আদিবাসীদের ওপর সহিংসতা প্রতিরোধে জোরালো পদক্ষেপ জরুরি
সোহেল হাজং: দেশে চলমান আদিবাসী ও সংখ্যালঘু মানুষের প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধে করণীয় কি-এ বিষয়ে একটি মতবিনিময় সভা ২১ ডিসেম্বর বৃহস্পতিবার ঢাকার কাপেং ফাউন্ডেশন-এর কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত হয় । সভায় উপস্থিত অংশগ্রহণকারীদের আলোচনায় বিশেষ করে আদিবাসী ও সংখ্যালঘুদের ওপর সহিংসতা, উচ্ছেদ, আদিবাসী নারীদের ওপর সহিংসতা বৃদ্ধি এবং এ পরিস্থিতিতে সামাজিক সংগঠনগুলোর ভূমিকা কি হতে পারে তা গুরুত্ব পায়। কাপেং ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক পল্লব চাকমা বলেন, ‘আদিবাসীদের নির্যাতন ও দুঃখের কথা শুধু আদিবাসীরা না বলে অন্যদেরও বলা উচিত। দেশের মূলধারার কোন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি যখন আদিবাসীদের সমস্যার কথা অন্তর থেকে অনুভব করে আমাদের হয়ে রাষ্ট্রের কাছে তোলে ধরেন তখন আমরা অনেক বেশি মনে জোর পাই।’ তিনি বলেন পার্বত্য চট্টগ্রামের অনেক জায়গা এখন পর্যটকদের জন্য আকর্ষণীয় জায়গা। প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ সেখানে বেড়াতে যায়। কিন্তু সে জায়গা পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে ওঠার পেছনে যে কত মানুষের দুঃখ, কষ্ট ও উচ্ছেদের মতো মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটানা ঘটেছে সেটা আমরা ক’জনই বা খুঁজে দেখি। তিনি উদাহরণস্বরূপ বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামের ‘সাজেক’ পর্যটনকেন্দ্র হওয়ার পূর্বে প্রায় ১২০টি পাংখো ও লুসাই আদিবাসী পরিবারের সেখানে বসতি ছিল কিন্তু দুঃখের বিষয় সেখানে এখন মাত্র ১০টির মতো পাংখো বা লুসাই পরিবার টিকে আছে। বাংলাদেশ ইন্ডিজেনাস উইমেন নেটওয়ার্ক-এর সেক্রেটারী জেনারেল চঞ্চনা চাকমা বলেন, আদিবাসী নারীরা সর্বক্ষেত্রে শারীরিক বা মানসিক নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। তারা তাদের অধিকার ও সংস্কৃতি নিয়ে স্বাধীনভাবে চলাফেরা করতে পারছে না। ঢাকা শহরেও তাদের ঘরের দরজা ধাক্কা দিয়ে জিজ্ঞেস করা হয় তারা কি খায়, কেন খায়। মানবাধিকারকর্মী তন্দ্রা চাকমা বলেন, “আজ দেশের ওপর ও নিম্ন পর্যায়ের মানুষের মধ্যে দূরত্ব অনেক বেড়ে গেছে। কোন কোন জায়গায় আদিবাসীরা আসলেই পরবাসী অথবা বন্দি অবস্থায় জীবন যাপন করছে।” হেলি চাকমা বলেন রোহিঙ্গা সমস্যা সৃষ্টির পর আদিবাসীদের এখন নতুন করে ‘রোহিঙ্গা’ বলে টিজ করার প্রচলন শুরু হয়ে গেছে। সোহেল হাজং বলেন, ‘আমাদের মাঝে মানসিকতার পরিবর্তন সেরকম আসেনি বলে এখনও আমাদের ধর্ম, জাতি, বর্ণ আলাদা বা সংখ্যায় কম হওয়ার কারণে সাম্প্রদায়িক সহিংসতার শিকার হতে হচ্ছে। বাংলাদেশকে ধর্ম নিরপেক্ষ রাষ্ট্র গঠন করতে না পারাও এর একটি অন্যতম কারণ।’ এসব সমস্যা থেকে সমাধানের উদ্যোগ নেওয়ার জন্য আমাদের দেশের যুব সমাজকে বেশি করে অন্তর্ভুক্ত করার প্রতি গুরুত্ব দেন কাপেং ফাউন্ডেশনের বাবলু চাকমা। সেসাথে তিনি সহিংসতা প্রতিরোধে নীতি নির্ধারণ ও বাস্তবায়নের প্রতি আরো জোর দেওয়ার কথা বলেন। বাংলাদেশ ইন্ডিজেনাস উইমেন নেটওয়ার্ক-এর সমন্বয়কারী ফাল্গুনী ত্রিপুরা বলেন, “সোশ্যাল মিডিয়া (সামাজিক মাধ্যম) কিভাবে ব্যবহার করতে হয় সেটার জন্যও প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা থাকা উচিত।” আইআইডি-এ পক্ষ থেকে আসা সাঈদ আহমেদ বলেন, সহিংসতা প্রতিরোধ ও নির্মূলে আমরা কিভাবে এগিয়ে যাব বা এর উদ্যোগ কি হতে পারে সেটাই আসলে এখন গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। আইআইডি ভাবছে, আগামীতে এ বিষয়ে দু’টি বড় রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিদের সাথে নিয়মিত বসবেন এবং সামাজিক মাধ্যমেও কিছু কাজ করবেন। তিনি বলেন, সংসদে নারীদের জন্য ৩০% সংরক্ষিত আসন থাকলে আদিবাসী নারীরাও কেন তাতে সংযুক্ত হতে পারবে না সেটাও তাদের বক্তব্যের মাঝে তোলে ধরবেন। আইআইডি-একটি পাবলিক পলিসি ইনস্টিটিউট ও মানবাধিকার সংগঠন কাপেং ফাউন্ডেশন-এর যৌথ উদ্যোগে এ সভাটি আয়োজিত হয়।