অন্যান্য

আদিবাসী ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের ৯ম কাউন্সিল সম্পন্ন

বাংলাদেশের আদিবাসী অধিকার আন্দোলনের নেতৃস্থানীয় সংগঠন বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরাম এর ভ্রাতৃপ্রতীম ছাত্রসংগঠন বাংলাদেশ আদিবাসী ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের ৯ম কাউন্সিল ও ছাত্র সম্মেলন আজ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডাকসু ক্যাফেটেরিয়ায় অনুষ্ঠিত হয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডাকসু ক্যাফেটেরিয়া প্রাঙ্গনে অনুষ্ঠিত উক্ত কাউন্সিল ও ছাত্র সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন বিগত কমিটির সিনিয়র সহ-সভাপতি অমর শান্তি চাকমা।

বিগত কমিটির সাধারন সম্পাদক রিবেং দেওয়ানের পরিচালনায় উক্ত কাউন্সিল ও সম্মেলনে স্বাগত বক্তব্য রাখেন, বিগত কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক পলাশ মাহাতো। তিনি বলেন, বহুল আলোচিত আলফ্রেড সরেন হত্যাকান্ডের প্রতিবাদ করতে যেয়ে এক বিশেষ প্রেক্ষাপটে প্রতিষ্ঠা পেয়েছিল বাংলাদেশ আদিবাসী ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ। পাহাড় এবং সমতলের আদিবাসী ছাত্র-যুবাদের অধিকার আদায়ের সম্মিলিত প্লাটফরম হিসাবে এই ছাত্র সংগঠন দেশের বিভিন্ন প্রান্তে সক্রিয় আদিবাসী ছাত্র সংগঠনসমূহকে এককাতারে নিয়ে এসে বাংলাদেশে আদিবাসী অধিকার আন্দোলনে যোগ করে নতুন মাত্রা। বাংলাদেশের আদিবাসী প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর প্রতিধ্বনি হিসাবে এই ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ আজও তাঁর প্রতিবাদের কন্ঠস্বর অব্যাহত রেখেছে। এই কাউন্সিলের মাধ্যমে এই পরিষদ আরো প্রাণবন্ত ও গতিশীল নেতৃত্ব পাবে বলে তিনি প্রত্যাশা রাখেন।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে আদিবাসী ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের সাবেক সাধারন সম্পাদক সোহেল চন্দ্র হাজং বলেন, বাংলাদেশের ৫৪ টি-র অধিক আদিবাসী জনগোষ্ঠীর ছাত্র-তরুণদের একসাথে দাঁড়ানোর সম্মিলিত প্লাটফরম এই সংগঠন। পাহাড় এবং সমতলের আদিবাসীদের উপর চলমান নিপীড়ন, নির্যাতন এবং বৈষম্যের বিরুদ্ধে একসাথে কন্ঠ মিলিয়ে প্রতিরোধ গড়ে তোলার জন্যই আজকে এতগুলো প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে ঐক্যবদ্ধ করার প্রয়াস। এই প্রয়াসের পথে আজকের কাউন্সিল আবারো এই সংগঠনকে প্রাণবন্ত করবে বলে মত দেন সাবেক এই ছাত্রনেতা।