আঞ্চলিক সংবাদ

“আদিবাসীদের শিক্ষা, ভূমি ও জীবনের অধিকার”

৬ই আগস্ট ২০১৬ রাজধানীর সুন্দরবন হোটেলে আন্তর্জাতিক আদিবাসী দিবস ২০১৬ উপলক্ষে বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরাম কতৃক আয়োজিত সংবাদ সন্মেলনের মূল প্রবন্ধ আইপিনিউজের পাঠকদের জন্য নিচে হুবুহু দেওয়া হলঃ-

বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরাম
“Indigenous Peoples’ Right to Education, Land and Life”
“আদিবাসীদের শিক্ষা, ভূমি ও জীবনের অধিকার”

আন্তর্জাতিক আদিবাসী দিবস ২০১৬ উপলক্ষে
সংবাদ সম্মেলন
৬ আগস্ট ২০১৬, শনিবার, সকাল ১১ টা, হোটেল সুন্দরবন, ঢাকা
প্রিয় সাংবাদিক বন্ধুগণ,
বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের পক্ষ থেকে প্রীতি ও শুভেচ্ছা গ্রহণ করুন। প্রতি বছরের মতো আদিবাসী দিবসকে সামনে রেখে অনুষ্ঠিত এ সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত হওয়ার জন্য আপনাদের সকলকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি।
আপনারা জানেন, আগামী ৯ আগস্ট বিশ্বব্যাপী জাতিসংঘ ঘোষিত ২২তম আদিবাসী দিবস উদযাপিত হবে। জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদ ১৯৯৪ সালে রেজুলেশন ৪৯/২১৪ গ্রহণ করে ৯ আগস্টকে আদিবাসী দিবস হিসেবে ঘোষণা করে এবং তা পালনের জন্য সদস্য রাষ্ট্রসমূহকে আহ্বান জানায়। তারপর থেকে বিগত ২২ বছরে বৈশ্বিক পর্যায়ে অনেক সাফল্য অর্জিত হয়েছে। তম্মধ্যে ২০০০ সালে জাতিসংঘে আদিবাসী বিষয়ক স্থায়ী ফোরাম গঠন, ২০০১ সাল থেকে আদিবাসী জাতিগোষ্ঠীর অধিকার বিষয়ক স্পেশাল র‌্যাপোটিয়ার নিয়োগ, ২০০৫-২০১৪ সালের সময়কালকে দ্বিতীয় আদিবাসী দশক হিসেবে পালন, ২০০৭ সালে আদিবাসী জাতিগোষ্ঠীর অধিকার বিষয়ক জাতিসংঘের ঘোষণাপত্র গ্রহণ, ২০০৭ সালে আদিবাসী অধিকার সংক্রান্ত বিশেষজ্ঞ কর্মব্যবস্থা প্রবর্তন, ২০১৪ সালে সাধারণ পরিষদের বিশ্ব আদিবাসী সম্মেলন আয়োজন এবং এ সম্মেলনে ঐতিহাসিক ‘আউটকাম ডকুমেন্ট’ গ্রহণ ইত্যাদি বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। আপনারা জানেন, আদিবাসী জাতিসমূহের জীবনধারা, মৌলিক অধিকার ও মানবাধিকার, আদিবাসী জাতিসমূহের ভাষা ও সংস্কৃতি তথা আত্ম-নিয়ন্ত্রণাধিকার সম্পর্কে সদস্য রাষ্ট্র, জাতিসংঘের বিভিন্ন সংস্থা, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়, নাগরিক সমাজ, মিডিয়া, সংখ্যাগরিষ্ঠ অ-আদিবাসী জনগণ ও সংশ্লিষ্ট সকলকে সচেতন করে তোলা এবং আদিবাসীদের অধিকারের প্রতি সমর্থন বৃদ্ধি করাই হলো আদিবাসী দিবস উদযাপনের মূল লক্ষ্য।

