আঞ্চলিক সংবাদ

আদিবাসী নারী ধর্ষণ চেষ্টার আসামী গ্রেপ্তারের দাবিতে রাজশাহীতে মানববন্ধন

গোদাগাড়ীর গোগ্রাম ইউনিয়নের ইটাহারী গ্রামে আদিবাসী নারী ধর্ষণ চেষ্টা, মারধর, হুমকির প্রতিবাদে এবং প্রধান আসামী পলাতক জহিরুল ইসলামকে দ্রুত গ্রেপ্তার ও জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে রাজশাহীতে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে। সোমবার সকাল ১১ টার দিকে জাতীয় আদিবাসী পরিষদের উদ্যোগে নগরীর সাহেব বাজার জিরোপয়েন্টে এ মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।

মানববন্ধনে জাতীয় আদিবাসী পরিষদ রাজশাহী জেলার সভাপতি বিমল চন্দ্র রাজোয়াড়ের সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন জাতীয় আদিবাসী পরিষদ কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সাধারণ সম্পাদক গনেশ মার্ডি, দপ্তর সম্পাদক সুভাষ চন্দ্র হেমব্রম, রাজশাহী মহানগর কমিটির সাধারণ সম্পাদক আন্দ্রিয়াস বিশ্বাস, কেন্দ্রীয় সদস্য রাজকুমার শাও, আদিবাসী যুব পরিষদ রাজশাহী জেলার সভাপতি উপেন রবিদাস, আদিবাসী ছাত্র পরিষদ কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক তরুন মুন্ডা, আদিবাসী যুব পরিষদের কেন্দ্রীয় সদস্য উত্তম কুমার মাহাতো প্রমূখ।

ভুক্তভোগীদের পক্ষে বক্তব্য রাখেন ইটাহারী গ্রামের সুমিত্রা মুন্ডা, লুচি মুন্ডা গোগ্রাম পুজাতলা গ্রামে নির্যাতনের শিকার আদরী লাকড়া প্রমূখ। সংহতি বক্তব্য রাখেন, বিশিষ্ট সাংবাদিক, কলামিষ্ট এবং মুক্তিযোদ্ধা প্রশান্ত কুমার সাহা, ৭১র ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির রাজশাহী জেলা সভাপতি বিশিষ্ট মুক্তিযোদ্ধা শাহাজাহান আলি বরজাহান, তৃনমুল সংস্থার নির্বাহী পরিচালক মো. জালাল উদ্দিন।

ইটাহারী গ্রামের প্রত্যাক্ষদর্শী সুমিত্রা মুন্ডা বলেন, “আমরা ভয়ে ভয়ে থাকছি, কখন না আমাদের উপরে হামলা হয়। ভয়ে বাড়ির বাইরে যেতে পারছি না। পুলিশ আমাদেরকে বলে ৯৯৯ নাম্বারে ফোন দিতে। আমরা বাংলাদেশের নাগরিক আমাদেরও সমান অধিকার আছে আইনি সহায়তা পাওয়ার।”

ভুক্তোভোগী লুচি মুন্ডা মুন্ডা বলেন, “জহুরুলের লোকজন আমাদেরকে দা হাসুয়া দিয়ে রাস্তায় ভয় দেখায়। রাস্তা অবরোধ করে দেয়। মারধর করে হুমকি দিতে থাকে।”

বক্তারা বলেন, ইটাহারী গ্রামে আদিবাসী নারী ধর্ষণ চেষ্টার মুল হোতা জহুরুল ইসলামকে দ্রুত এবং তার সন্ত্রাসী বাহিনীকে আইনের আওতায় এনে শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে।

উল্লেখ্য, গত ৮ আগষ্ট ২০২০ তারিখ দিবাগত রাতে প্রতিবেশি জহুরুল ইসলাম (৪৫) ভুক্তভোগী আদিবাসী নারীর ঘরে প্রবেশ করে ধর্ষণের চেষ্টা করলে নারীর চিৎকার শুনে আশপাশের লোকজন জহিরুল ইসলামকে হাতে নাতে ধরে ফেলে এবং আটক করে রাখে। পরে জহিরুলের লোকজন এসে আদিবাসীদের কাছ থেকে জোরপূর্বক ছাড়িয়ে নিয়ে যায়। প্রসঙ্গত যে, জহিরুল ইসলাম ঐ আদিবাসী নারীকে কিছুদিন যাবত শ্লীলতাহানীর চেষ্টা করতো।

এই ঘটনায় ৯ আগষ্ট ২০২০ তারিখে গোদাগাড়ী থানায় ঐ আদিবাসী নারী একটি অভিযোগ দায়ের করেন। এদিন এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে জহিরের ছেলে জাব্বারের নেতৃত্বে ১০-১২ জন সন্ত্রাসী দল ঐ আদিবাসী নারীর দেবর মতিলাল মুরারী (২২) এবং তার স্ত্রী রীতা রানী মুরারীকে লাঠি দিয়ে বেধড়ক পিটিয়ে যখম করে। আহত অবস্থায় তাদেরকে প্রেমতলি স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ভর্তি করা হয়।

গোদাগাড়ী থানায় ১০ আগষ্ট মামলা করা হলে পুলিশ ৩ জনকে গ্রেপ্তার করে। তারা হলেন প্রধান আসামী জহুরুলের ছেলে আব্দুর জব্বার (২২), আনিকুল (২৪) এবং জালাল উদ্দিনের ছেলে সেন্টু (৪০)। কিন্তু প্রধান আসামী জহুরুল ইসলামকে পুলিশ এখনো গ্রেপ্তার করতে পারে নি। গত ১৫ আগষ্ট ২০২০ তারিখে আনিকুল এবং সেন্টু (৪০) জামিনে ছাড়া পায়। এখন ভুক্তোভোগী নারীর পরিবারসহ আদিবাসী গ্রামটিতে আতঙ্ক বিরাজ করছে। আসামী পক্ষরা প্রতিনিয়ত ভুক্তভোগীর পরিবার এবং আদিবাসীদের হুমকি দিয়ে যাচ্ছে।

Back to top button