অন্যান্য

আদিবাসী দিবস উপলক্ষ্যে গারো স্টুডেন্ট ইউনিয়ন কর্তৃক সহস্র প্রদীপ প্রজ্জ্বলন

সতেজ চাকমা: ”সব অন্ধকার দূর করে আলোয় ভরে উঠুক সকল আদিবাসীর প্রাণ” এই স্লোগানকে ধারণ করে আগামীকালকের (৯ আগষ্ট) আন্তর্জাতিক আদিবাসী দিবসকে সামনে রেখে গারো স্টুডেন্ট ইউনিয়ন কর্তৃক কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সহস্র প্রদীপ প্রজ্জ্বলন করা হয়েছে।দেশে বসবাসরত মূল ধারার বাঙালি জনগোষ্ঠী ছাড়া যেসব ভিন্ন ভাষাভাষী ও সংস্কৃতির অধিকারী আদিবাসী মানুষ শাসকগোষ্ঠীর নির্যাতন,নিপীড়ন ও সহস্র গ্লানিকে সাথী করে জীবন অতিবাহিত করছে তাদের জীবনে নতুন দিনের সুন্দর ভোরের প্রত্যাশা নিয়ে অন্ধকারের মধ্যে আলো জ্বালিয়ে অগ্নিকে স্বাক্ষী রেখে গারো ছাত্ররা শপথ নিলেন নতুন দিনের লড়াইয়ের ময়দানে সামিল হওয়ার ।
উক্ত আয়োজনে প্রধান অথিতি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন আদিবাসী বিষয়ক সংসদীয় ককাসের সভাপতি ফজলে হোসেন বাদশা এমপি। এছাড়া বিশেষ অথিতি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় আদিবাসী পরিষদের সভাপতি রবীন্দ্রনাথ সরেন,ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক ড.রোবায়েত ফেরদৌস। এছাড়া বিভিন্ন আদিবাসী ছাত্র সংগঠনের নেতৃবৃন্দ সংহতি বক্তব্য রাখেন।
সংহতি জানিয়ে বক্তব্য রাখেন,বাংলাদেশ আদিবাসী ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রিবেং দেওয়ান,পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ী ছাত্র পরিষদের কেন্দ্রীয় সভাপতি জুয়েল চাকমা,ত্রিপুরা স্টুডেন্টস ফোরামের ঢাকা মহানগরের সভাপতি অসীম রায় ত্রিপুরা,বাংলাদেশ হাজং ছাত্র সংগঠনের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক আশীষ হাজং প্রমুখ।
গারো স্টুডেন্ট ইউনিয়নের ঢাকা মহানগর শাখার সাংগনিক সম্পাদক তমাল স্নালের সঞ্চালনায় কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি শৈবাল রাংসা’র সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সমাবেশে স্বাগত বক্তব্য রাখেন সংগঠনটির ঢাকা মহানগর শাখার শিক্ষা ও সাহিত্য বিষয়ক সম্পাদক সতীর্থ চিরান । এছাড়া বক্তব্য রাখেন সংগঠনটির শুভ মানকিন ।
প্রধান অথিতির বক্তব্যে ফজলে হোসেন বাদশা এমপি আদিবাসীদের লড়াই সংগ্রামের কথা স্মরণ করে বলেন, ব্রিটিশ বিরোধী সংগ্রাম থেকে আদিবাসীদের লড়াইয়ের ঐতিহ্য অপরিসীম।তাদেরকে আদিবাসী হিসাবে স্বীকৃতি না দেওয়াটা আমাদের দুর্ভাগ্য । তিনি অবিলম্বে আদিবাসীদের সাংবিধানিক স্বীকৃতি দাবী করেন।
বিশেষ অথিতির বক্তব্যে জাতীয় আদিবাসী পরিষদের সভাপতি বলেন, আদিবাসীদের লড়াই করে বেঁচে থাকার ইতিহাসে যারা পথ দেখিয়েছেন সেই সিঁদু-কানু, চাঁদ-ভৈরব থেকে শুরু করে পাহাড়ের মানবেন্দ্র নারায়ন লারমা এবং মধুপুরের পীরেন স্নাল সহ সকল আদিবাসী সংগ্রামীদের চলমান লড়াইয়কে এগিয়ে নিতে হবে তরুণ ছাত্র যুবদের । রোবায়েত ফেরদৌস তার বক্তব্যে আদিবাসী অধিকার নিয়ে কাজ করা সকল বিপ্লবীদের স্মরণ করে বলেন, এই বহুত্ববাদী ও অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশে একজন বাঙালী মুসলমান যে অধিকার ভোগ করে একজন আদিবাসীও সে অধিকার ভোগ করতে পারার যে ন্যায্য দাবী সে দাবীকে প্রতিষ্ঠার জন্য সাহসের সহিত লড়তে হবে।
বাংলাদেশ আদিবাসী ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের সাধারন সম্পাদক রিবেং দেওয়ান আদিবাসী অধিকার আন্দোলনে আদিবাসী বাঙালি সকল তরুণদের সামিল হওয়ার আহ্বান জানান এবং পাঠ্যপুস্তকে সাম্প্রদায়িকতার বিষয়টি উল্লেখ করে বলেন, মূল ¯্রােতধারার বাঙালীদের সাথে আদিবাসীদের আলাদা করে দেওয়া হয় মূলত পাঠ্যপুস্তকে আদিবাসীদেরকে হেয় করে উপস্থাপনের মধ্য দিয়ে।
এছাড়া সংহতি বক্তব্যে পাহাড়ী ছাত্র পরিষদের কেন্দ্রীয় সভাপতি জুয়েল চাকমা সাম্প্রতিক সময়ে পাহাড়ে সংঘটিত ধর্ষনের মহোৎসবের কথা জানিয়ে বলেন, পাহাড়ে একের পর আদিবাসী মেয়ে ধর্ষণ,ধর্ষণের পর হত্যা, বাস্তুভিটা থেকে উচ্ছেদ,হামলা এবং প্রতিবাদ করলে মামলার পর মামলা দেয়া হচ্ছে ।
সরকার যদি মনে করে যে,আদিবাসীরা কেবল হাহাকার, কান্নার মধ্যেই দিনাতিপাত করবে তবে তারা ভূল করছে। যেকোনো সময় এ কান্না বিদ্রোহে পরিণত হতে পারে বলেও হুশিয়ার উচ্চারণ করেন এই ছাত্রনেতা ।
সমাবেশের পরে আদিবাসী বিষয়ক সংসদীদ ককাসের সভাপতি ফজলে হোসেন বাদশা এমপি এবং এক গারো শিশুর হাত ধরে সহ¯্র মোমবাতি প্রজ্জ্বলন শুরু হয় ।আলোয় ভরে ওঠে সমগ্র শহীদ মিনার।
পরে সমাবেশ থেকে আদিবাসীদের সাংবিধানিক স্বীকৃতি সহ পাঁচ দফা দাবী জানানো হয়। সমাবেশের সভাপতি শৈবাল রাংসার সমাপনি বক্তব্যের মধ্য দিয়ে সহ¯্র মোমবাতি প্রজ্জ্বলন অনুষ্ঠান সম্পন্ন হয়।

Back to top button