প্রিয় সাংবাদিক বন্ধুগণ,
বিশ্বের ৯০টি দেশের প্রায় ৪০ কোটির অধিক আদিবাসী জনগণের মতো বাংলাদেশে বসবাসকারী ৩০ লক্ষাধিক আদিবাসী জনগণ এবারও জাতিসংঘ ঘোষিত আন্তর্জাতিক আদিবাসী দিবস জাতীয়ভাবে উদযাপনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। জাতিসংঘ কর্তৃক ঘোষিত ২০১৬ সালের আদিবাসী দিবসের প্রতিপাদ্য বিষয় “Indigenous Peoples’ Right to Education” এই মূলসুরের সাথে সঙ্গতি রেখে বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরাম এ বছরের প্রতিপাদ্য বিষয় নির্ধারণ করেছে, “আদিবাসীদের শিক্ষা, ভূমি ও জীবনের অধিকার।”
আদিবাসীদের বর্তমান বাস্তবতায় এই মূলসুর অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। কেননা আদিবাসীদের বঞ্চনার মাত্রা শিক্ষা থেকে শুরু করে ভূমি অধিকার, এমনকি বেঁচে থাকার অধিকার পর্যন্ত বিস্তৃত হয়েছে। স্বাধীনতার ৪৫ বছরে দেশের ৩০ লক্ষাধিক আদিবাসী জনগণ মানবাধিকার ও মৌলিক স্বাধীনতা থেকে বঞ্চিত রয়েছে। সম্পূর্ণ এক অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে আদিবাসী ভাষা, সংস্কৃতি ও জীবনধারাকে ঠেলে দেওয়া হয়েছে। ক্রমাগতভাবে আদিবাসীদের ভূমি অধিকার কেড়ে নেওয়া হয়েছে। এক সময় যেসব অঞ্চলে আদিবাসীরা সংখ্যাগরিষ্ঠ ছিল, সেখানে পপুলেশন ট্রান্সফারের ফলে আদিবাসী জনগণ নিজভূমিতে সংখ্যালঘুতে পরিণত হয়েছে। পার্বত্য চট্টগ্রাম, চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি-মিরসরাই-সীতাকুন্ডু পাহাড়, টেকনাফ, গারো পাহাড়, উত্তরবঙ্গ, গাজীপুর, মধুপুর বনাঞ্চল, পটুয়াখালী-বরগুনা, খাসিয়া অঞ্চল সর্বত্র আদিবাসীরা তাদের ঐতিহ্যগত ভূমি হারিয়েছে। আদিবাসীদের মানবিক মর্যাদা প্রতিষ্ঠা তো দূরের কথা, এখন আত্ম-পরিচয় ও নিজস্ব সংস্কৃতি নিয়ে অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখাই কঠিন হয়ে পড়েছে। তারপরও আদিবাসী জনগণ অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য সংগ্রাম করে চলেছে।

প্রিয় সাংবাদিক বন্ধুগণ,
এ বছর জাতিসংঘ আদিবাসীদের শিক্ষার অধিকারের উপর জোর দিয়েছে। আদিবাসীরা মনে করে, আদিবাসীদের শিক্ষার অধিকার হচ্ছে মানবাধিকার। আদিবাসীদের জন্য এই মূলসুর খুব গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের দেশে বিশেষভাবে আদিবাসীদের শিক্ষার উপর গুরুত্ব দিতে হবে। যুগ যুগ ধরে ঐতিহাসিক শোষণ ও বঞ্চনার কারণে আদিবাসীরা প্রান্তিক অবস্থায় চলে গেছে। নাগরিক ও রাজনৈতিক অধিকার, সামাজিক, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক অধিকার থেকে বহু কাল আদিবাসীরা বঞ্চিত রয়েছে। ফলে সাধারণ শিক্ষা ও উচ্চ শিক্ষার ক্ষেত্রে আদিবাসী সমাজ পিছিয়ে রয়েছে। আমাদের জাতীয় শিক্ষা নীতি ২০১০ আদিবাসীদের শিক্ষা ও সংস্কৃতি বিকাশের প্রয়োজনীয়তাকে স্বীকৃতি দিয়েছে। শিক্ষা নীতির ৭ নং উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, “জাতি, ধর্ম, গোত্র-নির্বিশেষে আর্থ-সামাজিক শ্রেণী-বৈষম্য ও নারী-পুরুষ বৈষম্য দূর করা, অসামপ্রদায়িকতা, বিশ্ব-ভ্রাতৃত্ব, সৌহার্দ্য ও মানুষে মানুষে সহমর্মিতাবোধ গড়ে তোলা এবং মানবাধিকারের প্রতি শ্রদ্ধাশীল করে তোলা।” ২৩ নং লক্ষ্যে বলা আছে, “দেশের আদিবাসীসহ সকল ক্ষুদ্র জাতিসত্তার সংস্কৃতি ও ভাষার বিকাশ ঘটানো।”
জাতীয় শিক্ষা নীতির “আদিবাসী শিশু” অনুচ্ছেদে আছে, “আদিবাসী শিশুরা যাতে নিজেদের ভাষায় শিখতে পারে সেই লক্ষ্যে তাদের জন্য আদিবাসী শিক্ষক ও পাঠ্য পুস্তকের ব্যবস্থা করা হবে। এই কাজে, বিশেষ করে পাঠ্য পুস্তক প্রণয়নে, আদিবাসী সমাজকে সমপৃক্ত করা হবে। আদিবাসী প্রান্তিক শিশুদের জন্য বিশেষ সহায়তার ব্যবস্থা করা হবে।” আজ আদিবাসী দিবসে আমি আদিবাসীদের শিক্ষা বিস্তারে শিক্ষা নীতির যথাযথ বাস্তবায়নের দাবি জানাচ্ছি। আদিবাসী অঞ্চলের স্কুলগুলোতে আদিবাসী শিক্ষক নিয়োগের দাবি জানাচ্ছি।

