জাতীয়

আদিবাসীদের ভূমি সমস্যা ও করণীয় নিয়ে ঢাকায় আদিবাসী ফোরামের আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত

আইপিনিউজ ডেক্স(ঢাকা):  আজ ১০ অক্টোবর ২০২২, সোমবার সকাল ১০.৩০ টায় আদিবাসী ফোরামের আয়োজনে ডেইলি স্টার ভবনের আজিমুর রহমান কনফারেন্স রুমে ‘আদিবাসীদের ভূমি সমস্যা ও করনীয় শীর্ষক’ এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। কনফারেন্সে মূল বক্তব্য পাঠ করেন বাংলাদেশ আদিবাসী নারী নেটওয়ার্কের হেলেনা তালাং। আলোচনা সভা সঞ্চালনা করেন বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের সহ-সাধারণ সম্পাদক পল্লব চাকমা। সভাপতিত্ব করেন আদিবাসী ফোরামের সাধারণ সম্পাদক সঞ্জীব দ্রং।আলোচনা সভায় আলোচনা করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মেসবাহ কামাল। তিনি তার আলোচনায় বলেন, আদিবাসীদের অস্বীকার করে এখন অদৃশ্য করে তোলার চেষ্টা করা হচ্ছে। মিডিয়াতে আদিবাসীরা আর দৃশ্যমান নাই। এই অবস্থাকে আমাদের চ্যালেন্জ করতে হবে।

তিনি আরো বলেন, ১৫-২০ বছর আগে পার্বত্য চট্টগ্রাম মন্ত্রণালয় থেকে লিস্ট করা হয়েছিলো যেখানে দেখা যায় বিভিন্ন শ্রেণীপেশার মানুষকে জমি বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। যে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে তা বাতিল করে সেখানকার জমির মালিকদের ফিরিয়ে দিলেই পার্বত্য অঞ্চলের ভূমি সমস্যার অর্ধেক সমাধান হয়ে যায়। আমাদের আদিবাসীদের মুক্তিযুদ্ধ ও গণতান্ত্রিক লড়াইয়ে যে ভূমিকা তা সামনে আনতে হবে ।

আলোচনা সভায় বেলা’র নির্বাহী পরিচালক সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, আমাদের লড়াই করতে হবে এবং পারতে হবে। আমাদের পরবর্তী প্রজন্মের জন্য আমরা কী রেখে যাবো? শপিংমল, পার্ক দিয়ে যাবো? তাদের জন্য বন, নদী, পাহাড় দিয়ে যেতে হবে তা আমাদের বুঝতে হবে। আপনারা আপনাদের সর্বশক্তি দিয়ে রাজপথে দাবি তুলেন। সমতল পাহাড় আলাদা না করে একসাথে তুলতে হবে। আপনাদের জমির প্রথাগত হওয়ার কারনে কাগজ নাই, আপনারা আপনাদেও স্বপক্ষে কাগজ তৈরি করে দেয়ার দাবি তুলেন। আপনাদের পক্ষে যে আইন আছে তা যত দূর্বল হোক তা বাস্তবায়নের দাবী তুলেন, সকলের সাথে সংযোগ করেন।

