আগামীকাল ১০ নভেম্বর: নানা আয়োজনে পালিত হবে এম এন লারমা’র ৩৭তম মৃত্যুবার্ষিকী

আগামীকাল ১০ নভেম্বর ২০২০। বাংলাদেশের প্রথম গণপরিষদে পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে নির্বাচিত সাংসদ ও জুম পাহাড় তথা মেহনতী মানুষের নেতা বিপ্লবী মানবেন্দ্র মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমা’র ৩৭ তম মৃত্যুবার্ষিকী। শোকাবহ এই দিনটিকে প্রতিবছর পাহাড় তথা সমতলের আদিবাসী মানুষ এবং প্রগতিশীল সংগঠনসমূহ স্মরণ করে থাকে নানা আয়োজনে। এ বছরও তার ব্যতিক্রম হবে না । বিপ্লবী মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমা’র ৩৭তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষ্যে ঢাকা, চট্টগ্রাম ও পার্বত্য চট্টগ্রামের তিনটি জেলা থেকে শুরু করে দেশ ও বিদেশের বিভিন্ন জায়গায় মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমা’কে স্মরণ করা হবে।
এদিকে “মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমার ৩৭ তম মৃত্যুবার্ষিকী পালন জাতীয় কমিটি’র” উদ্যোগে আগামীকাল (১০ নভেম্বর) ঢাকায় সারাদিন ব্যাপী অনুষ্ঠানমালার আয়োজন করা হয়েছে বলে আয়োজক কমিটি আইপিনিউজকে নিশ্চিত করেছে। উক্ত কমিটির আহ্বায়ক বিশিষ্ট সাংবাদিক ও লেখক আবু সাঈদ খান এবং সদস্য সচিব হিরণ মিত্র চাকমা। এছাড়াও উক্ত কমিটিতে রয়েছেন দেশের বরেণ্য বুদ্ধিজীবি, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, রাজনৈতিক কর্মী, মানবাধিকার কর্মী, সংগীত শিল্পী, লেখক ও প্রগতিশীল ছাত্র সংগঠনের নেতৃবৃন্দ।উক্ত কমিটির আয়োজনে ঢাকার ধানমন্ডির উইমেন ভলান্টারি এসোশিয়েশনের মিলনায়তনে দিনব্যাপী অনুষ্ঠান আয়োজন করা হবে বলে নিশ্চিত করেছেন উক্ত কমিটি’র সদস্য সচিব হিরণ মিত্র চাকমা।
সারাদিন ব্যাপী অনুষ্ঠানের মধ্যে রয়েছে বিপ্লবী মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমা’র স্মরণে নির্মিতব্য এক অস্থায়ী শহীদ বেদীতে জাতীয় কমিটিসহ বিভিন্ন প্রগতিশীল সংগঠনের ফুলেল শ্রদ্ধা নিবেদন। এছাড়া সকাল ১০ টায় শুরু হবে বিপ্লবী নেতার স্মরণে স্মরণ সভা। উক্ত স্মরণ সভায় আলোচনা করবেন ওয়াকার্স পার্টিা সভাপতি সাংসদ রাশেদ খান মেনন, প্রবীণ রাজনীতিবিদ ও ঐক্য ন্যাপের সভাপতি পঙ্কজ ভট্টাচার্য, বাংলাদেশ কমিউনিষ্ট পার্টির সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স, নারী প্রগতি সংঘের নির্বাহী পরিচালক রোকেয়া কবীর, এএলআরডি’র নির্বাহী পরিচালক শামসুল হুদা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অধ্যাপক ড. মেসবাহ কামাল, একই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন ড. সাদেকা হালিম, মানবাধিকার কর্মী নুমান আহমদ খান, সাবেক ছাত্রনেতা ও পরিবেশ বার্তার সম্পাদক ফেরদৌস আহমেদ উজ্জ্বল সহ বিভিন্ন প্রগতিশীল ছাত্র ও গণ সংগঠনের নেতৃবৃন্দ। তবে উক্ত স্মরণ সভায় করোনা সতর্কতায় অনেকেই অনলাইন মাধ্যম জুম এপের মাধ্যমে যুক্ত হবেন বলে আয়োজকরা জানিয়েছেন। এছাড়াও বিকালে রয়েছে প্রতিবাদী সাংস্কৃতিক পরিবেশনা এবং সন্ধ্যায় আলোক প্রজ্জ্বলন। উক্ত সাংস্কৃতিক আয়োজনে থাকবে আদিবাসী গানের দল মাদল ও এফ মাইনরের পরিবেশনা এবং বিশিষ্ট সঙ্গীত শিল্পী জান্নাত এ ফেরদৌসী লাকীর গান পরিবেশনা ও পাহাড়ের আবৃত্তি শিল্পী মুন চাকমা সহ অনেকেই কবিতা আবৃত্তি করবেন বলে জানা গেছে। সারাদিনব্যাপী উক্ত আয়োজন আইপিনিউজ এর ফেসবুক পেইজে লাইভ সম্প্রসারণ করা হবে বলে জানিয়েছেন আয়োজকরা। এছাড়াও ঢাকা বিশ্ববিদ্যারয়ের জুম্ম শিক্ষার্থীদের সাংস্কৃতিক সংগঠন ঢাকা বিশ্ববিদ্যারয় জুম লিটারেচার এন্ড কালচারাল সোসাইটি বিপ্লবী নেতার প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে পোষ্টার ডিজাইন করবে এবং নিজস্ব ফেইসবুক পেইজ থেকে প্রচার করবে বলে সংগঠনের নেতৃবৃন্দ আইপিনিউজকে জানিয়েছেন।