আদিবাসীদের ভূমি ও জীবনের অধিকার
এক কথায় বলা যায়, দেশে আদিবাসী ভূমি দখলের উৎসব চলছে। আদিবাসীদের কাছে ভূমিই জীবন ও অস্তিত্বের প্রতীক। ভূমি ছাড়া আদিবাসীদের অস্তিত্ব কল্পনা করা যায় না। তাই আমরা বলি, ভূমি মানেই জীবন, ল্যান্ড ইজ লাইফ। বিশ্বজুড়ে ভূমি আদিবাসীদের কাছে পবিত্র। আদিবাসীরা চিরকাল ভূমি, বন ও প্রকৃতিকে জীবনের অংশ হিসেবে দেখেছেন, কোনোদিন বেচাকেনার বিষয় হিসেবে দেখেন নি। এ কারণে আদিবাসীরা নিজস্ব ভূমিকে দলিলভুক্ত করেননি। এখানেই আদিবাসীদের ভূমি মালিকানার সংস্কৃতির সাথে আধুনিক আইনী ব্যবস্থার সংঘাত। ফলে আদিবাসীরা তাদের জীবনের মূল অবলম্বন ভূমি হারিয়েছেন। প্রভাবশালী ভূমিগ্রাসী চক্র আদিবাসীদের জমিজমা কেড়ে নিয়েছে। জাল দলিল দেখিয়ে, হুমকি দিয়ে, আইনের ফাঁক ফোকর দিয়ে সর্বশান্ত করেছে আদিবাসীদের। আর দেশের সরকার, যাদের রক্ষা করার কথা আদিবাসীদের অধিকার, তারা সব সময় শক্তিমানদের সহায়তা করেছে প্রত্যক্ষ, অথবা পরোক্ষভাবে। আদিবাসীরা হয়তো কখনও কখনও আইনের আশ্রয় নিয়েছেন, মামলা করেছেন, কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে মামলা চালাতে গিয়ে আরও নিঃস্ব হয়েছেন। বছরের পর বছর আদিবাসীরা মামলা করে জমি ফেরত পেয়েছেন এ রকম নজির নেই বললেই চলে।
এখনো প্রতিনিয়ত জমি হারাচ্ছেন আদিবাসীরা। শুধু ভূমিলোভী চক্র নয়, কখনও কখনও সরকার বিভিন্ন প্রকল্প বিশেষত ন্যাশনাল পার্ক, ইকো-পার্ক, রিজার্ভ ফরেস্ট, সামাজিক বনায়ন, সামরিক বাহিনীর ক্যাম্প ও স্থাপনা সম্প্রসারণ ইত্যাদির কারণে আদিবাসীরা ভূমি হারাচ্ছেন। ইকো-পার্কের নামে খাসিয়া ও গারোদের উচ্ছেদের চেষ্টা করা হয়েছিল। পরে আদিবাসীদের ব্যাপক আন্দোলনের ফলে প্রকল্পগুলো বাস্তবায়িত হয়নি। কিন্তু বনভূমি এলাকায় বসবাসরত আদিবাসীদের হয়রানি শেষ হয়নি।
যে ভূমিকে আদিবাসীরা মনে করতেন তাদের অস্তিত্বের চিহ্ন, এখন সেই ভূমির অধিকার দিন দিন সংকুচিত হচ্ছে। যে বনকে তারা মনে করতেন নিজেদের, সেই বনের উপর তাদের অধিকারকে অস্বীকার করা হচ্ছে। আইএলও কনভেনশন ১০৭ অনুস্বাক্ষর করার পরও কোনো সরকার আদিবাসীদের ঐতিহ্যগত ভূমির অধিকারকে সুরক্ষার ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। এই কনভেনশনের মূল কথা হলো, আদিবাসীদের কাগজ বা দলিল থাকুক বা না থাকুক, যে জমি ঐতিহ্যগতভাবে আদিবাসীরা ব্যবহার করেন, সে জমি তাদের। তাদের কাছ থেকে সরকার বা অন্যরা যদি সে জমি জোরপূর্বক কেড়ে নিতে চায়, সেটা হবে আন্তর্জাতিক সনদের লংঘন, যা মানবাধিকার লংঘন হিসেবে চিহ্নিত হবে।
