্জাতিক বর্ষ’ হিসেবে কোন বিশেষ বছরকে ঘোষণা করে, তখন যে বিষয় বা প্রেক্ষিতকে ঘিরে সেই বর্ষ ঘোষিত হয়, সেই বিষয়কে বৈশ্বিক ভাবনা এবং বিশ্বব্যাপী সংশ্লিষ্ট সকলের সমন্বিত কর্মযজ্ঞের কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
জাতিসংঘ আদিবাসী বিষয়ক স্থায়ী ফোরামের সুপারিশের ভিত্তিতে ২০১৬ খ্রিস্টাব্দে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদ ২০১৯ সালকে ‘আন্তর্জাতিক আদিবাসী ভাষা বর্ষ’ হিসেবে উদযাপনের জন্য সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে।
সেই সময় আদিবাসী বিষয়ক স্থায়ী ফোরাম উল্লেখ করেছিল, পৃথিবীতে ব্যবহৃত ৬,৭০০ ভাষার মধ্যে প্রায় ৪০ শতাংশই বিলুপ্তির ঝুঁকিতে রয়েছে। আর এই ঝুঁকিতে থাকা ভাষাগুলোর মধ্যে সিংহভাগই আদিবাসীদের ভাষা। ঝুঁকির মধ্যে থাকা এই ভাষাগুলো সংশ্লিষ্ট ভাষা ব্যবহারকারীদের সংস্কৃতি ও জ্ঞান ব্যবস্থাকে চিরদিনের জন্য বিলুপ্তির দিকে ধাবিত করে চলেছে।
অধিকন্তু, বিশ্বের আদিবাসী জাতিসমূহ তাদের নিজ নিজ দেশে রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক উভয় দিক দিয়ে পশ্চাৎপদ অবস্থানে রয়েছে। এই পশ্চাৎপদতা ভৌগোলিক, ঐতিহাসিক, সাংস্কৃতিক, ভাষাগত ও ঐতিহ্যগত নানা দিক দিয়ে সংঘটিত হয়।
আদিবাসী জাতিসমূহ কেবলমাত্র পরিবেশ ও প্রতিবেশের অভিভাবকই নয়, তাদের ভাষাসমূহ একটি সমাজ ও রাষ্ট্রের জ্ঞান ব্যবস্থা চর্চা ও বাচনিক যোগাযোগ ব্যবস্থাকে প্রতিনিধিত্ব করে। জাতীয় উন্নয়ন, শান্তি স্থাপন ও জাতি গঠনে তাদের এই অবদানকে স্বীকৃতি প্রদানের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে।
তারা হাজার বছর ধরে তাদের স্বতন্ত্র সংস্কৃতি, প্রথা ও মূল্যবোধ লালন-পালন এবং বিকাশে অবদান রাখে। আদিবাসী ভাষাসমূহ বিশ্বের সাংস্কৃতিক বৈচিত্র সমৃদ্ধকরণে বিশেষ ভূমিকা পালন করে। তাদের ভাষা-সংস্কৃতির অস্তিত্বই যদি ঝুঁকির মধ্যে পড়ে, তাহলে পুরো বিশ্বই সাংস্কৃতিক বিরানভূমিতে পরিণত হয়ে পড়বে।
প্রিয় সাংবাদিকবৃন্দ,
২০১৯ সালকে আন্তর্জাতিক আদিবাসী ভাষা বর্ষ হিসেবে উদযাপনের মধ্য দিয়ে আদিবাসী ভাষাসমূহ সুরক্ষা পাবে এবং এসব ভাষা ব্যবহারকারীদের জীবনমান উন্নয়ন প্রক্রিয়াকে তরান্বিত করবে। এই প্রক্রিয়া আদিাবাসী জাতিসমূহের অধিকার বিষয়ক জাতিসংঘ ঘোষণা এবং স্থায়িত্বশীল উন্নয়ন ঘোষণা ২০৩০-এ নির্ধারিত উদ্দেশ্যসমূহ অর্জনে সহায়ক ভূমিকা রাখবে।
এই ভাষাবর্ষ উদযাপনের মাধ্যমে বিভিন্ন র ভাষা বিকাশ ও সুরক্ষার জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় কর্তৃক নির্ধারিত স্টান্ডার্ড-সেটিং টুলসগুলোকেও সুদৃঢ় করবে এবং সেসব স্টান্ডার্ড বাস্তবায়ন প্রক্রিয়াকে তরান্বিত করবে।
