জাতীয়

আদিবাসীদের জন্যে জাতীয় বাজেটে পৃথক ও বিশেষ বরাদ্দের দাবী

১৮ মে রোববার ২০১৬ আদিবাসী বিষয়ক সংসদীয় ককাস এর আয়োজনে ইউএনডিপি এবং গবেষণা ও উন্নয়ন কালেকটিভ -এর সহযোগীতায় বাজেটে বরাদ্দ বৃদ্ধি, সমতলের আদিবাসীদের জন্য পৃথক মন্ত্রণালয় সংযুক্তি ও বাংলাদেশ আদিবাসী অধিকার আইন প্রণয়নের লক্ষ্যে সিরডাপ আন্তর্জাতিক কনফারেন্স অডিটোরিয়ামে আদিবাসী ও বাজেট বিষয়ক সংলাপের আয়োজন করা হয়।
অনুষ্ঠানে সভাপ্রধান আদিবাসী বিষয়ক সংসদীয় ককাস-এর আহ্বায়ক জনাব ফজলে হোসেন বাদশা এমপি বলেন,আগামী সংসদে বাজেট আলোচনায় আদিবাসীদের জন্যে প্রয়োজনে ৪০০কোটি টাকা বাজেট বরাদ্দ রাখার জন্য প্রস্তাব রাখা হবে। অধিকার আদায়ের জন্য সারা দেশের আদিবাসীদের সংগঠিত করা এবং অধিকার আদায়ে তাদেরকে সোচ্চার হতে হবে।
প্রফেসর ড. মেসবাহ কামাল মুল প্রবন্ধে বলেন,উন্নয়নের সুফল দেশের প্রতিটি মানুষকে পেতে হবে। তাই আদিবাসীদের জন্য জাতীয় বাজেটে পৃথক ও বিশেষ বরাদ্দ রাখা প্রয়োজন। আদিবাসীদের কর্মসংস্থান, দক্ষতা বাড়ানোর জন্য প্রশিক্ষণ ও কর্মমুখী শিক্ষা এবং চাকুরির নিশ্চয়তাসহ আত্মকর্ম সংস্থান-এর জন্য আলাদা বরাদ্দ রাখতে হবে।
সংসদীয় ককাসের পক্ষ থেকে তিনি কয়েকটি দাবি তুলে ধরেনঃ
১. জাতীয় বাজেটে পৃথক অনুচ্ছেদ যুক্ত করে আদিবাসী জনগণের উন্নয়নের জন্য অর্থ বরাদ্দ রাখা।
২. বাজেট বক্তৃতায় আদিবাসী বিষয়ে বিবরণী রাখা জরুরী।
৩. সমতলের আদিবাসীদের জন্য পৃথক মন্ত্রণালয়ের দাবি। মন্ত্রণালয়-এর মাধ্যমেই সাধারণত বাজেট বরাদ্দ হয়। সমতলের আদিবাসীদের বিষয়টি দেখার জন্য যেহেতু কোনো মন্ত্রণালয় বা বিভাগ নেই, সে জন্য প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এই থোক বরাদ্দ পরিচালনার জন্য সমতলের আদিবাসীদের সমন্বয়ে একটি উপদেষ্টা কমিটি বা বোর্ড গঠন করা যেতে পারে।
৪. পার্বত্য চট্টগ্রাম মন্ত্রণালয়, আঞ্চলিক পরিষদ ও জেলা পরিষদসমূহের বাজেট বৃদ্ধি করা জরুরী।
৫. সকল মন্ত্রণালয়ের /বিভাগের বাজেটে আদিবাসীদের জন্য সুনির্দিষ্ট বরাদ্দ রাখা এবং বরাদ্দের সুষ্ঠু বাস্তবায়নে আদিবাসীদের সম্পৃক্ত করার জন্য নীতিমালা প্রণয়ন করা ।
৬. আদিবাসী সাংস্কৃতিক একাডেমীগুলোতে আদিবাসী সংস্কৃতি উন্নয়নে বরাদ্দ বৃদ্ধি করা। পাশাপাশি গবেষণা খাতে বাজেট বরাদ্দ বাড়াতে হবে।
৭. উচ্চ শিক্ষা ও কারিগরী শিক্ষায় বৃত্তিসহ আদিবাসীদের আত্ম-কর্ম সংস্থানের জন্য বাজেট বরাদ্দ থাকতে হবে।