এছাড়াও বিপ্লবী মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমা’র স্মরণে চট্টগ্রামের বিভিন্ন জায়গায় নানা অনুষ্ঠান আয়োজন করা হবে। এর মধ্যে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের আদিবাসী শিক্ষার্থীদের সাংস্কৃতিক সংগঠন রদেভুঁ শিল্পী গোষ্ঠী এ উপলক্ষ্যে অনলাইনে প্রতিবাদী কবিতা পাঠের আসর আয়োজন করেছে যা তাঁদের ফেসবুক পেইজ থেকে সম্প্রসারিত হবে। এছাড়াও পাহাড়ী ছাত্র পরিষদের চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যারয় শাখা কর্তৃক ১০ নভেম্বরের প্রথম প্রহরে বিপ্লবী নেতার শহীদ বেদীতে পুষ্পমাল্য দান এবং বিকাল ৪ টায় আলোচনা সভা ও প্রদীপ প্রজ্জ্বলন করা হবে বলে আইপিনিউজকে নিশ্চিত করেছেন পাহাড়ী ছাত্র পরিষদের চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক রুমেন চাকমা।
এদিকে পার্বত্য জেলা রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি এবং বান্দরবানের জেলা সদর,বিভিন্ন উপজেলা, ইউনিয়ন ও গ্রামে গ্রামে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি ও তাঁর অঙ্গসংগঠনের নেতৃবৃন্দ কর্তৃক বিপ্লবী নেতার স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে প্রভাত ফেরী, পুষ্পমাল্য অর্পন,স্মরণ সভা আয়োজন, কালো ব্যাচ পরিধান, মোমবাতি প্রজ্জ্বলন ও বিভিন্ন জায়গায় ফানুস উত্তোলন করা হবে বলে স্থানীয় সূত্রসমূহ নিশ্চিত করেছে।
উল্লেখ্য যে, বিপ্লবী মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমার জন্ম ১৯৩৯ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর রাঙ্গামাটি জেলার নান্যেচর উপজেলার মাওরুম নামের এক গ্রামে। তরুণ বয়সে লারমা ছিলেন একজন ছাত্র ও যুব সংগঠক। ১৯৬০ এর কাপ্তাই বাঁধ প্রকল্পের বিরুদ্ধে মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমা পাহাড়ী মানুষকে সংগঠিত করার প্রয়াস চালান। ১৯৬৩ সালে নিবর্তনূলক আইনে গ্রেফতার হন প্রতিবাদী এ মানুষটি। আইন নিয়ে পড়াশুনা করা এ মানুষটি ১৯৭০ সালের পাকিস্তান গণপরিষদের সাধারন নির্বাচনে পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চল থেকে সাংসদ নির্বাচিত হন। স্বাধীনতা উত্তর সময়ে গণপরিষদে স্বীয় মহিমায় তাঁর বক্তব্যে রাখেন প্রজ্ঞা ও অসাম্প্রদায়িক মানবিক ভাবনার স্বাক্ষর। ১৯৭৩ সালেও বাংলাদেশের প্রথম নির্বাচনে আবারো সাংসদ নির্বাচিত হন এবং পরবর্তী সময়ে বঙ্গবন্ধুর বাকশালে যোগদান করেন। পাহাড়ের মানুষর অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য স্বতন্ত্রভাবে গড়ে তোলেন জনসংহতি সমিতি। এছাড়াও বঙ্গবন্ধু হত্যার পর সামরিক শাসনের উত্তাল সময়ে তাঁর প্রতিষ্ঠিত সশস্ত্র সংগঠনের মাধ্যমে আন্ডারগ্রাউন্ডে চলে যান। দেশি-বিদেশি চক্রান্তের শিকার হয়ে ১৯৮৩ সালের ১০ নভেম্বর নিজ দলের বিভেদপন্থীদের বুলেটে বিদ্ধ হয়ে অন্য আট সহকর্মীসহ দুদুকছড়ার খেদারাছড়া থুমে তাঁর আট সহযোদ্ধাসহ শহীদ হন অধিকার বঞ্চিত মানুষের এ নেতা।