২০১৬ সালের ঘোষণা অনুসারে, আন্তর্জাতিক আদিবাসী ভাষা বর্ষ ২০১৯-কে বৈশ্বিকভাবে উদযাপনের জন্য জাতিসংঘ শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সাংস্কৃতিক সংস্থা (ইউনেস্কো) নেতৃত্ব প্রদান করবে। সরকার, আদিবাসী জাতিসমূহের সংগঠন, গবেষক ও অন্যান্য অংশীজনদের সাথে এই আন্তর্জাতিক বর্ষের উদ্দেশ্য অর্জনের জন্য প্রণীত পরিকল্পনা বাস্তবায়নের উপায়-পন্থা নির্ধারণে ইউনেস্কো নানা কর্মযজ্ঞ পরিচালনা করবে।
ভেষজ উদ্ভিদ বিষয়ক গোপনীয় বিষয়াদি, পরিবেশ ও প্রতিবেশগত জ্ঞান, আবহাওয়া ও জলবায়ুর রূপ, আধ্যাত্মিক দৃষ্টিভঙ্গী, শিল্প-সংস্কৃতির ইতিহাস ও পৌরাণিক ইতিহাস বিষয়ক স্থানীয় জ্ঞান ব্যবস্থা উন্মোচনে প্রতিটি ভাষা স্বতন্ত্রভাবেই অবদান রাখে। কোন একটি ভাষা হারিয়ে গেলে সেই ভাষা-পরিবেশকে ঘিরে স্মরণাতীতকাল হতে চর্চিত জ্ঞান ব্যবস্থা হতে মানব সমাজ বঞ্চিত হবে।
একটি ভাষা হারিয়ে গেলে পৃথিবী নামের ভূখন্ডের ইতিহাস ও সংস্কৃতির অনেক উপাদান ও স্মৃতি হতে মানব সমাজের জ্ঞান চিরতরে বিলুপ্ত হয়ে যাবে। আকাশ, বাতাস, সূর্য, চন্দ্র, সময়, ভূমি, পাহাড়, ছড়া, নদী, মানুষ, জীব-জন্তুসহ আমাদের চারিপার্শ্বের পরিবেশ ও প্রতিবেশের নানা উপাদান এক বিভিন্ন ভাষা ও সংস্কৃতিতে ভিন্ন ভিন্নভাবে প্রকাশিত হয়। তাই কোন ভাষা বিলুপ্ত হলে সেই ভাষার জ্ঞান ও স্মৃতি বিলুপ্ত হয়ে যায়।
একটি ভাষা বিলুপ্ত হলে জলবায়ু ও পরিবেশের ঝুঁকি রোধের জন্য স্থানীয় জনগণ যে সম্পদ ব্যবহার করে, তা থেকে মানবসমাজ বঞ্চিত হয়। পৃথিবীর প্রায় ৭০০০ ভাষার মধ্যে মাত্র ১০০টির মতো ভাষা ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়। পৃথিবীর অনেক দেশে আদিবাসী জাতিসমূহের ভাষা এবং সেই ভাষার ব্যবহারকারীরা তাদের পারিপার্শ্বিক পরিবেশ বিষয়ক জ্ঞানজগতের মূল উৎস। এমনকি বিজ্ঞান জগতের চিকিৎসা শাস্ত্রসহ নানা ক্ষেত্রেও আদিবাসী জাতিসমূহের ব্যবহৃত ভাষা বিশেষ ভূমিকা রাখে। ন্যান্সি রিভেনবার্গ বলেন, আদিবাসীদের ভাষা হারিয়ে গেলে ‘চিকিৎসা বিজ্ঞান সম্ভাব্য প্রতিষেধক হতে বঞ্চিত হয়। অন্যদিকে পরিকল্পনা বিশেষজ্ঞ ও জাতীয় সরকারসমূহ ক্ষয়িষ্ণু প্রতিবেশ ব্যবস্থার সামুদ্রিক বিজ্ঞান ও ভূসম্পদ সংক্রান্ত ধারাবাহিক জ্ঞান ব্যবস্থা থেকে বঞ্চিত হয়।’