অনুষ্ঠানের প্রধান বক্তা পার্বত্য চট্টগ্রাম মন্ত্রণালয় বিষয়ক সংসদীয় স্ট্যান্ডিং কমিটির চেয়ারম্যান জনাব র. আ. ম. উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী এমপি বলেন হরিজন ও আদিবাসী চা শ্রমিকদের জন্য সুনির্দিষ্ট বাজেট বরাদ্দ দিতে হবে। কমপক্ষে তাদের জন্য ২০০ কোটি টাকা বাজেট বরাদ্ধ চাই। যেসব আদিবাসী ছাত্র-ছাত্রীরা ডাক্তার বা বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি হওয়ার মত যোগ্যতা রাখে তাদেরকে সেখানে ভর্তির সুযোগ নিশ্চিত করতে হবে। সমতল ও আদিবাসী পাহাড়ি এলাকায় আদিবাসী জনগোষ্ঠীর উন্নয়নের লক্ষ্যে বাজেট বৃদ্ধি হওয়া দরকার।
জনাব ফজলুল হক এমপি, বলেন, সমতলের আদিবাসীদের উন্নয়নের মূলস্রোত ধারায় নিয়ে আসতে হবে। তাহলে তাদের জন্য পৃথক বরাদ্ধ হবে হবে। ১৯৯৬ অবস্থার আর এখনাকার অবস্থা এক রকম নয়। প্রধানমন্ত্রী শান্তিচুক্তি পর এখন একটি মন্ত্রণালয় হয়েছে। সেখানকার যতটুকু উন্নয়ন হয়েছে তা মন্ত্রণালয় এর মাধ্যমে হয়েছে। অন্তত পার্বত্য চট্টগ্রাম অধীনে সমতল আদিবাসীদের জন্য একটি বিভাগ থাকা দরকার। ককাসের সকল এমপিরা যদি আদিবাসীদের শিক্ষা, স্বাস্থ্য সকল বিষয়ে সামনে নিয়ে আসে তাহলে আদিবাসীদের উন্নয়ন হবে ।
স্বাগত বক্তব্যে শ্রী মৃণাল কান্তি দাস এমপি বলেন বাংলাদেশের বহুজাতির মানুষের বসবাস। এটা আমাদের দেশের শক্তি। জাতীয় বাজেটের মধ্যে আদিবাসীদের জন্য যথেষ্ঠ বাজেট রাখা দরকার। আদিবাসীদের জন্য যথেষ্ঠ পরিমাণ না হলে তাদের ভাগ্য পরিবর্তন সম্ভব নয়। এই জন্য তাদের প্রয়োজনীয় বাজেট বরাদ্দ রাখতে হবে।
আদিবাসী সংগঠক মি.রমেশ কুমার কোচ বলেন আদিবাসীদের সংযুক্ত করেই তো দেশ মধ্যম আয়ের দেশ পৌছাবে, তাদেরকে বাদ দিয়ে তো নয়। আদিবাসীদের যে ভাষা হারাচ্ছে সেই বিষয়ে একটা বড় গবেষণা দওয়া দরকার।
ইউএনডিপি’র প্রতিনিধি শহীদ সুমন বলেন, সমতল আদিবাসীদের জন্য মন্ত্রণালয় না হয়েও যদি একটা উপদেষ্টা কমিটি হয় তাহলেও সমতলের আদিবাসীদের মূলধারায় নিয়ে আসা সম্ভব । তিনি আদিবাসীদের জন্য বরাদ্দকৃত বাজেটে বৈষম্য তুলে ধরেন ।
খন্দকার মনিরুজ্জামান বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম এবং সমতলের আদিবাসীদের উন্নয়নের মূলধারায় নিয়ে আসতে হবে। আদিবাসী জনগোষ্ঠীর জন্য বাজেট বৃদ্ধি করতে হবে।
মিজ. জান্নাত-এ -ফেরদৌসী বলেন, জাতীয় বাজেটে পৃথক অনুচ্ছেদ যুক্ত করে জনসংখ্যানুপাতে আদিবাসী জনগণের উন্নয়নের জন্য পর্যাপ্ত অর্থ বরাদ্দ রাখতে হবে। ২০১৬-১৭ সালের অর্থ বছরের বাজেটে অন্তত ৫ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ একই সঙ্গে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়, আঞ্চলিক পরিষদ ও জেলা পরিষদগুলোর বাজেট বাড়াতে হবে। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের থোক বরাদ্দ পরিচালনার জন্য আদিবাসীদের সমন্বয়ে একটি উপদেষ্টা কমিটি গঠন করতে হবে। আদিবাসী বাজেট নিয়ে উল্লেখযোগ্য গবেষণা জরুরী। গবেষণায় প্রাপ্ত তথ্য- উপাত্ত নিয়ে পলিসি লেভেলে এ্যাডভোকেসী করে আদিবাসীদের জীবনমান বাড়ানোর বিষয়ে জোর পদক্ষেপ নেয়া প্রয়োজন। অনুষ্ঠানে নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিবৃন্দ, উন্নয়ন সংগঠক, মানবাধিকার সংগঠকগণ উপস্থিত ছিলেন । সঞ্চালনা করেন আদিবাসী বিষয়ক সংসদীয় ককাস-এর টেকনিক্যাল কমিটি’র সদস্য মিজ. জান্নাত-এ -ফেরদৌসী।
এছাড়া বক্তব্য রাখেন আদিবাসী বিষয়ক সংসদীয় ককাসের অন্যতম সদস্য কবি কাজী রোজী, রবীন্দ্র বর্মণ, রমেশ কুমার কোচ প্রমুখ।

Back to top button