সম্প্রতি মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গল উপজেলার নাহার খাসিয়া পুঞ্জির ৮৫ পরিবারকে উচ্ছেদের নোটিশ দিয়েছে জেলা প্রশাসন। আইন ও রীতি লংঘন করে চা বাগানের পক্ষে প্রশাসন এই অবৈধ কাজ করেছে। খাসিয়া আদিবাসীরা সিলেট বিভাগীয় কমিশনারের নিকট আপিল করেছে। আমরা জানতে পেরেছি যে, গত ২ আগস্ট সিলেট বিভাগীয় কমিশনার উচ্ছেদ নোটিশটি বাতিলের রায় দিয়েছেন। আমরা এই রায়কে স্বাগত জানাচ্ছি। তবে এই যাত্রায় খাসিয়ারা উচ্ছেদের হাত থেকে রক্ষা পেলেও বৃহত্তর সিলেট অঞ্চলের খাসিয়া ও গারোদের ভূমি সমস্যার কোনো স্থা সমাধান হয়নি। মৌলভীবাজার জেলার বড়লেখা উপজেলার পাল্লাতল খাসিয়া পুঞ্জির ৩৫০ গারো ও খাসিয়া পরিবার তাদের ৩৬০ একর জমি বেহাত হওয়ার আশংকায় রয়েছে। শ্রীমঙ্গল উপজেলার রেমা-কালেঙ্গা ত্রিপুরা জনগোষ্ঠীর উপর বন বিভাগের কর্মচারী ও অভিবাসিত বাঙালীদের আক্রমনে জীবন রক্ষার জন্য রেমা-কালেঙ্গার ১৮৭টি পরিবার ভারতের সীমান্তে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়েছিল। এই ১৮৭টি ত্রিপুরা পরিবারকে দেশে ফিরিয়ে আনা হলেও তারা বর্তমানেও নিরাপত্তাহীনতায় বসবাস করছে।
এদিকে গত ফেব্রুয়ারী মাসে মধুপুর গড়ের ১৪টি আদিবাসী গ্রামকে অন্তর্ভুক্ত করে বন বিভাগ ২০ ধারা জারি করে চূড়ান্তভাবে রিজার্ভ ফরেস্ট ঘোষণা করেছে। ফলে এখানে গারো ও কোচ আদিবাসীরা উচ্ছেদের হুমকির মধ্যে পড়েছে। আদিবাসীদের সাথে কোনোরূপ আলাপ-আলোচনা না করে ৯,১৪৫ একর জমি নিয়ে এই রিজার্ভ ফরেস্ট ঘোষণা করা হয়েছে।
এদিকে রংপুরের সাহেবগঞ্জ-বাগদাফার্ম এলাকায় বহুদিন ধরে হাজার হাজার আদিবাসী ও বাঙালি তাদের অধিগ্রহণকৃত ভূমি পুনরুদ্ধারের জন্য আন্দোলন করছেন। পাকিস্তান আমলে এই অঞ্চলে ইক্ষু চাষের জন্য আদিবাসী ও বাঙালিদের কাছ থেকে প্রায় ১,৮৪২ একর জমি সরকার অধিগ্রহণ করেছিল। সেই সব জমিতে এখন ইক্ষু চাষ হচ্ছে না। ফলে চুক্তির শর্ত অনুযায়ী আদিবাসী ও বাঙালি মালিক ও তাদের বংশধররা এই জমি ফেরত পাবার দাবিদার। কিন্তু সরকার নানা টালবাহানায় জমি ফেরত দিচ্ছে না। উল্টো আন্দোলনরত আদিবাসী ও বাঙালিদের নামে মামলা দিয়েছে। এভাবে নানা ধরনের হয়রানি ও আক্রমণের শিকার হচ্ছে আদিবাসীরা। সম্প্রতি জয়পুরহাট জেলার আক্কেলপুর উপজেলার মুন্ডা আদিবাসীদের ভূমি দখলের জন্য দফায় দফায় হামলা চালানো হয়েছে।

