আগামীকাল প্রধানমন্ত্রী’কে দু’লক্ষ নাগরিকের গণস্বাক্ষর সম্বলিত স্মারকলিপি পেশ করবে ঐক্য পরিষদ:
আইপিনিউজ ডেক্স(ঢাকা): গতকাল (২২ মার্চ) জাতীয় প্রেস ক্লাবে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলন থেকে বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ সংখ্যালঘু স্বার্থরক্ষায় সরকারী দলের নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের আন্দোলনের সূচনা করার ঘোষণা দিয়েছে। সংগঠনটি বিকেল ৪টায় শাহবাগ চত্বরে সমবেত হয়ে পদযাত্রা সহকারে প্রধানমন্ত্রীর বরাবরে দু’লক্ষ নাগরিকের গণস্বাক্ষারসম্বলিত স্মারকলিপি পেশ করবে। একই দাবিতে স্থানীয় জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে অনুরূপ স্মারকলিপি পেশ করা হবে বলেও জানানো হয়।
সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক এ্যাড. রাণা দাশগুপ্ত কর্তৃক সংবাদ সম্মেলনে পঠিত বক্তব্যে বলা হয়, ‘আজকের এ বাংলাদেশ বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের বাংলাদেশ নয়। গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দলসমূহ, দুঃখজনক হলেও সত্য, অপ্রয়োজনীয় রাজনৈতিক খেয়োখেয়িতে ব্যস্ত। জনগণের আশাজাগানিয়া রাজনীতি দৃশ্যমান করার উদ্যোগ আজও পরিলক্ষিত হচ্ছে না।’
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, ২০২৪ সালের প্রথম দিকে অনুষ্ঠিতব্য দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে রাজনৈতিক দলসমূহ ও তাদের জোট পৃথক পৃথকভাবে দৃশ্যমান তৎপরতা শুরু করেছে। মূলত রাষ্ট্রক্ষমতাকে সামনে রেখে এহেন তৎপরতা অব্যাহত থাকাটা স্বাভাবিক এবং গণতন্ত্রের স্বার্থে এটি অপরিহার্য বলে আমরা মনে করি। মুক্তিযুদ্ধের মৌলচেতনায় ৯০-র তিন জোটের রূপরেখার ভিত্তিতে রাষ্ট্র ও রাজনীতি পরিচালনায় সকল গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল জাতীয় ঐক্যমত পোষণে এগিয়ে আসবেন-এ আমাদের প্রত্যাশা।
পঠিত বক্তব্যে আরো বলা হয়, রাজনীতির বিদ্যমান বাস্তবতায় বাংলাদেশের ধর্মীয়-জাতিগত সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠী আশাহীনতা ও আস্থাহীনতার মুখোমুখি এসে দাঁড়িয়েছে। স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছর পরেও ৭২-র সংবিধান সাম্প্রদায়িকতামুক্ত হতে পারেনি। ‘ধর্মনিরপেক্ষতা ও ধর্মীয় স্বাধীনতা’ ইতোমধ্যে রাষ্টীয় মৌলনীতি হিসেবে ইতোমধ্যে ফিরে এলেও রাষ্ট্র ও রাজনীতির চর্চায় তার সুস্পষ্ট প্রতিফলন আজও মেলেনি। রাষ্ট্রধর্ম জনগণনার দিক থেকে ধর্মীয়-জাতিগত সংখ্যালঘু জনাগোষ্ঠীকে রাষ্ট্রীয় সংখ্যালঘুতে পরিণত করেছে। অথচ এহেন রাষ্ট্রীয় সংখ্যালঘুতে পরিণত হবার জন্যে আমরা মুক্তিযুদ্ধ করিনি। পার্বত্য শান্তিচুক্তি সম্পাদন ও পার্বত্য ভূমিবিরোধ নিষ্পত্তি কমিশন আইন প্রায় দু’দশকের ঊর্ধ্বকাল আগে প্রণীত হলেও তা আজ থমকে যাওয়ায় পার্বত্যভূমিতে পূর্বেকার মত অস্থিরতা বিরাজ করছে বলেও মনে করে সংগঠনটি। এতে ক্রমশঃই শান্তি তিরোহিত হয়ে যাচ্ছে। ২০০১ সালে অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যর্পণ আইন সংসদে গৃহীত হলেও আজও তা কার্যকর করা হচ্ছে না। এছাড়া হিন্দু বিবাহ নিবন্ধন আইন প্রণীত হয়েছে তাও ঐচ্ছিক, চাকরি-বাকরিতে নিয়োগ-পদোন্নতি ও জনপ্রতিনিধিত্বশীল সংস্থায় অতীতের বিরাজিত বৈষম্যের বেশ খানিকটা অবসান হয়েছে, ধর্মশিক্ষায় স্ব স্ব ধর্মের শিক্ষক সাম্প্রতিককালে নিয়োগের সিদ্ধান্ত হয়েছে। যাতে সন্তোষ প্রকাশ করে নেতৃবৃন্দ।
