জাতীয়

আন্তর্জাতিক আদিবাসী দিবস উপলক্ষে জাতিসংঘের মহাসচিব বান-কি-মুন এর বাণী

২০১৫ সালে জাতিসংঘে বিশ্ব নেতৃবৃন্দ যখন টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা ২০৩০ গ্রহণ করেছিলেন, তখন আশা প্রকাশ করেছিলেন যে এই লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের মাধ্যমে বিশ্বের সকল মানুষ শান্তি, মর্যাদা, সুযোগ ও সমৃদ্ধি অর্জন করবে। “কাউকে পেছনে না ফেলে এগিয়ে যাওয়া” – এই চেতনাই হবে বিশ্বব্যাপী এই প্রচেষ্টার মূল ভিত্তি। তবে এই আন্তর্ভূক্তিমূলক উন্নয়নে পিছিয়ে পড়তে পারে এমন ঝুঁকিপূর্ণ গোষ্টির মধ্যে আদিবাসীরাই অন্যতম।

বিশ্বব্যাপী আদিবাসীরা বিভিন্ন ধরনের চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়ে থাকেন; তার মধ্যে অন্যতম হল – পদ্ধতিগত বৈষম্য, তাঁদের চিরায়ত ভূমি অধিকারের অস্বীকৃতি, অতি প্রয়োজনীয় সেবাসমূহের উপর তাঁদের স্বল্প অধিকার ভোগ প্রভৃতি। আদিবাসীরা তাঁদের সাংস্কৃতির পরিচয়ের জন্য প্রতিনিয়ত লাঞ্ছনার স্বীকার হন, তাঁদের ঐতিহ্য এবং মূল্যবোধকে অসম্মান ও অস্বীকার করা হয়; এমনকি জাতীয় পাঠ্যপুস্তক এবং অন্যান্য শিক্ষা সহায়ক উপকরণেও এর প্রতিফলন পরিলক্ষিত হয়। যেহেতু শিক্ষা ব্যবস্থায় আদিবাসী ভাষার কোন স্বীকৃতি বা ব্যবহার নেই বল্লেই চলে, সেজন্য শিক্ষার মাধ্যম কেবলই জাতীয় ভাষা। ভাষাগত এই সীমাবদ্ধতাও অনেক ক্ষেত্রে তাঁদেরকে প্রান্তিকতায় উপনীত করে।

এটা অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় যে, বিশ্বব্যাপী আদিবাসীদের মাধ্যমিক পাশের হার জাতীয় গড় মানের তুলনায় অনেক নীচে। কিছু কিছু দেশে মাত্র ৪০% আদিবাসী ছাত্রছাত্রী নিয়মিত স্কুলে যায়। খুব কম দেশেই আদিবাসী শিক্ষার্থীরা সম্পূর্ন উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সম্পন্ন করতে পারে। শিক্ষাক্ষেত্রে আদিবাসী ছাত্র-ছাত্রীদের এই অবস্থা কোনভাবেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। আমরা যদি আদিবাসীদের শিক্ষার এই নাজুক অবস্থা গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করতে ব্যর্থ হই তাহলে কোনভাবেই টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে সফল হতে পারবোনা।

সাম্প্রতিক দশকগুলোতে বিশ্বব্যাপী আদিবাসীদের অধিকারের কথা ব্যাপকভাবে গুরুত্বসহকারে আলোচিত হয়েছে। জাতিসংঘে তিনটি সুনির্দিস্ট ব্যবস্থা রয়েছে আদিবাসী সংক্রান্ত বিষয়গুলো দেখভাল করার জন্যঃ আদিবাসী বিষয়ক স্থায়ী ফোরাম; আদিবাসী বিষয়ক বিশেষ রিপোর্টিয়ার এবং আদিবাসী বিষয়ক বিশেষজ্ঞ কর্মব্যবস্থা (Expert Mechanism)। এছাড়া রয়েছে ২০০৭ সালের ১৩ সেপ্টম্বরে সাধারণ পরিষদে গৃহীত জাতিসংঘের আদিবাসী অধিকার বিষয়ক ঘোষণাপত্র, যা বিশ্বব্যাপী আদিবাসীদের অধিকার প্রতিষ্ঠা, সুরক্ষা এবং স্বীকৃতির অন্যতম মাইলফলক হিসেবে বিবেচিত হয়।
12_Jyotirindra+Bodhipriya+Larma_Shantu+Larma_MM_090816_004
২০১৪ সালের সেপ্টম্বরে জাতিসংঘের প্রথম আদিবাসী বিষয়ক বিশ্ব সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সেই ঐতিহাসিক সম্মেলনে ইতোপূর্বে ঘোষিত জাতিসংঘের আদিবাসী অধিকার বিষয়ক ঘোষণাপত্র সফল বাস্তবায়নের জন্য কর্ম পরিকল্পনা ভিত্তিক ‘outcome document’ গৃহীত হয়। এর প্রত্যক্ষ ফল হিসেবে বর্তমানে আমাদের রয়েছে UN System Wide Action Plan, যা বিশেষভাবে সদস্য রাষ্ট্রগুলোতে আদিবাসী অধিকার বিষয়ক ঘোষণাপত্র বাস্তবায়নের জন্য সচেতনতা সৃষ্টি করছে এবং বাস্তবায়ন প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করছে।

আজ আন্তর্জাতিক আদিবাসী দিবসের প্রাক্কালে এই UN System Wide Action Plan নামক আন্তর্জাতিক কাঠামোর আলোকে আদিবাসীদের শিক্ষার সুযোগ বৃদ্ধি করতে এবং শিক্ষা পদ্ধতিতে তাঁদের অভিজ্ঞতা এবং সংস্কৃতি প্রতিফলিত করতে আমি বিশ্বের সকল সরকার সমূহের নিকট জোর আহ্বান জানাই – আসুন সবাই মিলে আমরা প্রতিজ্ঞা করি, টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে কোনভাবেই যেন আদিবাসীরা পিছিয়ে না পড়ে, তাঁদের সবাইকে নিয়েই যেন বিশ্বব্যাপী আমাদের এই লক্ষ্যসমূহ অর্জিত হয়।

Leaflet

Back to top button