সবচেয়ে বড় দুঃখজনক ঘটনা হলো, অনেক মানুষ পারিপার্শ্বিক প্রভাবশালী ভাষা-সংস্কৃতির প্রভাবে নিজেদের ভাষা ও সংস্কৃতি ব্যবহার থেকে বঞ্চিত হয় অথবা অনেকেই স্বেচ্ছায় নিজ মাতৃভাষা ব্যবহার থেকে বিরত থাকে। আবার এমন অনেক ভাষাও রয়েছে, যার ব্যবহারকারী এক বা দুইজন, যাদের মৃত্যুর সাথে সাথে সেই ভাষারও অবধারিতভাবে মৃত্যুর দিকে ধাবিত হয়।
সুপ্রিয় সংবাদকর্মী বন্ধুগণ,
নানা কারণে প্রান্তিকতা ও বিলুপ্তির ঝুঁকির মধ্যে থাকা ভাষাসমূহকে সুরক্ষা করার লক্ষ্যেই জাতিসংঘ ২০১৯ সালকে ‘আন্তর্জাতিক আদিবাসী ভাষা বর্ষ’ হিসেবে ঘোষণা করার উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। বাংলাদেশে বাংলা ছাড়াও প্রায় অর্ধ শতাধিক ভাষার অস্তিত্ব রয়েছে। এসব ভাষাগুলোর বিকাশ ও সুরক্ষায় বাংলাদেশ সরকার বিভিন্ন পর্যায়ে উদ্যোগ গ্রহণ করে চলেছে। সরকারের উদ্যোগের পাশাপাশি নিজ নিজ ভাষা ব্যবহারকারী ও দেশের সকল স্তরের মানুষের সচেতনতা সুদৃঢ় করার লক্ষ্যে বিভিন্ন সমাজভিত্তিক সংগঠনের উদ্যোগে এই বর্ষকে সাড়ম্বরে উদযাপানের লক্ষ্যে ‘আন্তর্জাতিক আদিবাসী ভাষা বর্ষ উদযাপন কমিটি ২০১৯’ গঠন করা হয়েছে।
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার তার বিভিন্ন আইন, নীতি, কৌশল ও কর্মসূচিতে বাংলাদেশের বিভিন্ন র মাতৃভাষা সুরক্ষা ও এসব ভাষায় প্রাথমিক শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনার বিষয়াবলি অন্তর্ভূক্ত করেছে। ২০১০ সালে গৃহিত জাতীয় শিক্ষা নীতির আলোকে ২০১২ সাল হতে সরকার চাকমা, মারমা, ত্রিপুরা (ককবরক), গারো ও সাদরি ভাষায় প্রাথমিক শিক্ষা কার্যক্রম বাস্তবায়নের কর্মযজ্ঞ শুরু করে। সেই কার্যক্রম সুফল হিসেবে ২০১৭ সালে প্রাক-প্রাথমিক, ২০১৮ সালে প্রথম শ্রেণি এবং ২০১৯ সালে দ্বিতীয় শ্রেণির শিখন-শেখানোর উপকরণ প্রণয়ন ও প্রকাশ করে মাঠ পর্যায়ে বিতরণ করা হয়েছে। অন্যদিকে ২০১০ সালে গৃহিত ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান আইন প্রণয়নের মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন জাতিসমূহের ভাষা ও সংস্কৃতি বিকাশ ও সংরক্ষণের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। বাংলাদেশের বিভিন্ন জাতিসমূহের জন্য সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি হলোÑ পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন জাতিসমূহের সাংস্কৃতিক স্বাতন্ত্র সুরক্ষার জন্য বিশেষ বিধানের সংযুক্তি। এই সংযুক্তির ফলে দেশের বিভিন্ন জাতিসমূহের ভাষা সুরক্ষার পথ প্রসারিত হয়েছে।
বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার সম্মানীত প্রতিনিধিগণ,
