আদিবাসী বিষয়ক জাতিসংঘের স্থায়ী ফোরামে পার্বত্য চট্টগ্রাম পরিস্থিতি নিয়ে ডেনমার্কের উদ্বেগ
নিউইয়র্কস্থ জাতিসংঘের সদরদপ্তরে আদিবাসী বিষয়ক স্থায়ী ফোরামের ১৬তম অধিবেশনে পার্বত্য চট্টগ্রাম পরিস্থিতি নিয়ে ডেনমার্ক উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।
উল্লেখ্য যে, গত ২৪ এপ্রিল ২০১৭ নিউইয়র্কস্থ জাতিসংঘের সদরদপ্তরে আদিবাসী বিষয়ক স্থায়ী ফোরামের ১৬তম অধিবেশন শুরু হয়েছে। আগামী ৫ মে পর্যন্ত এ অধিবেশন চলবে।
এজেন্ডা-৪ এর উপর ডেনমার্কের বিবৃতিঃ আদিবাসী অধিকার বিষয়ক জাতিসংঘের ঘোষণাপত্রের [অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়ন, সংস্কৃতি, পরিবেশ, শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও মানবাধিকার] আলোকে স্থায়ী ফোরামের ৬টি এখতিয়ারভুক্ত ক্ষেত্রসমূহের বাস্তবায়ন সম্পর্কে গত ২৬ এপ্রিল ২০১৭ প্রদত্ত বক্তব্যে জাতিসংঘে ডেনমার্কের রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘পার্বত্য চট্টগ্রামে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা চলমান রয়েছে। আদিবাসীদের উপর আক্রমণের ঘটনা যেগুলির অধিকাংশেরই বিচার হয় না এরকম ঘটনা প্রতিনিয়ত ঘটছে। এর ফলে এ অঞ্চলে অস্থিরতা, নিরাপত্তাহীনতা ও অনিশ্চয়তা তৈরি করছে। ডেনমার্ক তার উন্নয়ন কার্যক্রম চলমান রাখবে এবং আশাবাদ প্রকাশ করে যে, পার্বত্য চট্টগ্রামে শান্তি ও নিরাপত্তার বাস্তবতা তৈরি হবে।’
আদিবাসী অধিকার বিষয়ক জাতিসংঘের ঘোষণাপত্র আদিবাসীদের মর্যাদা ও অধিকার প্রদানের ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক ও যুগান্তকারী অধ্যায়। এটি জাতিসংঘসহ পুরো বিশ্বে নতুন মাত্রায় কাজ করার ভিত রচনা করে দেয়। এ ঘোষণাপত্র বাস্তবায়নের জন্য এখতিয়ারভুক্ত ক্ষেত্রসমূহে নিয়মিত অনুক্রমণ করা (ফলো আপ), নিরীক্ষণ করা ও পর্যবেক্ষণ করা গুরুত্বপূর্ণ।
আন্তর্জাতিক মানবাধিকার মানদন্ডের উন্নয়ন সত্ত্বেও আদিবাসীরা এখনও মানবাধিকার লংঘনের শিকার হচ্ছেন। অমীমাংসিত বিষয় সম্পর্কে আমাদের উদ্বেগসমূহ এরকম ফোরামে তুলে ধরা প্রাসঙ্গিক। বিভিন্ন ধরনের সাংঘর্ষিক পরিস্থিতি যেখানে আদিবাসীদের অধিকারও হুমকির সম্মুখীন সেসমস্ত পরিস্থিতি নিরসনের নিশ্চয়তা বিধানের জন্য ধারাবাহিক অনুক্রমণ করতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দায়িত্ববোধ রয়েছে।