পটুয়াখালী-বরগুনা অঞ্চলে রাখাইনদের অস্ত্তিত্ব পুরোপুরি বিলীন হওয়ার পথে। তাদের জমিজমা, মন্দির, শ্মশান, ভিটেমাটি সব দখল হয়ে গেছে। এক সময় এই অঞ্চলে লক্ষাধিক রাখাইন বসবাস করতেন। এখন এই অঞ্চলে রাখাইন জনসংখ্যা আড়াই হাজারেরও কম। অনেকেই দেশান্তরিত হয়েছেন অথবা অন্যত্র চলে গেছেন নিরাপত্তার কারণে। তেমনিভাবে এক সময় লক্ষাধিক ত্রিপুরা কুমিল্লা-চাঁদপুর অঞ্চলে বসবাস করতেন। নিরাপত্তাহীনতাসহ নানা কারণে তারা দেশান্তরিত ও অন্যত্র চলে গেছে। এখন কুমিল্লা-চাঁদপুরে সর্বসাকূল্যে ত্রিপুরা জনসংখ্যা হবে মাত্র হাজার পাঁচেক।

পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি ও ভূমি বেদখল
পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি স্বাক্ষরের পর ১৮ বছর অতিক্রান্ত হলেও চুক্তির মৌলিক বিষয়গুলোর মধ্যে বিশেষত: পার্বত্য চট্টগ্রামের জুম্ম অধ্যুষিত অঞ্চলের বৈশিষ্ট্য সংরক্ষণ; পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ ও তিন পার্বত্য জেলা পরিষদের আওতাধীন বিষয় ও কার্যাবলী কার্যকরকরণ এবং এসব পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিতকরণ; পার্বত্য চট্টগ্রামের ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তিকরণ; আভ্যন্তরীণ জুম্ম উদ্বাস্তু ও প্রত্যাগত জুম্ম শরণার্থীদের জায়গা-জমি প্রত্যর্পণ ও পুনর্বাসন; সেনা শাসন ‘অপারেশন উত্তরণ’সহ সকল অস্থায়ী ক্যাম্প প্রত্যাহার; অস্থানীয়দের নিকট প্রদত্ত ভূমি ইজারা বাতিলকরণ; পার্বত্য চট্টগ্রামের সকল চাকুরীতে জুম্মদের অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে তিন পার্বত্য জেলার স্থায়ী অধিবাসীদের নিয়োগ; চুক্তির সাথে সামঞ্জস্য বিধানের জন্য অন্যান্য সংশ্লিষ্ট আইনসমূহ সংশোধন; সেটেলার বাঙালিদেরকে পার্বত্য চট্টগ্রামের বাইরে সম্মানজনকভাবে পুনর্বাসন ইত্যাদি বিষয়গুলো বাস্তবায়িত না হওয়ায় পার্বত্য চট্টগ্রাম সমস্যার সমাধান এখনো কাঙ্ক্ষিত পর্যায়ে অগ্রগতি লাভ করেনি।
এভাবে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়নের প্রক্রিয়াকে সম্পূর্ণরূপে একপাশে ও অনিশ্চয়তার মধ্যে রেখে, পক্ষান্তরে সরকার একের পর এক চুক্তি বিরোধী ও জুম্ম-স্বার্থ পরিপন্থী কার্যক্রম গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করে চলেছে। পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি ও আইন মোতাবেক জুম্ম জনগণের ভূমি অধিকার নিশ্চিত না করে বিজিবি ক্যাম্প স্থাপনের নামে, পর্যটন কেন্দ্র স’াপনের নামে, রিজার্ভ ফরেষ্ট ঘোষণার নামে, ব্যবসায়ী এবং প্রভাবশালী আমলা ও রাজনৈতিক ব্যক্তিকে হর্টিকালচার ও রাবার চাষের নামে ইজারা প্রদান করে হাজার হাজার একর জুম্মদের সামাজিক মালিকানাধীন জুমভূমি ও মৌজাভূমি জবরদখল করা হচ্ছে। পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি স্বাক্ষরের পরও ভূমি জবরদখলের কারণে কেবলমাত্র বান্দরবান জেলায় আদিবাসী জুম্মরা তাদের ৩০টি গ্রাম থেকে উচ্ছেদ হয়ে অন্যত্র চলে যেতে বাধ্য হয়েছে। সেনাবাহিনী কর্তৃক সাজেকে পর্যটন কেন্দ্র স্থাপনের কারণে দুটি ত্রিপুরা গ্রামের ৬৫ পরিবার এবং বান্দরবানে বগা লেকের ৩১ পরিবার বম গ্রামবাসী উচ্ছেদের মুখে রয়েছে। সরকার চুক্তি অনুযায়ী ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি না করে উত্তরোত্তর পার্বত্য চট্টগ্রামের ভূমি সমস্যাকে জটিল করে তুলছে। পার্বত্যবাসীর চরম বিরোধিতা সত্ত্বেও জনমতকে পদদলিত করে উন্নয়নের নামে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর প্রহরায় রাঙ্গামাটি মেডিকেল কলেজ এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় প্রকল্প বাস্তবায়নের প্রক্রিয়া চলছে। এভাবে সরকার চুক্তি বিরোধী ও জুম্ম স্বার্থ পরিপন্থী কার্যক্রম গ্রহণের মাধ্যমে জুম্মদের জাতিগতভাবে নির্মূলীকরণের কাজ জোরালোভাবে বাস্তবায়ন করে চলেছে।

