আদিবাসী নারীর মানবাধিকার পরিস্থিতি ও স্থানীয় নেতৃত্বের ভূমিকা শীর্ষক সেমিনার
গত ৭ এপ্রিল ২০১৬ সকাল ১০টায় কাপেং ফাউন্ডেশন ও সিএইচটি হেডম্যান নেটওয়ার্কের যৌথ উদ্যোগে আদিবাসী নারীর মানবাধিকার পরিস্থিতি ও স্থানীয় নেতৃত্বের ভূমিকা শীর্ষক সেমিনার রাঙ্গামাটির টংগ্যা মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হয়। এই সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন সিএইচটি হেডম্যান নেটওয়ার্কের সহ-সভাপতি শক্তিপদ ত্রিপুরা। সেমিনারে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সদস্য মিজ. নিরূপা দেওয়ান এবং বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বরকল উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মিজ. মনি চাকমা। সেমিনারে আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন গবেষক ও মানবাধিকার কর্মী মুক্তাশ্রী চাকমা সাথী, নারী হেডম্যান-কার্বারী নেটওয়ার্কের সাধারণ সম্পাদক সান্তনা খীসা এবং মানবাধিকার কর্মী এডভোকেট শ্রীজ্ঞানী চাকমা প্রমূখ। সেমিনারে মূল প্রবন্ধ পাঠ করেন তরুণ আদিবাসী নারী অধিকার কর্মী মিস মোনালিসা চাকমা। এছাড়াও মুক্ত আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন- মিস চঞ্চনা চাকমা, মিস জোনাকি চাকমা, মি. শান্তি বিজয় চাকমা, তন্দ্রা চাকমা প্রমূখ।
জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সদস্য নিরূপা দেওয়ান বলেন, নারী ও পুরুষ নির্বিশেষে সকলকে পুরুষতান্ত্রিক মানসিকতা পরিবর্তন করতে হবে। এধরণের চিন্তাধারার নেতিবাচক বৃত্ত থেকে বেরিয়ে এসে যুগোপযোগী চিন্তাধারা ধারণ করতে হবে।
তিনি আরো বলেন, নারীর প্রতি অপমানজনক বক্তব্য প্রদান করলে প্রতিবাদ করতে হবে, নারীদের নিশ্চুপ হয়ে থাকা বাঞ্চনীয় নয়। আদিবাসী সমাজের মধ্যে বৃহত্তর ঐক্য ও সংহতি প্রতিষ্ঠার প্রতি জোর দিয়ে তিনি বলেন, বিভিন্ন সংগঠন ও প্রথাগত প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে কর্মে ও চিন্তায় সমন্বয় প্রয়োজন।
বরকল উপজেলা চেয়ারম্যান মনি চাকমা বলেন, ভ্রুণ অবস্থা থেকে নারীরা নির্যাতনের শিকার হয়। নারীদের কাজ করার ক্ষেত্রে অর্থনৈতিক সমস্যা একটি বড় বাধা। নারী অধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রামেও প্রতিনিধিত্বের ক্ষেত্রে এটি সমানভাবে প্রযোজ্য। সে লক্ষ্যে নারীর অর্থনৈতিক ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করা প্রয়োজন। এধরণের সেমিনারে নারীদের নিয়মিতভাবে অংশগ্রহণ করা দরকার। আদিবাসী নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে হেডম্যান-কার্বারীদের আরো বেশি সোচ্চার ভূমিকা রাখতে হবে।
পার্বত্য চট্টগ্রাম মহিলা সমিতির সাধারণ সম্পাদক সুপ্রভা চাকমা বলেন, কোর্টে মামলা পরিচালনার ক্ষেত্রে টাকা প্রয়োজন। গরীব ও প্রান্তিক আদিবাসী নারীরা মামলা পরিচালনার জন্য টাকা পাবে কোথায়? এক্ষেত্রে সরকার বিশেষ দৃষ্টি দেওয়া প্রয়োজন। বেসরকারি সংস্থাসমুহ আর্থিকভাবে সহযোগিতা করতে পারেন।
পার্বত্য চট্টগ্রামের ক্ষেত্রে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়ন না হওয়ার কারণে আদিবাসী নারীর প্রতি সহিংসতা বেড়েই চলেছে। অন্যদিকে সমতলের আদিবাসী নারীরাও প্রতিনিয়ত সহিংসতার শিকার হচ্ছে। সেখান থেকে বিচিত্রা তিরকির মত প্রভাবশালী আদিবাসী নারী নেত্রীরাও রেহাই পাচ্ছেন না।
গবেষক ও মানবাধিকার কর্মী মুক্তাশ্রী চাকমা সাথী বলেন, চাকমা সার্কেল চিফ কর্তৃক নারীর অধিকার বিষয়ে প্রথাগত বিচার ব্যাবস্থায় যে সকল উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে, তা জনগণের কাছে পৌঁছিয়ে দিতে হবে। শুধুমাত্র হেডম্যান-কার্বারীদের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখলে এবং তা জনগণের কাছে পৌঁছানো না হলে নারীরা এর সুফল পাবে না। প্রথাগত প্রতিষ্ঠানের মধ্যে নারীর সংখ্যাগত ক্ষমতায়নের পাশাপাশি নারী-পুরুষ নেতৃত্বের গুনগত মান উন্নয়নের প্রতিও লক্ষ্য রাখতে হবে।