আজ ২৮ জানুয়ারি ২০১৯ রোজ সোমবার আন্তর্জাতিক আদিবাসী ভাষা বর্ষের কর্মসূচি আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণার জন্য এই প্রেস ব্রিফিং-এর আয়োজন করা হয়েছে। এই পুরো বছরে আমরা সরকারের বিভিন্ন বিভাগ ও মন্ত্রণালয়, জাতিভিত্তিক বিভিন্ন সংগঠন, ভাষা গবেষক, লেখক, একাডেমিক, মিডিয়া হাউজসহ সংশ্লিষ্ট সকলের সহযোগিতায় নি¤েœ উল্লেখিত কর্মসূচি বাস্তবায়ন করার জন্য উদ্যোগ গ্রহণ করেছি। আশা করি, আমাদের উদ্যোগে আপনারা সকলেরই যার যার অবস্থান হতে অংশগ্রহণ ও সহায়তা করে বাংলাদেশে বিদ্যমান বিভিন্ন ভাষা সুরক্ষা ও বিকাশে অবদান রাখবেন।
আন্তর্জাতিক আদিবাসী ভাষা বর্ষ ২০১৯ উদযাপনের জন্য গৃহিত কর্মসূচি নি¤œরূপ-
১। কনফারেন্স:
ক) ফেব্রুয়ারি মাসে মহান ভাষা শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে বিভিন্ন সেমিনার ও আলোচনাচক্র আয়োজন। এই আয়োজনে সরকারি- বেসরকারি বিভিন্ন সংস্থার সিদ্ধান্ত গ্রহণকারী কর্তৃপক্ষ ও কর্মকর্তা, শিক্ষক, গবেষক, লেখকসহ বিশিষ্টজনরা অংশগ্রহণ করবেন। সরকারি প্রতিষ্ঠানসমূহের মধ্যে শিক্ষা মন্ত্রণালয়, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়, পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট, জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড, পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ ও পার্বত্য জেলা পরিষদসমূহসহ সংশ্লিষ্ট আরো অনেক বিভাগ ও মন্ত্রণালয়কে বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মসূচিতে সম্পৃক্ত করা হবে।
খ) বিভিন্ন জাতিসমূহের শিক্ষকদের একটি বা একাধিক শিক্ষক সমাবেশের আয়োজন করা হবে। এই সমাবেশের মাধ্যমে সরকার কর্তৃক গৃহিত মাতৃভাষায় শিক্ষা কর্মসূচি বাস্তবায়নে শিক্ষকদের ভূমিকা নিয়ে আলোচনা করা যেতে পারে, যেখানে শিক্ষকগণও তাঁদের অবস্থান থেকে এই কর্মসূচি বাস্তবায়নে অঙ্গীকার ব্যক্ত করবেন।
গ) নিজ নিজ মাতৃভাষায় যাঁরা লেখালেখি চর্চা করেন, তাঁদের জন্য একটি লেখক সমাবেশের আয়োজন করা হবে। এই সমাবেশের মাধ্যমে নিজ নিজ মাতৃভাষা চর্চাকে উৎসাহিত করা হবে।
২। সক্ষমতা উন্নয়ন:
ক) দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বিদ্যমান ভাষাগুলোকে ডকুমেন্টেশন করার জন্য আঞ্চলিক মতবিনিময় কাম ভাষা ডকুমেন্টশেন কর্মশালার আয়োজন করা হবে। বিভিন্ন জাতিসমূহের অবস্থান অনুসারে আপাতত পুরো দেশটিকে ৮টি জোনে বিভাজন করে কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে। পরবর্তীতে প্রয়োজন অনুসারে সাব-জোনাল পর্যায়েও কার্যক্রম পরিচালনা করা যেতে পারে। বর্তমান পরিকল্পনা