প্রিয় সাংবাদিক বন্ধুগণ,
আপনারা নিশ্চয় জানেন, বাংলাদেশের সংবিধানে এখনো আদিবাসী জাতিসমূহের জাতিসত্তা, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, ভূমি অধিকারসহ মৌলিক অধিকারের স্বীকৃতি নেই। আমরা আদিবাসী সংগঠনের পক্ষ থেকে বার বার বলার চেষ্টা করেছি যে, আদিবাসী জনগণের আত্ম-পরিচয়ের অধিকার রয়েছে। এটি আমাদের মানবাধিকার। আন্তর্জাতিকভাবেও আদিবাসীদের আত্ম-পরিচয়ের অধিকার স্বীকৃত। তাই সংবিধান সংশোধন করে আদিবাসী জাতিসমূহের আশা-আকাঙক্ষা ও দাবির ভিত্তিতে আদিবাসীদের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, ভূমি অধিকারসহ মৌলিক অধিকারের সাংবিধানিক স্বীকৃতি প্রদানের জন্য বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরাম সরকারের কাছে জোর দাবি জানাচ্ছে।
আদিবাসীদের মানবাধিকার পরিস্থিতি ভালো নয়। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে আদিবাসীদের ভূমি জবরদখল ও তাদের চিরায়ত ভূমি থেকে উচ্ছেদ করার হীন উদ্দেশ্যে আদিবাসীদের উপর সামপ্রদায়িক হামলা, আদিবাসীদের ভূমি জবরদখল ও উচ্ছেদ, আদিবাসী নারীর উপর ধর্ষণ, হত্যা, অপহরণসহ নৃশংস সহিংসতা বৃদ্ধি পেয়েছে। বিশেষ করে সাম্প্রতিক সময়ে আদিবাসী নারীর উপর সহিংসতার মাত্রা উদ্বেগজনকভাবে বৃদ্ধি পেয়ে চলেছে। কাপেং ফাউন্ডেশনের রিপোর্ট অনুসারে ২০১৫ সালে ১৫ জন আদিবাসীকে হত্যা করা হয়েছে। বেশ কয়েকটি সাম্প্রদায়িক হামলার ঘটনা ঘটেছে এবং ভূমিদস্যু ও সন্ত্রাসীরা আদিবাসীদের ৮৪টি বাড়ি-ঘর ধ্বংস ও ৩৫ বাড়িতে ভাংচুর ও লুটতরাজ চালায়। কমপক্ষে ৪৫টি আদিবাসী পরিবার উচ্ছেদের শিকার হয়। তাছাড়া ১,৪০০ পরিবার উচ্ছেদের হুমকির মধ্যে রয়েছে। ২০১৫ সালে ৮৫ আদিবাসী নারী শারীরিক নির্যাতনের শিকার হয়েছে। পার্বত্য চট্টগ্রামের আদিবাসীদের ৪টি বৌদ্ধ মন্দির এবং সমতলের একটি হিন্দু মন্দিরে লুটপাট ও ভাংচুর চালানো হয়। ২০১৫ সালে সারাদেশে ৮৫ জন আদিবাসী নারী ও কন্যাশিশু শারীরিক ও যৌন নির্যাতনের শিকার হয়েছে। চলতি বছরে জুন পর্যন্ত ২৯ জন আদিবাসী ও শিশু যৌন সহিংসতার শিকার হয়েছে।
কাপেং ফাউন্ডেশনের রিপোর্ট অনুসারে ২০১৫ সালে আদিবাসী নারী ও স্কুলের ছাত্রীসহ কমপক্ষে ৭৪ জন আদিবাসীকে সাজানো ফৌজদারী অপরাধে গ্রেফতার করা হয়েছে। ২০১৫ সালে আদিবাসীদেরকে অবৈধ গ্রেফতার, আটক এবং বিচারবহির্ভূত হত্যাকান্ডের মতো ঘটনা উদ্বেগজনকভাবে সংঘটিত হয়েছে। চলতি ২০১৬ সালে এই ধারা আরো বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে। গত মার্চ থেকে স্থানীয় প্রশাসনের যোগসাজশে বান্দরবান ও রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলার স্থানীয় ক্ষমতাসীন গোষ্ঠীর ষড়যন্ত্রে জনসংহতি সমিতি ও সমিতির সহযোগী সংগঠনের ২ জন সদস্যকে হত্যা, ১৭ জনকে আটক, ৩০ জনকে আহত, কমপক্ষে ৫০ জনের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দায়ের এবং অন্তত শতাধিক সদস্যকে এলাকাছাড়া করা হয়েছে।
বর্তমান সরকার বলছে বাংলাদেশ নিম্ন মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হয়েছে। বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরাম জোর দিয়ে বলতে চায়, দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে বসবাসরত হাজার হাজার আদিবাসী মানুষের জীবনে এ কথার প্রতিফলন নেই, এর সত্যতা নেই। মানবাধিকার লংঘন, ভূমি দখল, নিপীড়ন ও নির্যাতনের ফলে আদিবাসীদের অস্তিত্বই হুমকির মুখে কবলিত। মাথা পিছু আয়ের যে হিসাব দেখানো হয়, সেখানেও আদিবাসীদের প্রতিফলন নেই। স্থায়ীত্বশীল উন্নয়ন লক্ষ্য বা এসডিজিতে জাতিসংঘ আদিবাসীদের জীবনমান উন্নয়নের কথা বলছে। আর এ দেশে আদিবাসীদের অস্তিত্বই হুমকির মুখে কবলিত। দেশে যখন জবাবদিহিতা, আইনের শাসন, গণতন্ত্র ও স্বচ্ছতার অভাব প্রকট হয়, তখন আদিবাসীসহ দেশের গরিব ও খেটে খাওয়া সাধারণ মানুষের জীবনে নেমে আসে দুর্বিষহ পরিস্থিতি।