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের সদস্য চঞ্চনা চাকমা বলেন, সারাবিশ্বের আদিবাসীদের ন্যায় আমাদের দেশের আদিবাসীদের অবস্থাও বর্তমান সময়েঅত্যন্ত নাজুক। এই নাজুক পরিস্থিতিতে আমাদের উচিত আমাদের সমস্যাগুলোর গভীরে গিয়ে খোঁজ নেওয়া এবং তরুণ সমাজকে সংগঠিত করার চেষ্টা অব্যাহত রাখা। আজকের ছাত্র-তরুণরা যদি এগিয়ে না আসেন তবে আদিবাসীদের জীবনে চলমান নিপীড়ন-বৈষম্যের বিপরীতে অধিকার সচেতন কাউকে আর ভবিষ্যতে পাওয়া যাবে না। তাই আমাদের সবাইকে আমাদের অধিকার এবং আমাদের সমস্যা সমাধানের জন্য সোচ্চার হতে হবে।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে আদিবাসী ফোরামের সাংস্কৃতিক সম্পাদক ও সাবেক ছাত্রনেতা হিরণ মিত্র চাকমা বলেন, আদিবাসী ছাত্রদের আদিবাসী অধিকার এবং সমস্যা নিয়ে অধ্যয়ন করতে হবে। অধ্যয়ন করে অনুশীলন করতে হবে।আদিবাসীদের জীবনে চলমান সকল প্রকার আগ্রাসন-নিপীড়ন-বৈষম্যের বিরুদ্ধে যুক্তির আলো নিয়ে হাজির হওয়ার জন্য আদিবাসী ছাত্রদের অবশ্যই অধিকতর অধ্যয়ন এবং বাস্তবভিত্তিক অনুশীলনের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশ আদিবাসী ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য সচিব এবং আদিবাসী ফোরামের ভূমি ও আইন বিষয়ক সম্পাদক উজ্জ্বল আজিম বলেন, পাহাড় এবং সমতলের আদিবাসীদের যে ছাত্র সংগঠনগুলো আছে সেগুলোকে একই প্লাটফরমে নিয়ে আসার ক্ষেত্রেঐক্যবদ্ধভাবে সংগঠিত হওয়ার বিকল্প নেই। বাংরাদেশ আদিবাসী ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ হতে পারে আমাদের ঐক্য প্রতিষ্ঠার যথার্থ হাতিয়ার।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে আদিবাসী ফোরামের সাধারন সম্পাদক সঞ্জীব দ্রং বলেন, আমরা এখনো স্বপ্ন দেখি আদিবাসী ছাত্ররা আদিবাসীদের অধিকার প্রতিষ্ঠায় এগিয়ে আসবে। আদিবাসী জীবনে ভোর আসবে এই তরুণদের হাত ধরে। এই ভোর নিয়ে আসার জন্য আমাদেরকে অবশ্যই হাতে হাত ধরে থাকতে হবে।আদিবাসী ছাত্র-ছাত্রীদের অনুপ্রেরণা দিয়ে তিনি আরো বলেন, আপনারা কখনো নিজেদের ছোট মনে করবেন না। এখন বিভিন্ন অনুষ্ঠানে আমরা আদিবাসী অধিকার নিয়ে কিছু বলার আগেই অনেক বাঙালী বন্ধু আমাদের অধিকার নিয়ে কথা বলেন। এই বন্ধুরাই আমাদের প্রেরণা। কাজেই রাষ্ট্রের হাজারো বঞ্চনা ও নিপীড়নের মধ্যেও আমাদেরকে স্বপ্ন দেখতে হবে নতুন জীবনের।

অতিথিদের বক্তব্যের পরে কাউন্সিল অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয়। কাউন্সিল অধিবেশনে সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির আহবায়ক এবং বিদায়ী কমিটিরসহ-সভাপতি অমর শান্তি চাকমা প্রস্তাবিত নতুন কমিটির সদস্যদের নাম উপস্থাপন করেন। উপস্থিত সকল আদিবাসী ছাত্ররা হাত তালি দিয়ে নতুন নেতৃত্বকে স্বাগত জানান। নতুন কমিটির সভাপতি সুলভ চাকমা এবং সাধারন সম্পাদক অলীক মৃ এবং সাংগঠনিক সম্পাদক বাদল হাজং বাপ্পি সহ নতৃন নেতৃত্বকে শপথ বাক্য পাঠ করান কাউন্সিল ও সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির আহ্বায়ক এবং সম্মেলন ও কাউন্সিল অনুষ্ঠানের সভাপতি অমর শান্তি চাকমা।

Back to top button