লেখক ও সাংবাদিক সোহরাব হাসান বলেন, ৭১ এ যে রাষ্ট্র হয়েছে তা সবার হয়ে উঠেনি। হয়েছে বাংলা ভাষাভাষীদের আবার সাংবিধানিকভাবে সংখ্যাগুরু বাঙালি মুসলমানদের রাষ্ট্র হয়েছে। আমাদেরকে দেশটা রাষ্ট্রটা সবার করে তুলতে হবে।আমরা দেখেছি পার্বত্য চট্টগ্রামে ভূমি কমিশন হয়েছে প্রায় দুই দশক হয়ে গেছে কিন্তু একটি ভূমি বিরোধের নিষ্পত্তি করতে পারেনি।পাকিস্তান যেমন বাঙালিদের ওপর নির্যাতন করেছিলো, অস্বীকার করেছিলো বাংলাদেশী বাঙালিরাও আদিবাসীদের নির্যাতন ও অস্বীকার করে চলেছে। কেবল আদিবাসী নয় আামাদের সবার এই আন্দোলনে যুক্ত হতে হবে তাছাড়া অধিকার আদায় সম্ভব হবেনা।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজ বিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. খায়রুল ইসলাম চৌধুরি বলেন, পূজির সর্বগ্রাসী রুপান্তরের ফলে ভূমির ওপর এই আগ্রাসন চলছে। সেটা কেবল আদিবাসী নয় বাঙালিদের ক্ষেত্রেও হচ্ছে। বহুজাতির দেশ হওয়া সত্বেও বাংলাদেশ একটা জাতি রাষ্ট্র গঠনের ফলে আদিবাসীদের ওপর ও তাদের ভূমির ওপর এই আগ্রাসন জারি রয়েছে।

বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের সাধারণ সম্পাদক সঞ্জীব দ্রং বলেন, আমরা আদিবাসীরা কোন স্বর্গ দাবী করছিনা আমাদের জন্য, আমরা শুধু আমাদের মানবিক অধিকার চাই, আমাদের ভূমির ওপর আমাদের অধিকার চাই। আমরা আগামী দিনে আদিবাসী বাঙালি সকলে মিলে সে দাবীর পক্ষে আন্দোলন গড়ে তুলবো।

আদিবাসীদের মধ্যে আদিবাসী যুব পরিষদের সভাপতি হরেন্দ্রনাথ সিং তার আলোচনায় এই দেশে মুক্তিযুদ্ধের বিরোধীরা রাষ্ট্রীয় সকল সুযোগ সুবিধা নিয়ে গাড়িতে পতাকা উড়ায়, কিন্তু যারা মুক্তিযুদ্ধ করেছে, মুক্তিযুদ্ধের সময় জীবন বাচাতে দেশান্তরি হয়েছেন তাদের ভূমি শত্রæ সম্পত্তি করা হয়েছে তাদের ভূমি প্রতিনিয়ত কেড়ে নেওয়া হচ্ছে। আলফ্রেড সরেন, নরেন্দ্র মুন্ডাকে মেরে ফেলা হলো তার কোন বিচার আমরা পাইনি।

আদিবাসী নারী নেটওয়ার্কের সদস্য সচিব চঞ্চনা চাকমা বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে সাইলেন্ট মাইগ্রেশন চলমান রয়েছে। ভূমির কারনে পাহাড়ে গণহত্যা সংগঠিত হয়েছে। কোন কোন ক্ষেত্রে লিজ নিয়ে পুরো জমি দখল করে ফেলার নজির রয়েছে। ভূমির জন্য পার্বত্য চট্টগ্রামে নারীদের ওপর নিপীড়ন চলছে।
ইউসিজিএমের সহ-সভাপতি অজয় এ মৃ বলেন, বিভিন্ন সময় উন্নয়ন প্রকল্পের নামে সমতলের আদিবাসীদের জমি দখল করা হয়েছে এখনো হচ্ছে। সরকার ভূমি কমিশন গঠনের ওয়াদা করলেও তা পূরন করেনি, যে কারনে ভূমির সমস্যা এখনো বিদ্যমান।

জয়েনশাহী আদিবাসী উন্নয়ন পরিষদের সভাপতি ইউজিন নকরেক বলেন, বন বিভাগের সাথে আমাদের ভূমি বিরোধ তো ছিলই তার সাথে বাঙালি ও বিভিন্ন কোম্পানীর অনুপ্রবেশ একটা বড় সমস্যা। মিথ্যা বন মামলা আমাদের মধুপুরের আদিবাসীদের জন্য এক অন্যতম সমস্যা।
উক্ত সভায় মুক্ত আলোচনায় বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা আদিবাসী নেতৃবৃন্দ ও নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিগণ তাদের বক্তব্য তুলে ধরেন।

 

Back to top button