দেশের সাম্প্রদায়িক পরিস্থিতি তুলে ধরে সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, সংখ্যালঘুদের বাড়িঘর-উপাসনালয়-দোকানপাটে হামলা, ভূমি জবর দখল, অপ্রাপ্তবয়স্কা কন্যাদের অপহরণ ও ধর্ষণ, জোরপূর্বক ধর্মান্তরকরণ, কথায় কথায় দেশত্যাগের হুমকি ইত্যাদি অনেকটা নিত্যদিনকার ঘটনায় পরিণত হয়েছে। সরকারের পক্ষ থেকে সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তার জন্যে যত কথা-ই বলা হোক না কেন, তা অনেকটা কথার কথায় পরিণত হয়েছে। দৃশ্যমান কোন উদ্যোগ সরকারি দল বা সরকারের পক্ষ থেকে আজও আন্তরিকভাবে পরিলক্ষিত হচ্ছে না।
এমনতরো পরিস্থিতিতে সংখ্যালঘুদের স্বার্থ ও অধিকার রক্ষায় এবং অস্তিত্বের সংকট থেকে উত্তরণের লক্ষে ঐক্যমোর্চা গঠন করে মানবাধিকারের আন্দোলন পরিচালনা করা ছাড়া আজ সংখ্যালঘুদের সামনে আর কোন বিকল্প নেই বলেও মনে করেন তার। এরই আলোকে বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ ইতোমধ্যে জাতীয় পর্যায়ে ৩৩টি সংগঠন নিয়ে ‘সংখ্যালঘু ঐক্যমোর্চা’ জাতীয়ভাবে গঠন করেছে এবং সারাদেশে এর সম্প্রসারণে উদ্যোগ নিয়েছে বলে জানানো হয় সংবাদ সম্মেলনে।
উল্লেখ্য যে, সরকারি দল আওয়ামী লীগ গত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রাক্কালে তাদের নির্বাচনী ইশতেহারে যেসব অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছিল তার মধ্যে রয়েছে- ১. সংখ্যালঘু সুরক্ষা আইন প্রণয়ন ২. জাতীয় সংখ্যালঘু কমিশন গঠন ৩. বৈষম্যবিলোপ আইন প্রণয়ন ৪. অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যর্পণ আইনের দ্রুত বাস্তবায়ন ৫. পার্বত্য শান্তিচুক্তি ও পার্বত্য ভূমিবিরোধ নিষ্পত্তি কমিশনের দ্রুত বাস্তবায়ন ও ৬. সমতলের আদিবাসীদের জন্য সতন্ত্র ভূমি কমিশন গঠন।
এছাড়াও সংখ্যালঘু মন্ত্রণালয় গঠনের দাবিও রয়েছে। সংবাদ সম্মেলন থেকে দেশের সকল গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল, সামাজিক সংগঠন ও সুশীল সমাজের নেতৃবৃন্দকেও এসব দাবির সাথে সংহতি প্রকাশ করে নাগরিক আন্দোলন গড়ে তোলার আহ্বান জানানো হয়।
সংবাদ সম্মেলনে ঐক্য পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির তিনজন সভাপতি ঊষাতন তালুকদার, ড. নিম চন্দ্র ভৌমিক ও নির্মল রোজারিও উপস্থিত ছিলেন। অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন- ঐক্য পরিষদের প্রেসিডিয়াম সদস্য- এ্যাড. সুব্রত চৌধুরী, সাংবাদিক বাসুদেব ধর; যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক- মনীন্দ্র কুমার নাথ, রবীন্দ্র নাথ বসু; সাংগঠনিক সম্পাদক- উত্তম চক্রবর্তী; মহিলা ঐক্য পরিষদের সুপ্রিয়া ভট্টাচার্য; শ্রীশ্রী ভোলানন্দগিরি আশ্রমের রঘুপতি সেন, খ্রিস্টান এ্যাসোসিয়েশনের ভিক্টর রে প্রমুখ।