জাতীয়

আদিবাসীদের বন অধিকার উপেক্ষা করে রক্ষিত বন কেন, হাইকোর্টের রুল

বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা), জয়েনশাহী আদিবাসী উন্নয়ন পরিষদ, মধুপুর এবং জাতীয় আদিবাসী পরিষদ, রাজশাহী-এর দায়েরকৃত এক আবেদনের প্রেক্ষিতে বিচারপতি ফরাহ মাহবুব ও বিচারপতি মাহমুদুল হক -এর সমন্বয়ে গঠিত মহামান্য সুপ্রীমকোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের বেঞ্চ গতকাল বুধবার আদিবাসীদের প্রথাগত অধিকারের নিষ্পত্তি না করে মধুপুর শালবনের অরণখোলা মৌজায় নয় হাজারের উপর বনভূমিকে রক্ষিত বন ঘোষণার বিষয়ে কারণদর্শাতে রুল জারী করেছেন এবং আগামী দশ দিনের মধ্যে রুলের জবাব প্রদানের নির্দেশ দিয়েছেন।

বন আইন, ১৯২৭-এর ধারা ৬-১৯ অনুযায়ী ২০ ধারায় রক্ষিত বন সংক্রান্ত চূড়ান্ত গেজেট জারীর পূর্বে মধুপুরের শালবনে বসবাসরত বনবাসীদের প্রথাগত অধিকার নিষ্পত্তি করার বিধান থাকলেও তা উপেক্ষা করে অরণখোলা মৌজায় রক্ষিত বন ঘোষণা করা হয়েছে এবং এর ফলে বনবাসীদের মিথ্যা মামলাসহ নানাভাবে হয়রানি করা হচ্ছে বলে আবেদনকারীরা উল্লেখ করেন। এ মামলায় বনবাসীদের অধিকার নিষ্পত্তি সংক্রান্ত আদালতের পূর্ববর্তী রুল এবং নির্দেশ এড়াতেই ১৯৮৪ সালে প্রজ্ঞাপন জারীর ৩২ বছর পর তড়িঘড়ি করে ২০ ধারার নোটিশ জারী করা হয়েছে মর্মে আবেদনকারীরা আদালতে বক্তব্য রাখে।

২০ ধারার গেজেট প্রকাশের পূর্বে ৬-১৯ ধারায় উল্লেখিত বনবাসীদের ৬টি অধিকার কি পদ্ধতিতে নিষ্পত্তি করা হয়েছে সে সংক্রান্ত প্রতিবেদন প্রদান করতে মামলার ১, ৩, ৫, ৬ ও ১০ বিবাদীগণ যথাক্রমে পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের সচিব, প্রধান বন সংরক্ষক, টাংগাইলের জেলা প্রশাসক, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) ও বিভাগীয় বন কর্মকর্তার উপর নির্দেশ প্রদান করেছেন আদালত।

উল্লেখ্য, শালবন রক্ষার্থে উপরোল্লিখিত সংগঠনগুলো ২০১০ সালে একটি রিট মামলা (নং-১৮৩৪/২০১০) দায়ের করে। মামলার প্রাথমিক শুনানি শেষে ১৬ মার্চ, ২০১০ তারিখে বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্টের মহামান্য হাইকোর্ট বিভাগ বন আইন ১৯২৭ এর ধারা ৬-১৯ অনুযায়ী মধুপুর শালবনে বসবাসরত কোচ, গারো ও অন্যান্য সম্প্রদায়ের অধিকারসমূহ নিশ্চিত করতে কেন নির্দেশ দেয়া হবে না সে মর্মে রুল নিশি জারি করেন।

পরবর্তীতে ২০১২ সালে শালবনে বসবাসরত কোচ, গারো ও অন্যান্য সম্প্রদায়ের অধিকার সংক্রান্ত দলিল দস্তাবেজ প্রস্তুতের নির্দেশ দিলেও তা সম্পূর্ণ উপেক্ষা করে আদালতে বিষয়টি বিচারাধীন থাকা অবস্থায় কোচ, গারো ও অন্যান্য সম্প্রদায়ের আবাসস্থল অরণখোলা মৌজার ৯ হাজার ১৪৫ একর জমিকে সংরক্ষিত বন হিসেবে ঘোষণা করে বন বিভাগ ১৫ ফেব্রুয়ারী, ২০১৬ তারিখে এক প্রজ্ঞাপন জারী করেছে যা বেআইনী ও আইনগত কর্তৃক বহির্ভূত বলে আবেদনকারীরা আদালতে চ্যালেঞ্জ করেছে। এমন ঘোষণা বনবাসীদের প্রথাগত অধিকার অস্বীকৃতির সামিল যা বন রক্ষায় নিরুৎসাহিত করবে বলে আবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
তথ্যসূত্রঃ শেকড়ের কন্ঠ

Back to top button