বাংলাদেশের পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলে বার বার ভূমি বিরোধের ঘটনা ঘটে চলেছে। এতে মূলত আদিবাসীরা ঘটনার শিকার হন। সুতরাং এ ফোরামের পূর্বেকার অধিবেশনের মত, ডেনমার্ক তার আহ্বান পুনর্ব্যক্ত করছে যে, কোনরকম বিলম্ব ছাড়া পার্বত্য চট্টগ্রাম ভূমি কমিশন যেন পুরোপুরি কাজ করতে পারে সেটা যেন বাংলাদেশ সরকার নিশ্চিত করে। ভূমি কমিশন বাস্তবায়নের কাজ এগিয়ে নিতে বাংলাদেশ সরকারের উদ্যোগকে আমরা স্বাগত জানাই। তবে আমরা মনে করি, পর্যাপ্ত অফিস ও জনবল নিয়োগের বিষয়টি হচ্ছে কমিশনকে গতিশীল রাখার ক্ষেত্রে মূল চাবিকাঠি।
বাংলাদেশে নিযুক্ত ডেনমার্কের রাষ্ট্রদূত ফেব্রুয়ারি মাসে পার্বত্য চট্টগ্রাম সফর করে এবং সকল স্টেকহোল্ডার ও আমাদের উন্নয়ন অংশীদার ইউএনডিপি’র সাথেও সাক্ষাত করে। টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার আলোকে পার্বত্য চট্টগ্রামের জনগণ খুব নিদারুণভাবে পিছিয়ে রয়েছে। এগুলোর মধ্যে প্রধানত সামাজিক সেবাসমূহ যেমন- শিক্ষা, স্বাস্থ্য এবং পানি ও স্যানিটেশন ব্যবস্থার ক্ষেত্রে পিছিয়ে রয়েছে। এ ধরনের পরিস্থিতি কখনোই উৎসাহব্যঞ্জক নয়। তবে এটা উৎসাহব্যঞ্জক যে, বাংলাদেশ সরকারের পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনায় [২০১৬-২০২১] স্বীকার করা হয়েছে যে- যদি সমন্বিতভাবে কাজ করা না হয় তাহলে পার্বত্য চট্টগ্রাম ও বাংলাদেশের অপরাপর অঞ্চলের মধ্যে ব্যবধান আরো বাড়বে।
একারণে বিগত দু’দশক ধরে বাংলাদেশের আদিবাসীদের উন্নয়নে ডেনমার্ক সরকার কাজ করে যাচ্ছে। বাংলাদেশে ডেনমার্ক সরকারের উন্নয়ন কার্যক্রম হচ্ছে- কৃষক মাঠ স্কুলের মাধ্যমে বয়স্ক শিক্ষা চালু যেখানে ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষকেরা রয়েছেন। পার্বত্য চট্টগ্রাম এমন একটি অঞ্চল যেখানে উচ্চ মানসম্পন্ন কৃষিদ্রব্য উৎপাদনের সম্ভাবনা রয়েছে। এখানে বিশেষত নারী কৃষকেরা কৃষক মাঠ স্কুলে আসা-যাওয়া করছেন। এ উদ্যোগ নারীদের অর্থনৈতিক ক্ষমতায়নে অবদান রাখছে।
পার্বত্য চট্টগ্রামে নারীর উপর ব্যাপক সহিংসতার মাত্রা যথেষ্ট উদ্বেগের। এজন্য আমরা এ অঞ্চলে নারীদের জন্য দুটি ক্রাইসিস সেন্টার প্রতিষ্ঠার জন্য বাংলাদেশ সরকারের সাথে কাজ করেছি। দুর্ভাগ্যজনকভাবে এগুলোর সক্ষমতা প্রয়োজনের তুলনায় নগণ্য। পার্বত্য চট্টগ্রামের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও আদিবাসীদের অধিকার সুরক্ষার ক্ষেত্রে কীভাবে আরো বেশি অবদান রাখা যায় সেব্যাপারে বাংলাদেশের সকল স্টেকহোল্ডারদের সাথে আলোচনায় বসতে ডেনমার্ক সরকার সবসময় প্রস্তুত বলে ডেনমার্কের রাষ্ট্রদূত উল্লেখ করেন।