প্রিয় সাংবাদিক বন্ধুগণ,
দেশের গণতান্ত্রিক, অসামপ্রদায়িক ও প্রগতিশীল রাজনৈতিক ও নাগরিক সমাজকে সাথে নিয়ে নানা প্রতিকূলতা সত্ত্বেও বাংলাদেশের আদিবাসী জনগণ তাদের অধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছে। দেশের গণমাধ্যম ও সাংবাদিক সমাজ আদিবাসী অধিকার রক্ষায় ও জনসচেনতা তৈরিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে। আজ আদিবাসী দিবসে আপনাদের সহযোগিতার জন্য ধন্যবাদ জানাচ্ছি। বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরাম দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করে যে, সংগ্রামের পথেই আদিবাসীরা একদিন না একদিন তাদের আত্মনিয়ন্ত্রণ অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হবে। এই লক্ষ্যকে সামনে রেখে বিশ্বের অন্যান্য দেশের আদিবাসীদের মতো বাংলাদেশের আদিবাসীরাও আন্তর্জাতিক আদিবাসী দিবস উদযাপন করতে যাচ্ছে। এ দিবসটি আদিবাসীদের অধিকার আদায়ের পথে নতুন চেতনায় উজ্জীবিত ও ঐক্যবদ্ধ হওয়ার দিন।
আদিবাসী দিবসকে সামনে রেখে বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরাম ও অন্যান্য সংগঠন বিভিন্ন কর্মসূচী হাতে নিয়েছে। এসব কর্মসূচীর মধ্যে রয়েছে-
১ ৭ আগস্ট দিনব্যাপী সিরডাপ মিলনায়তনে আদিবাসী বিষয়ক সংসদীয় ককাসের অনুষ্ঠান;
২ ৮ আগস্ট বিকালে বাংলাদেশ গারো ছাত্র সংগঠন টিএসসিতে আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান এবং গারো স্টুডেন্ট ইউনিয়নের উদ্যোগে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে প্রদীপ প্রজ্জ্বলন;
৩ ৯ আগস্ট সকাল ১০টায় আদিবাসী দিবসের দিনে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের মূল অনুষ্ঠান- সমাবেশ, র‌্যালী ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। অনুষ্ঠানে সুলতানা কামাল উদ্বোধক এবং রাশেদ খান মেনন, এমপি, মাননীয় মন্ত্রী, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়, প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন। এ ছাড়াও দেশের বিশিষ্ট নাগরিকবৃন্দ উপস্থিত থেকে সংহতি জানাবেন;
৪ ১০ আগস্ট এএলআরডি ও ১০টির অধিক সংগঠন মিলিতভাবে আদিবাসীদের ভূমি অধিকার নিয়ে সেমিনার আয়োজন করবে সিরডাপ মিলনায়তনে;
এ ছাড়াও দেশের বিভিন্ন জেলায় ও উপজেলায় যেমন- রাজশাহী, দিনাজপুর, নাটোর, ঠাকুরগাঁও, ময়মনসিংহ, টাঙ্গাইল, গাজীপুর, নেত্রকোনা, সিলেট, মৌলভীবাজার, শেরপুর, রাঙ্গামাটি, বান্দরবান, খাগড়াছড়ি, চট্টগ্রাম, চাঁদপুর, কক্সবাজার প্রভৃতি স্থানে আদিবাসী দিবস উদযাপন করা হবে।
আন্তর্জাতিক আদিবাসী দিবস উপলক্ষে অনুষ্ঠিতব্য এসব কর্মসূচীতে অংশগ্রহণের জন্য বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরাম আপনাদের সকলকে সাদর আমন্ত্রণ জানাচ্ছে।