অনুসারে ১) পার্বত্য চট্টগ্রাম, ২) গাজীপুর ও ঢাকা, ৩) উপকূল অঞ্চল, ৪) বারিশাল, ৫) উত্তর বঙ্গ ১, ৬) উত্তর বঙ্গ ২, ৭) বৃহত্তর চট্টগ্রাম ও ৮) বৃহত্তর সিলেট অঞ্চল। এই কর্মশালার মাধ্যমে বিভিন্ন জাতিসমূহের প্রতিনিধিবৃন্দকে তাদের নিজ নিজ মাতৃভাষার বর্তমান অবস্থা চিহ্নিত করতে এবং সেসব নির্ধারিত পদ্ধতি অনুসরণ করে ভাষা ডকুমেন্টেশন করার প্রক্রিয়া সম্পর্কে ওরিয়েন্টেশন করা হবে এবং হাতে কলমে তা করতে সহায়তা করা হবে।
খ) নির্ধারিত অঞ্চলগুলোতে বিভিন্ন জাতিসমূহের যুবসমাজের অংশগ্রহণে ডিজিটাল ডিভাইস ব্যবহার করে ভাষা ডকুমেন্টেশন করার পদ্ধতি বিষয়ে ওরিয়েন্টেশন করা হবে।
গ) নির্ধারিত অঞ্চলগুলোতে বিভিন্ন জাতির বয়স্ক নারীদের অংশগ্রহণে ‘প্রজন্ম সংলাপ’-এর আয়োজন করা। এই সংলাপে যুব নারী ও বয়স্ক নারীদের মধ্যে ভাষার অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যত নিয়ে আলোচনা করা হবে।
৩। সাংস্কৃতিক কার্যক্রম:
ক) বাংলাদেশে বিদ্যমান বিভিন্ন ভাষার হরফ হস্তাক্ষরে ও ডিজিটাল পদ্ধতিতে লিখে তা প্রদর্শনীর ব্যবস্থা করা।
খ) মাতৃভাষার পরিস্থিতি, অবস্থা ও করণীয় বিষয়ক সৃজনশীল আইডিয়া সংগ্রহ করার জন্য অংকনশিল্পীদের পোস্টার অংকন প্রতিযোগিতার আয়োজন করা।
গ) পোস্টার অংকন প্রতিযোগিতায় যেসব পোস্টার সেরা হিসেবে বিবেচিত হবে, সেগুলোকে বাইন্ডিং করে প্রদর্শনীর ব্যবস্থা করা।
৪। মিডিয়া:
ক) বাংলাদেশের বিভিন্ন জাতির মাতৃভাষার অবস্থা বিষয়ে বিভিন্ন টিভি চ্যানেলে টিভি টকশো, স্পেশাল ফিচার, আলোচনাচক্র ইত্যাদি আয়োজন করা।
খ) পোস্টার প্রতিযোগিতা হতে বাছাই করে সেরা পোস্টারগুলো ছাপিয়ে প্রকাশ ও প্রচার করা।
গ) মাতৃভাষা বিষয়ক বিভিন্ন বইপুস্তক ও ম্যাগাজিন প্রকাশ করা।
সুপ্রিয় সুধী,
আমাদের একার পক্ষে উপরে উল্লিখিত কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা কখনোই সম্ভব নয়। এই কর্মসূচি বাস্তবায়নে আপনাদের সকলের সহযোগিতা, পরামর্শ ও অংশগ্রহণ আমরা একান্তভাবে কামনা করি। সকলের অংশগ্রহণের মধ্য দিয়েই আমরা বাংলাদেশের সকল ভাষা সুরক্ষা ও বিকাশে সক্ষম হবো। তাই, আসুন যার যার অবস্থান থেকে আমরা এই দেশের বিভিন্ন জাতির ভাষার সার্বিক উন্নয়নে অবদান রাখি।
বিনীত নিবেদক-
মথুরা বিকাশ ত্রিপুরা, আহবায়ক
আন্তর্জাতিক আদিবাসী ভাষা বর্ষ উদযাপন কমিটি ২০১৯
ঢাকা, বাংলাদেশ
ইমেইল: [email protected]
মোবাইল: ০১৫৫২৩৫৬৪৫৬
বাঁধন আরেং, সদস্য সচিব
আন্তর্জাতিক আদিবাসী ভাষা বর্ষ উদযাপন কমিটি ২০১৯
ঢাকা, বাংলাদেশ
ইমেইল: [email protected]
মোবাইল: ০১৭১৮৩৩৪২৯৫