সাংবাদিক বন্ধুগণ,
আন্তর্জাতিক আদিবাসী দিবসে বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের দাবী-
১. আদিবাসীদের শিক্ষার অধিকার নিশ্চিতকরণে বিশেষ পদক্ষেপ নিতে হবে। আদিবাসীদের শিক্ষা বিস্তারে বিশেষ বাজেট বরাদ্দ রাখতে হবে। শিক্ষা নীতির সুফল যাতে আদিবাসীরা ভোগ করতে পারে, তার জন্য ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে;
২. আদিবাসী ছাত্রছাত্রীদের উচ্চশিক্ষার জন্য বিশেষ বৃত্তির ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। আদিবাসীদের মাতৃভাষায় প্রাথমিক পর্যায় পর্যন্ত পাঠ দান কার্যক্রমের সিদ্ধান্ত দ্রুত বাস্তবায়ন করতে হবে এবং এ লক্ষ্যে অবিলম্বে আদিবাসী শিক্ষক নিয়োগ করতে হবে;
৩. আদিবাসীদের ঐতিহ্যগত ও প্রথাগত ভূমি অধিকার কার্যকর করতে হবে;
৪. পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি যথাযথ বাস্তবায়ন করতে হবে এবং এ লক্ষ্যে সময়সূচি-ভিত্তিক কর্মপরিকল্পনা বা রোডম্যাপ ঘোষণা করতে হবে; ভূমি কমিশন আইন অবিলম্বে কার্যকর করতে হবে;
৫. জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে ২০০৭ সালে গৃহীত আদিবাসী অধিকার বিষয়ক ঘোষণাপত্র অনুসমর্থন ও বাস্তবায়ন করতে হবে। আইএলও কনভেনশন ১০৭ বাস্তবায়ন ও ১৬৯ নং কনভেনশন অনুস্বাক্ষর করতে হবে;
৬. সমতল অঞ্চলের আদিবাসীদের ভূমি সমস্যা সমাধানের জন্য অবিলম্বে ভূমি কমিশন গঠন করতে হবে। মধুপুর গড়ে গারো ও কোচদের ভূমিতে ঘোষিত রিজার্ভ ফরেস্ট বাতিল করতে হবে;
৭. আদিবাসী বিষয়ক সংসদীয় ককাস কর্তৃক প্রণীত আদিবাসী অধিকার আইন প্রণয়ন করতে হবে;
৮. মৌলভীবাজার জেলার ঝিমাই, পাল্লাতল ও নাহার খাসিয়া পুঞ্জির খাসিয়াদের ভূমি অধিকার নিশ্চিত করতে হবে এবং তাদের উপর প্রশাসনিক ও অবৈধ চাপ প্রয়োগ বন্ধ করতে হবে এবং চা বাগানের লীজ বাতিল করতে হবে;
৯. আদিবাসীদের উপর সাম্প্রদায়িক আক্রমণ, মিথ্যা মামলা, হয়রানি, নির্যাতন ও অপপ্রচার বন্ধ করতে হবে। আদিবাসী নারীসহ সকল নাগরিকের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে;
১০. জাতিসংঘ ঘোষিত ৯ আগস্ট আন্তর্জাতিক আদিবাসী দিবস রাষ্ট্রীয়ভাবে পালন করতে হবে;
১১. সংবিধান সংশোধন করে আদিবাসীদের আত্ম-পরিচয় ও অধিকারের স্বীকৃতি প্রদান করতে হবে;

প্রিয় সাংবাদিক বন্ধুগণ,
আজ আদিবাসী দিবসে বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরাম আপনাদের ধন্যবাদ জানাচ্ছে যে, আপনারা আদিবাসীদের উপর মানবাধিকার লংঘনের প্রতিবাদে ও প্রতিরোধে নানাভাবে এগিয়ে এসেছেন। জাতিসংঘের বিভিন্ন সংস্থা, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়, নাগরিক সমাজ, মিডিয়া, মানবাধিকার সংগঠন, এনজিওসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের আদিবাসী অধিকার রক্ষায় অংশগ্রহণ বৃদ্ধি করতে হবে। আদিবাসী জনগণের সাথে বাঙালি জনগণের মধ্যে সংহতি স্থাপন ও সম্পর্ক উন্নয়ন করতে হবে। সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় আদিবাসী জনগণের অংশগ্রহণ বৃদ্ধির লক্ষ্যে সংলাপ ও আলাপ-আলোচনার পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। যেখানে আস্থাহীনতা ও পারস্পরিক বিশ্বাসের অভাব রয়েছে, সেখানে আস্থা ও বিশ্বাসের ভিত্তি রচনায় কাজ করতে হবে। আসুন, সকলে মিলে আদিবাসী অধিকার প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে সকল বাধা-ব্যবধান দূর করে আদিবাসীদের পাশে দাঁড়াই। আদিবাসীদের অধিকার হলো মানবাধিকার। আদিবাসী ইস্যুতে জনসচেতনতা তৈরিতে সরকার, জাতিসংঘ, নাগরিক সমাজ ও গণ-মাধ্যমের বিশেষ ভূমিকা পালন করা জরুরি। জাতিসংঘ আদিবাসী অধিকার ঘোষণাপত্রে যে সকল অধিকার আদিবাসীদের দেওয়া হয়েছে, সেগুলো সম্পর্কে জনসাধারণকে সজাগ করা এবং আদিবাসীদের আত্মনিয়ন্ত্রণ অধিকারের স্বীকৃতি এবং রাজনৈতিক ও সিদ্ধান্তগ্রহণ প্রক্রিয়ায় আদিবাসীদের স্বাধীন ও পূর্বাবহিত সম্মতি গ্রহণ নিশ্চিত করা সকলের দায়িত্ব।
আসুন সকলে এবারের আদিবাসী দিবসের মূলসুর “আদিবাসীদের শিক্ষা, ভূমি ও জীবনের অধিকার” বাস্তবায়নে হাতে হাত রেখে একসাথে কাজ করি।

আপনাদের সকলকে অশেষ ধন্যবাদ।

জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় লারমা
সভাপতি
বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরাম
ঢাকা, আগস্ট ৬, ২০১৬

Back to top button